| 29 মার্চ 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প গল্প সাহিত্য

মৌসুমী কাদেরের অনুবাদে-ভার্জিনিয়া উলফ এর গল্প :সোম অথবা মঙ্গলবার

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

অনুবাদকের কথা:

(আধুনিকতাবাদী লেখক ভার্জিনিয়া উলফ ১৯২১ সালে এই গল্পটি লিখেছিলেন। একজন নারীবাদী লেখকের কাজ ততখানি মানসিক উৎকর্ষতা না থাকলে হজম করা কঠিন । সাড়া বিশ্বে বিপুল সাহিত্যপ্রেমীর কাছে তিনি সমাদৃত হয়েছিলেন। এই গল্পটি একটি দিনের মন ও চিন্তার সহজ পরিবেশন মনে হলেও আসলে তা প্রখর অন্তর্দৃষ্টি ও মানবিক স্বত্তার প্রকাশ। যা সহজকে ছাপিয়ে ধারালো পাতের তীক্ষ্ণ ভাষায় প্রখর হয়ে উঠেছে। সরাসরি অর্থ, বাক্যের মূল আকুতি, বিচ্ছিন্ন বা অন্তর্নিহিত সংস্কৃতি, আবহে অথবা শব্দ-পরমাণুর জন্মে, হুবহু বোধ ধরে রেখে ভাষান্তর কঠিন। তারপরও অনুবাদটি থেকে একটি বাংলা গল্পের স্বাদ পাবার চেষ্টা করা ।)

সোম অথবা মঙ্গলবার; অলস,অন্যরকম এবং উদাসীন। স্বতঃস্ফূর্ত কেঁপে উঠা ডানা ঝাপটানোয় বোঝা যায় তার গন্তব্য সুনির্দিষ্ট। গীর্জার ঠিক উপরে, আকাশের তলদেশে হেরন পাখিটা উড়ে যায়।
সুদূর ধবল শুভ্রতায় নিজেকে লুকিয়ে রাখে সে, সীমাহীন আকাশ আবৃত করে অনাবৃতদের, অবিরাম ক্লান্তিহীন স্থীর উড়ে চলায়। একটা হ্রদ, যার পাড়গুলো স্পষ্টরেখায় এঁকে গেছে! আর সেই পাহাড় চূড়া? কি নিখুঁত! সোনারোদ আভা লেগে আছে ঢালে, নিচে বয়ে চলেছে সেই ধারা। অজস্র ফার্ন অথবা নরম সাদা পালক খসে পড়ছে নিস্তব্ধতায়-
বড় আকাঙ্ক্ষিত এই ‘সত্য’ এবং এর জন্যেই বড় বেশী অপেক্ষা; অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কিছু শব্দের উচ্চারন , চিরতরের কিছু চাওয়া-(বা দিক থেকে কান্নাটা শুরু হয়, আবার ডানপাশে, ধর্মঘটে চাকা বন্ধ, বাসের চাকা পিন্ডীভূত হয় দ্বন্দে, চিরকালের সেই আকাঙ্ক্ষা -(ঘড়িটা দৃঢ়তায় বারোটি স্বতন্ত্র শব্দে শপথ করে ঘোষণা দেয়-এটা মধ্যাহ্ন, হালকা স্বর্ণের আবরণে আলো ও শিশুদের কলোরব)। চিরকালের প্রতীক্ষা, এসবই কি তবে সত্য?
লাল গম্বুজ; গাছের পাতায় ঝুলে থাকা ধাতব মুদ্রা, লেজ গুটিয়ে চিমনির ধোঁয়া উড়ে যাওয়া, চিৎকার, শোরগোল, ফেরিওয়ালার ডাক; ‘লোহা কিনবেন, লোহা’? কিন্তু সত্য? সত্য তাহলে কি? এটাই কি সত্য?
পুরুষ অথবা নারীর পায়ের পাতায় দৃশ্যমান শিরা, কালো অথবা সোনা খচিত আলো (এই কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া; সে কি মধুর? না, ধন্যবাদ-ভবিষ্যতের ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রসমূহ), আগুনের শিখা ঘরগুলোকে আলো করে ফেলছে; রক্ষা করছে কালো মানুষ এবং তাদের উজ্জ্বল চোখ। হয়ত বাইরে তখন একটি ভ্যান মালামাল খালাশে ব্যাস্ত। মিস থিংগামী তার চেয়ারে বসে চা পান করছে, আর কাচের টুকরোগুলো ভরে রাখছে পশমী কোটের পকেটে—
বাতাসে পাতার দোলা, কোনায় পড়ে থাকা নরম আলো, গতির উল্টোপথে চলা, হালকা রুপোলী জলের ছিটা, ঘর কিংবা আশ্রয়হীন, সমষ্টি, বিচ্ছিন্নতা, নানা মাত্রায় তছনছ, টুটে পড়া, ডুবে যাওয়া; এই সবকিছুর সমন্বয়ই কি তবে সত্য?
এখন সাদা মার্বেলপাথরের চত্বরে জ্বলন্ত আগুনের আঁচে দাঁড়িয়ে কেবলি মনে করা। গজদন্ত থেকে উৎসরিত শব্দগুলো কালো ছায়াগুলোকে ঢেকে ফেলে ফুটিয়ে তুলছে আলো। অন্তর্দৃষ্টির দেখা; আগুনের শিখায়, ধোঁয়ায়, মূহুর্তের স্ফুলিঙ্গে অথবা কোন সমুদ্রযাত্রায়, মার্বেল চত্বর আর মিনারগুলোর অন্তরালে চলে যাওয়া, আর ভেসে চলা ভারত সাগর; যখন শূন্যতা নীল রঙে ছেয়ে যায় আর জ্বলজ্বলে তারা ভিড় বাড়ায়।–সত্য?
সত্য আসলে কি? অথবা এখন, এসব কিছুই কি সত্যের খুব ঘনিষ্ট?
অলস এবং উদাসীন হেরন পাখিটি ফিরে আসে। আকাশটা তারায় তারায় আবৃত হয়, আবার নিরাভরণ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত