Yasunari Kawabata Japanese novelist,irabotee.com

অনুবাদ গল্প : আংটি । নোবেল জয়ী ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা

Reading Time: 2 minutes

অনুবাদঃ কল্যাণী রমা

 

আইনের এক কপর্দকশূন্য ছাত্র নিজের সাথে কিছু অনুবাদের কাজ নিয়ে পাহাড়ের গরম ঝরণার কাছে এক সরাইখানাতে থাকতে গেল।
শহর থেকে আসা তিনজন গেইশ্যা তাদের মুখের উপর গোল পাখা মেলে ধরে বনের মাঝের ছোট প্যাভিলিয়নে ঘুমাচ্ছে।
বনের কিনারায় পাহাড়ী নদীতে ও পাথরের সিঁড়ি বেয়ে নামল। একটা বড় প্রস্তরখন্ড নদীর স্রোতকে দু’ভাগ ক’রে দিয়েছে; ঝাঁকে ঝাঁকে গঙ্গাফড়িং ওখানে ওড়াওড়ি করছে।

বড় প্রস্তরখন্ডটা কেটে বানানো বাথটাবটার পাশে একটা মেয়ে নগ্ন হ’য়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

মেয়েটির বয়স এগারো বা বারো মনে ক’রে সে তাকে পাত্তা দিল না। নিজের বাথরোবটা বেলাভূমিতে ছেড়ে মেয়েটার পায়ের কাছে জলে নেমে পড়ল।
মনে হ’ল মেয়েটার কিছুই যেন করবার নেই।
সে ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। নিজের গোলাপি শরীর দেখিয়ে দেখিয়ে আকর্ষণ করে যেন। এক পলক মেয়েটার দিকে তাকিয়েই ও বুঝতে পারল যে ও কোন গেইশ্যার মেয়ে। তার অস্বাভাবিক এক অকালপরিপক্ব শরীর দেখলেই বোঝা যায় যে ভবিষ্যতে পুরুষদের ইন্দ্রিয়সুখ দেওয়ার জন্যই সে তৈরী হচ্ছে। ওর অবাক চোখ মেয়েটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হ’য়ে পাখার মত ছড়িয়ে গেল।
হঠাৎ, মেয়েটি তার বাম হাত উঁচু ক’রে ধরে আর্তনাদ ক’রে উঠল।
“ওহ্‌ হো, এটা খুলতে ভুলে গিয়েছিলাম। জলে এটা পরেই নেমে গেছি।”
নিজের অজান্তেই প্রলুব্ধ হ’য়ে সে মেয়েটির হাতের দিকে তাকাল।
“কী মহা বিচ্ছু!” বিরক্ত হওয়ার বদলে হঠাত্‌ করে মেয়েটার প্রতি এক ভয়ানক ঘৃণায় ভরে গেল তার মন।
মেয়েটা নিজের আংটিটা দেখাতে চাইছিল। ও ঠিক জানত না যে গরম ঝরণার জলে স্নান করতে নামবার সময় লোকে আংটি খুলে নামে কিনা, কিন্তু এটা পরিষ্কার যে সে শিশুটির কৌশলের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিল।

স্পষ্টত, সে যতটা ভেবেছিল মুখে তার থেকে বেশি বিরক্তি দেখিয়েছিল। মেয়েটি লাল হ’য়ে গেল। আংটিটা নিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে নাড়াচাড়া করতে থাকল। নিজের ছেলেমানুষি কষ্ট ক’রে হাসি দিয়ে লুকিয়ে সে খাপছাড়াভাবে বলল, “বেশ সুন্দর আংটি তো। দেখি কেমন দেখতে।”
“এটা ওপ্‌ল্‌ পাথর।”
নিশ্চয়ই, তাকে দেখাতে পেরে যেন খুব খুশী এমনভাবে মেয়েটি টাবের কিনারায় বসল। যে হাতে আংটি পরা আছে তা বাড়িয়ে ধরে তাল সামলাতে না পেরে অন্য হাতটা মেয়েটি তার কাঁধে রাখল।
“ওপ্‌ল্‌?” মেয়েটির উচ্চারণ আর ভাবভঙ্গীর অকালপক্বতা গভীর ছাপ ফেলেছে তার উপর; মেয়েটির মত ক’রেই শব্দটা উচ্চারণ করবার চেষ্টা করল ও।
“হ্যাঁ, আমার আঙ্গুল এখনও খুব ছোট। আমার জন্য আংটিটি সোনা দিয়ে বিশেষভাবে বানানো হয়েছিল। কিন্তু এখন লোকে বলে পাথরটা খুব বড়।”

ও মেয়েটির ছোট হাত নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকল। পাথরটি থেকে নরম আলো বের হচ্ছে, উষ্ণ ডিমের কুসুমের মত তার রঙ বেগুনির সাথে মিশে; অপূর্ব সুন্দর লাগছে পাথরটাকে। মেয়েটি নিজ শরীরটা ক্রমশঃ সামনে এনে কাছে আরো কাছে নিয়ে এল, ওর মুখের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকল। মনে হ’ল মেয়েটির তৃপ্তি যেন নিজেকে ছাড়িয়ে গেছে।
তাকে আংটিটা ভালো ক’রে দেখানোর জন্য যদি নগ্ন মেয়েটিকে সে কোলে তুলেও নেয়, মেয়েটি হয়ত একটুও অবাক হবে না।
(লেন ডানলপের ইংরেজী অনুবাদ থেকে)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>