কফির পিপাসা জন্ম দিলো যে প্রযুক্তির

Reading Time: 2 minutes

রিজওয়ানুর রহমান প্রিন্স

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব ওখানকার সকলের কাছে ‘ট্রোজান রুম’ নামে পরিচিত। এই ট্রোজান রুমে শিক্ষার্থীরা রাত জেগে কাঁথা-বালিশ নিয়ে পড়ে থাকে তাদের নানা ধরণের গবেষণার কাজে। আর যেখানেই রাত জেগে গবেষণা, সেখানেই কফি। ফলে ট্রোজান রুমের উলটোপাশের রুমেই বসানো ছিলো একটা কফি মেশিন। ট্রোজান রুম এবং তার আশেপাশের এলাকার কফিখোরেরা কফি খেতে ঘন ঘন আসা যাওয়া করতো ঐ রুমে। কেমব্রিজের ট্রোজান রুম ও তার উপরের ও নিচের তলার সব ল্যাবের গুরুত্বপূর্ণ সব গবেষণাকে একাই টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়ে মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছিলো ঐ কফি মেশিন।

কিন্তু প্রায়ই দেখা যেতো কফি মেশিনে কফি নেই। গবেষণার চাপে আধপাগলা হয়ে উল্টোপাশের ট্রোজান রুম থেকে যারা যেতো, তারা তো বটেই; যারা  ২-৩ তলা সিঁড়ি বেয়ে আসতো একটু কফির ঘ্রাণ পাবার আশায়, তাদেরও মেজাজ বিগড়ে যেতো, যখন এসে দেখতো মেশিনে কফি নেই। রাত-বিরাতে যারা ল্যাবে পড়ে থেকে গবেষণা করেন, তারা জানেন এটা কী ভয়াবহ রকমের যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা। একাগ্রচিত্তে কাজের মাঝখানে মনোযোগ ভেঙ্গে উঠে গিয়ে দেখেন মেশিনে কফি নেই!

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে এগিয়ে এলেন ট্রোজান রুমে রাত-বিরাতে কাঁথা-বালিশ নিয়ে পড়ে থাকা একদল গবেষক। ছোট্ট কফি রুমটায় কিছু কম্পিউটার অকেজো পড়ে ছিলো। তাঁরা সেগুলোর একটাকে ঐ বিল্ডিংয়ের নেটওয়ার্কে জুড়ে দিলেন। কফি মেশিনের দিকে তাক করে বসালেন একটা ভিডিও ক্যামেরা। ‘Paul Jardetzky’ নামের একজন লিখলেন একটা সার্ভার প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ক্যামেরাটা প্রতি মিনিটে ১২৮ x ১২৮ পিক্সেলের তিনটা ছবি তুলবে। সেই ছবি পরে আপলোডাবে নেটওয়ার্কে। ‘Quentin Stafford-Fraser’ লিখলেন একটা ক্লায়েন্ট প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ঐ ল্যাব ও তার আশেপাশে থাকা সকল পিসির ইউজার পিসিতে বসেই প্রতি মিনিটে তিনটে ছবির মাধ্যমে দেখতে পাবে কফি মেশিনে কফির সর্বশেষ অবস্থা কী, মেশিনটা আবার কখন ভরবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি প্রোগ্রামটার নাম দেন ’XCoffee’.

১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ঘটেছিলো এই ঘটনা। ’ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব’ তখন দুধের শিশু। ১৯৯৩ নাগাদ ইন্টারনেট ব্রাউজারগুলো মোটামুটি স্টিল ইমেজ কম্পিউটারের পর্দায় দেখানোর মতো অবস্থায় আসে। তখন বুঝা যায়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রোজান রুম ও তার তৎসংলগ্ন এলাকায় কফি মেশিন মনিটরিংয়ের যে ব্যবস্থাটা গড়ে উঠেছে, সেটা দিয়ে আরো বড় কিছু করা যাবে।

এভাবেই তৈরি হয়েছিলো আধুনিককালের ওয়েবক্যাম প্রযুক্তি, যেটা দিয়ে এখন প্রতি মুহূর্তে দেশে-বিদেশে লাইভ ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রিয়জনের খোঁজখবর নেয়া থেকে শুরু করে বিলিয়ন ডলারের বিজনেস ডিল করছেন সারাবিশ্বের মানুষ। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিয়েছিলো ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজের ট্রোজান ল্যাবের ঐ কফি মেশিনটা এবং তার উপরে বেঁচে থাকা কিছু আলসে প্রোগ্রামার, যারা গবেষণার মাঝখানে একটু উঠে গিয়ে মেশিনে কফি আছে কিনা, সেটা দেখতেও বিরক্তবোধ করতেন।
.
২০০১-এ কফি মেশিন মনিটরিং করা ক্যামেরাটার সুইচ অফ করে দেয়া হয়। সেই সময়ে XCoffee-তে তোলা শেষ ছবিটা এখনো ইন্টারনেটে বসে দেখতে পারেন যে কেউ।
.
..
’XCoffee’-র প্রোগ্রামার Quentin Stafford-Fraser-এর আত্মজবানীতে পুরো ঘটনা জানতে যেতে পারেন এখানে- https://www.cl.cam.ac.uk/coffee/qsf/coffee.html
.
আরো জানতে,
১. https://en.wikipedia.org/wiki/Trojan_Room_coffee_pot
২. https://en.wikipedia.org/wiki/Webcam

.

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>