Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

এই গ্রামে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ

Reading Time: 3 minutes

আফ্রিকার বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে পিতৃতান্ত্রিকতা হার মানাত সব রকম বন্যতাকে। কয়েক যুগ ধরে সহ্য করতে করতে তাঁদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। সহ্যের বাঁধ ভাঙল নব্বইয়ের দশকের গোড়ায়। যখন তাঁরা ধর্ষিতা হলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে। তাঁরা সম্বুরু উপজাতির মহিলা। সমাজ থেকে বেরিয়ে এলেন ১৫ জন ধর্ষিতা।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


এক খণ্ড জমিতে থাকতে শুরু করলেন। ঠিক করলেন, এ বার থেকে পুরুষবর্জিত জীবন কাটাবেন। ওই জমিতে নিষিদ্ধ হল পুরুষ-প্রবেশ। ক্রমে ওই এক খণ্ড জমিও নাম পেল। তার নাম হল ‘উমোজা উয়াসো’। সোয়াহিলি ভাষায় ‘উমোজা’ শব্দের অর্থ ঐক্য বা একতা। উয়াসো হল উমোজা-র পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী। জীবনের প্রতীক নদীর পাশেই নিজেদের গ্রাম ‘উমোজা উয়াসো’-তে অন্ধকার থেকে আলোর পথে পা রাখলেন রেবেকা লোলোসোলি। তাঁর সঙ্গে তাঁর মতোই আরও ১৪ জন ধর্ষিতা।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


উত্তর কেনিয়ায় এই সম্বুরু প্রজাতির রীতিনীতি অনেকটাই মাসাই উপজাতির রীতিনীতির মতো। প্রবল পিতৃতান্ত্রিক এই সমাজে ধর্ষণ, অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে, যৌনাঙ্গহানি বা খাতনা, গার্হস্থ্য হিংসার সঙ্গে ছোট থেকেই পরিচিত হতে থাকে মেয়েরা। পুরুষদের একাধিক বিয়েও প্রায়-যাযাবর সম্বুরুদের মধ্যে প্রচলিত রীতি।রেবেকা এবং তাঁর সঙ্গিনীরা ঠিক করলেন, তাঁদের নতুন গ্রামে জায়গা হবে অত্যাচারিতাদের। সেটা ১৯৯০ সালের কথা। আজও উয়াসো উমোজা গ্রামে থাকতে পারেন সেই সব মেয়েরা-ই, যাঁরা কোনও না কোনও ভাবে নিগৃহীতা হয়েছেন। ঠাঁই পায় তাঁদের সন্তানরাও।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com


আজ এই গ্রামে থাকেন পঞ্চাশের বেশি নারী এবং তাঁদের দুশোর বেশি সন্তান। পুত্রসন্তানদেরও বর্জন করা হয় না। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলেই তাঁদের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়। তাই এই গ্রামে আঠেরো বছরের বেশি বয়সি কোনও পুরুষ নেই।নিজেদের অর্থব্যবস্থা নিজেরাই গড়ে তুলেছেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। কৃষিকাজ, পশুপালনের পাশাপাশি মহিলারা রঙিন পুঁতি দিয়ে গয়না তৈরি করেন। নিজেরা পরেন, বিক্রিও করেন। তাঁদের তৈরি গয়না কেনেন পর্যটকরা।এই গ্রামে পর্যটকদের ঢুকতে গেলে প্রবেশমূল্য দিতে হয়। তাঁদের জন্য সম্বুরু জাতীয় অভয়ারণ্যে সাফারির ব্যবস্থাও আছে। সবমিলিয়ে নিজেদের আর্থিক সংস্থান নিজেরাই করে নিয়েছেন এই গ্রামের মহিলারা।



এই গ্রামে রয়েছে স্কুল-সহ জীবনধারণের অন্যান্য প্রয়োজনের উপকরণও। পাশাপাশি, নতুন প্রজন্মকে জীবনের সাদা-কালো দিকগুলিকেও চিনিয়ে দেন। যাতে, পরের প্রজন্মদের মেয়েদের আর নির্যাতিতা হতে না হয়। উমোজা উয়াসো গ্রামের স্কুলে পড়তে আসতে পারে পড়শি গ্রামের শিশুরাও। কিন্তু লিখতে বা পড়তে যতটা সোজা, করা ততটাই কঠিন। নির্যাতিতাদের নিয়ে আলাদা গ্রাম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবার জন্য সমাজের পুরুষ সদস্যদের কাছে নির্বিচার প্রহার সহ্য করতে হয়েছে রেবেকার।সম্বুরু সমাজে বিভিন্ন সময়ে অন্তত দেড় হাজার মহিলা নিজেদের দেশের এবং বিদেশি সেনাবাহিনীর হাতে ধর্ষিতা হয়েছেন। তাঁদের আর ফিরিয়ে নেয়নি পরিবার। স্বামীর অনেক স্ত্রী থাকলেও ধর্ষিতা স্ত্রীকে ঘরে জায়গা দেয়নি স্বামী।



বাধ্য হয়ে উমোজা উয়াসো গ্রামে পালিয়ে আসতেন মহিলারা। নতুন জীবনের খোঁজে। প্রথমে তাঁরা সংগ্রহ করা সবজি বিক্রি করতেন। ধাপে ধাপে তাঁরা চাষবাসের সব কাজ শিখে নিয়েছেন। গ্রামের জন্য কেনা জমির দামও মিটিয়ে দিয়েছেন।সমাজে ব্রাত্য মেয়েদের এই নতুন ঠিকানা মেনে নিতে পারেনি সম্বুরু পুরুষেরা। প্রতিরোধ এসেছে প্রতি ধাপে। গ্রামে ঢুকেও রেবেকার উপর নির্বিচার প্রহার চালিয়েছিল তাঁর স্বামী। কিন্তু কোনও ভাবেই মেয়েদের নতুন বাসা ভাঙা যায়নি। প্রতিবাদী রেবেকা এবং তাঁর সঙ্গিনীদের লড়াইয়ে অবশ্য পাশে থেকেছে কেনিয়া সরকার।উমোজা উয়াসো গ্রামের বাসিন্দারা কিন্তু বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো থাকেন না। তাঁরা আশেপাশের গ্রামে যান বিভিন্ন কাজে। যেখানেই যান, স্বীকৃতি স্বরূপ আদায় করেন কুর্নিশ। শুধু নিজেদের চৌহদ্দিতে এই সম্মান সীমাবদ্ধ নয়। ২০০৫ সালে এই গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা রেবেকা লোলোসোলি স্বীকৃতি পান রাষ্ট্রপুঞ্জেও।উমোজা উয়াসো গ্রামে মাটি আর গোবরের কুঁড়েঘরগুলি আজ সমাজ-খেদানো মেয়েদের নিরাপদ আশ্রয়। সেখানে তাঁরা আজ নিজেদের মতো করে বাঁচেন। মায়েদের সঙ্গে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখে তাঁদের এইচআইভি পজিটিভ নিরপরাধ সন্তানেরাও। 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>