আলেকজান্ডারের পাখি
মাত্র ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে ব্যাংকে ১৭৬ কোটি টাকা, রাজধানীতে এখানে-ওখানে ৬টি ফ্ল্যাট, নিজের জেলা শহরে ১টি প্রাসাদ আর ১টি বাগানবাড়ি, গ্রামের মধ্যে টেক্সান-ধাঁচের খামারবাড়ি, বিলের মধ্যে মাইলতিনেক বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মৎস্য এবং হাঁস-মুরগির খামার, ডজনখানেক কুড়ি থেকে চল্লিশ বছরের বাৎসায়ন-গুলেখাওয়া বাঁধা মাগি আর বাড়িতে স্টিলের আলমারিভর্তি তোড়া তোড়া ক্যাশটাকার মালিক হওয়ার পরে মোতালের পটোয়ারির মনে হলো এ কী অন্যায় কথা যে না-খেতে-পাওয়া, কিংবা চেয়ে-চিন্তে খেয়ে বেঁচে থাকা, কিংবা মশা-মাছি-পোকামাকড়ের মতো জীবন কাটানো কিলবিলে অন্যসব দু’পেয়ে প্রাণীদের মতো আমাকেও একদিন মরতে হবে!
ইস্কুল জীবন থেকে সঙ্গী যারা ভালো ছাত্র ছিল, তার বাপ-মা উঠতে-বসতে তাকে যাদের মতো হওয়ার জন্য তাগাদা দিয়ে বেড়াত, তাদের প্রতি একধরনের ঘৃণা তার তখনোই জন্মে গিয়েছিল। বাপ-মায়ের প্রতিও। তো বাপ-মায়ের চোখে যারা ছিল আদর্শ, সেইসব ভালো ছাত্রদের এখনকার অবস্থান আর তার এখনকার অবস্থান বাপ-মাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে শৈশব-কৈশোর-প্রথম যৌবনের অপমানের শোধ তোলার আশা তার অপূর্ণই থেকে গেল। কেননা সে টাকাকড়ি গুছিয়ে যুৎ হয়ে বসার আগেই ঝটপট মরে গেল বাপ-মা। তার সঙ্গের সবচেয়ে ভালো তিন ছাত্রদের মধ্যে দুইজন এখন ডাক্তার, আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার। মোতালেব পাটোয়ারি এখন ইচ্ছা করলেই অমন কয়েক ডজন ডাক্তারকে বাড়ির দরজায় দাঁড় করিয়ে রাখতে পারে। আর ইঞ্জিনিয়ার! তার বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন সাইটে তো সবসময় পোস্টিং দিয়ে রাখা হয় অন্তত দুই হালি ইঞ্জিনিয়ার। অন্য যারা ভালো ছাত্র হিসাবে পরিচিত ছিল, তাদের বর্তমান অবস্থান তো ধর্তব্যের মধ্যেই নয়। ইস্কুল মাস্টার, বেসরকারি কলেজের মাস্টার, ব্যাংকের কেরানি, পাতি দোকানদার এইসব। একজন তো থার্ডক্লাশ পেয়ে শেষপর্যন্ত ঘরজামাই হয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের বেসরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগে মাস্টারি করছে।
এখন যদি মা-বাপ দুইজনাকে কোনোভাবে একটা দিনের জন্যে হলেও আনা যেত দুনিয়ায় ফিরিয়ে! বাপ-মা দেখে যাক তাদের হিসাবে না-গোনা অযোগ্য ছেলে আজ কোথায় উঠেছে। তাদের যদি আজকের মতো অকল্পনীয় শান-শওকতের মধ্যে রাখা যেত তাহলে তারা কেউ আর মরতেই চাইত না। বাপ-মায়ের মরার কথা থেকে আবার নিজের মরার কথায় ফিরে আসে সে। আসলেই তো ভারি অন্যায় কথা! সে মরতে যাবে কেন! সে চেঁচিয়ে ডাকে নজর আলি! নজর আলি!
ডাক শুনেই নজর আলি বুঝতে পারে অবস্থা খুব জটিল। তা নইলে তাকে এই নামে ডাকত না প্রভু। প্রভু নিজেই তার নাম ভদ্রস্থ করে দিয়েছে। নজর আলির জায়গায় নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া। যদি প্রভুর মুখ থেকেই আসল নামের ডাক বেরিয়ে আসে তাহলে বুঝতে হবে প্রভু হয় খুব বেশি খুশি, নয় খুব চিন্তিত, আর তা নাহলে খুব বেশি রেগে আছে।
নজর আলি ঘরে ঢুকতেই মোতালেব পাটোয়ারি হুঙ্কার ছাড়ে আমাকেও মরতে হবে কেন?
প্রভুর সামনে হকচকিয়ে যাওয়াটা খুবই অযোগ্যতার চিহ্ন। নজর আলি কোনো কিছুতেই হকচকায় না। এবারও তেমনটিই ঘটল। সে খুব ঠাণ্ডা স্বরে ঘরের বাতাসকে না নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল কেউ কি হুমকি দিয়েছে স্যার? কোন বাপের পোলা?
না কেউ হুমকি দেয় নি। কিন্তু আর সব মানুষের মতো তাকেও মরতে হবে কেন এই চিন্তা নিয়ে পেরেশান প্রভু।
এবার সত্যি সত্যি হতভম্ব হয়ে পড়তে হয় নজর আলিকে। এই ব্যাপারে সে কী করতে পারে! সূর্য পূর্বদিকে ওঠার মতো ধ্রব সত্য হচ্ছে কুল্লু নাফসিন জালেকাতুল মউত। সকল মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। তাহলে তার প্রভু কীভাবে এড়াবে মৃত্যুকে? আর প্রভুর সেই খায়েশকে পূরণ করার জন্য সে নিজে কীইবা করতে পারে! তবু প্রভুর কথার পিঠে তার মন যোগানোর উপযোগী কথা বলতেই হবে বিধায় মিন মিন করে নজর আলি বলে, টাউনের বড় ডাক্তারগুলানেক বাকি?
হুংকার এবং ককিয়ে ওঠার সংমিশ্রণে এক অদ্ভুত ধরনের আওয়াজ বের হয় প্রভুর গলা চিরে ডাক্তার কী করবে! ডাক্তাররা নিজেরাই তো দলে দলে পটল তোলে। কোনো ডাক্তারকে দেখেছ চিরকাল বেঁচে থাকতে?
তাহলে?
ক্ষেপে ওঠে মোতালেব পাটোয়ারি তাহলে কী করতে হবে সেটা খুঁজে বের করার জন্যেই তো তোমাকে ডেকেছি। তোমাকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দেওয়া হয় এই কারণে যে তুমি আমার সব মুশকিলের আসান। অথচ তুমি কিনা আমার কাছেই উল্টো জানতে চাইছ কী করতে হবে!
এই রকম বিষয় নজর আলির আয়ত্তের বাইরে। তাকে বলামাত্র যে কোনো ঠিকাদারির অর্ডার সে বের করে আনতে পারে। প্রভুর জন্যে কোনো লোককে খুন-গুম করে ফেলা তার কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। এমনটা সে বেশ কয়েকবার করে দেখিয়েছে। জাগতিক যে কোনো কাজ উদ্ধারের জন্য সে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম। কিন্তু এই ব্যাপারে সে কী বলতে পারে!
মোতালেব পাটোয়ারিই শেষ পর্যন্ত মনে করতে পারে এক লোকের কথা। নজর আলিকে বলে প্রফেসারকে খবর দাও!
এবার নজর আলিকে আরো বিভ্রান্ত দেখায়। প্রফেসর বলে যাকে ডাকা হচ্ছে, সেই সিরাজুল ইসলাম তাদের এলাকারই মানুষ। দিনরাত পড়াশুনা নিয়ে থাকে বলে লোকে তাকে প্রফেসর বলে ডাকে। আদতে সে কোনো চাকরি-বাকরি করে না। মোতালেব পাটোয়ারি তার মায়ের নামে এলাকায় কলেজ তৈরি করে সেখানে প্রিন্সিপ্যাল হিসাবে সিরাজুল ইসলামকে নিয়োগ দিতে চেয়েছিল। লোকটা সেই পদ গ্রহণ করে নি। মোতালেব পাটোয়ারি মনে মনে তার ওপর ক্ষিপ্ত। নজর আলিও। মুখের ওপর উল্টা-পাল্টা কথা বলায় লোকটার কোনো জুড়ি নেই। কিন্তু এখন প্রভু তার নাম উচ্চারণ করছে কেন? তাছাড়া নজর আলি জানে যে প্রফেসর কোনো সমস্যার সমাধান বলে দেওয়ার বদলে সেই সমস্যাকে আরো জটিল করে ফেলার কাজে দারুণ ওস্তাদ। প্রভুও সেকথা জানে। একবার মোতালেব পাটোয়ারি প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করেছিল আচ্ছা প্রোফেসার সাহেব, আপনার কী মনে হয় আল্লা-খোদা বলে কেউ আছে?
প্রফেসর খুবই স্বাভাবিক কণ্ঠে পাল্টা প্রশ্ন করেছিল আমি কি কখনো বলেছি যে আল্লা-খোদা বলে কিছু আছে?
ও তাহলে আপনে বলতে চান যে আল্লা-খোদা নামে কিছু নাই?
আমি কখন বললাম যে, আল্লা-খোদা নামে কিছু নেই?
মোতালেব পাটোয়ারির আক্কেল গুড়–ম। রেগে গিয়ে বলে, আপনে কি সোজা ভাষায় কোনো কথা বলতে জানেন না?
প্রফেসর মৃদু হাসির সাথে বলে, সোজা ভাষায় বলার মতো কিছু কী আছে যে বলব!
সেই প্রফেসরের সাথে এই বিষয়ে কথা বলে কি আদৌ কোনো লাভ হবে? তারপরে তাকে ডাকলেই যে সে এসে হাজির হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নাই।
কিন্তু প্রভু শুনতে নারাজ। সোজা ভাষায় বলে, আসতে না চাইলে দরকার হলে জোর করে তুলে আনবে। ক্যাডার লাগলে সঙ্গে নিয়ে যাও।
তার অবশ্য দরকার হয় নি। নজর আলির পাঁশুটে মুখ দেখে আর বৃত্তান্ত শুনে ইন্টারেস্টিং মনে হওয়ায় সিরাজুল ইসলাম নিজেই চলে এসেছে।
মোতালেব পাটোয়ারির চেহারা এক দিনেই ধসে গেছে। তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে অনুকম্পা বোধ করল সিরাজুল ইসলাম। অনৈতিক পথে অঢেল কামাই করেছে লোকটা। এখন তার মনে ঢুকেছে মৃত্যুচিন্তা। সে মৃত্যুকে এড়াতে চায়। কোনো মহৎ লক্ষ্য পূরণের জন্য নয়। বরং অবৈধ উপার্জনগুলিকে ভোগ করার জন্য। মনে মনে হাসল সিরাজুল ইসলাম। কুয়ার ব্যাঙ অশিক্ষিত লোকটা কি নিজেকে আলেকজান্ডারের চাইতেও শক্তিমান এবং বিত্তশালী মনে করে?
০২.
আলেকজান্ডার শুনেছিলেন যে পৃথিবীর কোথাও একটি ঝরনা রয়েছে, যে ঝরনায় স্নান করলে অমরত্ব লাভ করা যায়। অ্যাকিলিসের জন্মের পরে তার মা তাকে সেই ঝরনাতে স্নান করিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলে সেই ঝরনার সন্ধানেই তিনি সারা পৃথিবী জয় করার অভিযানে বেরিয়ে পড়েছিলেন। আলেকজান্ডার যে দেশ বা যে ভূখণ্ডই দখল করেন, সেই অঞ্চলের জ্ঞানী এবং প্রবীণ মানুষদের ডেকে জানতে চান তেমন কোনো ঝরনার অস্তিত্ব তাদের জানা আছে কি না। কিন্তু পাওয়া যায় না ঝরনার সন্ধান। আলেকজান্ডার তখন বেরিয়ে পড়েন আরেক দেশ জয় করার জন্য। এইভাবে সারা পৃথিবীর রাজা-সম্রাট-বীরপুঙ্গবদের সকল গর্ব ধুলায় রুটিয়ে দিতে দিতে আলেকজান্ডার এসে পৌঁছালেন পঞ্চনদীর মোহনায়। পাঞ্জাব জয় করার পরে গঙ্গাপথ ধরে আরো পূর্বদিকে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত আলেকজান্ডার। সেই সময় দেবী ডেলফির মন্দির থেকে দৈববাণীর সংবাদ নিয়ে বার্তাবাহক এসে পৌঁছাল তার কাছে। দৈববাণী এসেছে আলেকজান্ডারের নামে। দেবতা জিউস আলেকজান্ডারকে জানাতে বলেছেন যে, যে ঝরনার সন্ধানে তিনি ব্যাপক রক্তক্ষয় এবং হিংস্রতার মাধ্যমে একর পর এক রাজ্য জয় করে চলেছেন, সেই ঝরনা গঙ্গাতীরে নেই। আছে সম্পূর্ণ অন্য দিকে, এক ছোট্ট দ্বীপে। সেই দ্বীপে পৌঁছানোর পথনির্দেশও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আলেকজান্ডারকে। সঙ্গে সঙ্গে ভারত অভিযান অসম্পূর্ণ রেখে আলেকজান্ডার ফিরে চললেন সেই দ্বীপ লক্ষ করে।
এই যুদ্ধের সময় আলেকজান্ডারের সব সেনাপতি অবাক হয়ে গেল। কেননা অসংখ্য যুদ্ধে ইতোমধ্যে তারা জয়লাভ করেছে আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে। কিন্তু এর আগে কখনোই তারা আলেকজান্ডারকে এত ব্যগ্র উত্তেজিত হতে দেখে নি। এইটুকু একটা দ্বীপের রাজার আর কতই বা সৈন্যবল-অস্ত্রবল! কিন্তু আলেকজান্ডার এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন যেন এক মুহূর্ত দেরিও সইছে না তার। যথারীতি আলেকজান্ডারের বিজয়ের মাধ্যমে শেষ হলো যুদ্ধ। যুদ্ধ শেষে কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে। যেমন পরাজিত রাজা এবং তার পরিবারের লোকদের নিয়ে কী করা হবে, লুণ্ঠিত সামগ্রী কীভাবে সৈন্যদের মধ্যে বণ্টন করা হবে, বিজিত দেশে এরপরে কোন ধরনের শাসন প্রবর্তন করা হবে। কিন্তু এসব দিকে ভ্রুক্ষেপমাত্র করলেন না আলেকজান্ডার। তিনি সেনাপতিদের বললেন, তারা যেভাবে খুশি এসব আনুষ্ঠানিকতা সারতে পারে। তিনি বেরিয়ে পড়লেন ঝরনার সন্ধানে। বেরিয়ে পড়লেন কোনো দেহরক্ষী সঙ্গে না নিয়েই।
ডেলফি-র মন্দির থেকে পাওয়া দৈববাণীতে যে সাংকেতিক পথনির্দেশ ছিল, সেই পথ ধরে এগিয়ে বেশ তাড়াতাড়িই আলেকজান্ডার পৌঁছে গেলেন ঝরনার কাছে। অবাক হয়ে খেয়াল করলেন এই ঝরনা একেবারেই অন্যরকম। অন্যসব ঝরনার জল আসে ওপরের কোনো উৎস থেকে। সেই জল জমা হয় কোনো বিশাল গামলার মতো জায়গাতে। তারপরে নেমে এসে এঁকেবেঁকে ছুটে চলে মাটি চিরে। কিন্তু এই ঝরনার উৎস হচ্ছে ভূগর্ভ। মাটির নিচ থেকে ফোয়ারার মতো জল উঠে আসছে পাহাড়ের গায়ে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া একটা গর্তে। চারপাশে অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য। আলেকজান্ডার ত্বরিতে খুলে ফেললেন পরনের সমস্ত পোশাক। ঝরনার জলে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তৈরি। হঠাৎ ভেসে এল একটা অপার্থিব কণ্ঠস্বর দাঁড়াও আলেকজান্ডার! ঝরনার জলে অবগাহনের আগে শুনে নাও আমার কথাগুলি!
থমকে দাঁড়ালেন আলেকজান্ডার। কে কথা বলছে! এদিক-ওদিক তাকালেন। কিন্তু দৃষ্টিপথে এল না কোনো মানুষের অবয়ব। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ঝরনার দিকে এগুলেন আলেকজান্ডার। আবার ভেসে এল সেই কণ্ঠস্বর আমার কথা শোনো আলেকজান্ডার! ঐ ঝরনাতে তুমি স্নান করো না!
কণ্ঠস্বর কানে আসামাত্র শব্দের উৎসের দিকে তাকালেন আলেকজান্ডার। এবার দেখতে পেলেন। কোনো মানুষ নয়। কথা বলছে একটি পাখি! দেখামাত্র মনে মনে শিউরে উঠলেন আলেকজান্ডার। এত কুৎসিত হতে পারে কোনো পাখি! তার সমস্ত পালক খসে পড়েছে শরীর থেকে। লোলচর্ম বৃদ্ধের ন্যায় চামড়া ঝুলে আছে। এমনকি চোখের চামড়াও এমনভাবে ঝুলে পড়েছে যে মনে হচ্ছে কোনো আবরণ দিয়ে চোখ দুটোকে ঢেকে রাখা হয়েছে। ঠোঁট দুটো নেড়ে কথা বলছে বটে পাখিটা, কিন্তু তার ঠোঁট নাড়াতেও যে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে, তা এতদূর থেকেও বুঝতে পারলেন আলেকজান্ডার। এমন জুবুথুবু হয়ে বসে আছে পাখিটা যেন পাথরের গায়ে কেউ আঠা দিয়ে আটকে রেখেছে তাকে। এ যেন এক প্রাগৈতিহাসিক পাখি, যার বয়সের কোনো গাছপাথর নেই।
আলেকজান্ডার এগিয়ে গেলেন পাখিটার দিকে তুমি আমাকে ঝরনাতে স্নান করা থেকে বিরত রাখতে চাইছ কেন?
পাখি উত্তর দিল কারণ আমি চাই না তুমি আমার মতো অভিশপ্ত জীবন যাপন করো।
তার মানে?
পাখি অনুনয়ের সুরে বলল অমরতা কোনো আশীর্বাদ নয় আলেকজান্ডার। অমরতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় অভিশাপ!
দ্বিধায় পড়ে গেলেন আলেকজান্ডার তা কেমন করে হয়?
এই আমাকে দেখো। আমি ঐ ঝরনার জলে স্নান করেছিলাম। ঐ ঝরনার জলে স্নান করার জন্য আমি একটানা শত-সহস্র দিবস ও রজনীর পথ একটানা উড়ে এসেছি। ঝরনার জলে স্নান করার পরে কী আনন্দিতই না আমি হয়েছিলাম! আমি এখন অমর! কিন্তু তারপর! বছরের পর বছর কেটে যায়। আমার সন্তানেরা মরে যায়। তাদের সন্তানেরা মরে যায়। আমি শুধু নিকটজনের বিয়োগব্যথা সহ্য করতে থাকি। পৃথিবী তার কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। কিন্তু আমার জীবনের কোনো আবর্তন নেই। আমি বসে বসে দেখি সভ্যতা সৃষ্টি হচ্ছে, সভ্যতা বিলুপ্ত হচ্ছে। যখন দেখি আমার প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে, তখন শোকে-দুঃখে আমি মরণ কামনা করি। কিন্তু মৃত্যু তো আমাকে স্পর্শ করতে পারে না। আর আমার এই শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখো। জরা যথানিয়মে শিকড়ের পর শিকড় চারিয়ে চলেছে আমার শরীরে। জেনে রাখো আলেকজান্ডার, মৃত্যু নয়, আসল অভিশাপ হচ্ছে জরা। জরার অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য সকলের একমাত্র নিদান হচ্ছে মৃত্যু। কিন্তু ঐ ঝরনার জলে অবগাহন করে আমি নিজেকে সেই নিদান থেকে বঞ্চিত করেছি। তুমি আমার নিষেধ শোনো আলেকজান্ডার। ঐ ঝরনাতে খবরদার স্নান করো না।
আলেকজান্ডার ঝরনার জলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। স্বচ্ছ জলে ফুটে উঠেছে তার পাথরে খোদাই করা পেশির বৈভব। তার মুখাবয়ব কী অপূর্ব তরতাজা! এই শরীরে জরা আক্রমণ চালাবে! নষ্ট করে দেবে শক্তি ও সৌন্দর্য! জরাগ্রস্ত অমর পাখির দিকে আরেকবার তাকালেন আলেকজান্ডার। তার চেহারাও একদিন ঐ রকম হবে! ভাবামাত্রই ঘৃণায় মুখ কুঁচকে উঠল আলেকজান্ডারের। বিন্দুমাত্র ম্বিধা না করে তিনি অমরত্বের ঝরনায় স্নানের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ফিরে চললেন নিজের তাঁবুর দিকে।
০৩.
পুরো গল্প শুনেও মোতালেব পাটোয়ারির তেমন কোনো ভাবান্তর ঘটল বলে মনে হলো না। সে বরং হেসে বলল, আলেকজান্ডার মস্ত বড় বীর হবার পারে, কিন্তু মানুষটা এক্কেবারে বোকা। তা নাইলে ঐ রকম চান্স কেউ ছাইড়া দেয়!
তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন সিরাজুল ইসলাম। মনে মনে ভাবলেন, এই রকম মাথামোটা গবেট কী করে এত টাকার মালিক হতে পারল! পরক্ষণেই মনে পড়ল তার আরেক কোটিপতি বন্ধুর কথা। সে বলেছিল, এই দেশে কোটিপতি হবার জন্য। মেধার দরকার পড়ে না। দরকার পড়ে সাহসের। দুর্নীতি করার সাহস থাকলেই এদেশে যে কেউ কোটিপতি হতে পারে। কথাটা মনে হয় সত্যি।
সিরাজুল ইসলাম মৃদুস্বরে বললেন, পাটোয়ারি সাহেব, অমর হওয়া সম্ভব নয়। কারণ প্রকৃতি চায় না কেউ অমর হোক। প্রত্যেক প্রাণীকেই মরতে হবে। প্রকৃতি সেভাবেই বিন্যস্ত হয়েছে।
বুঝলাম না।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থেই বর্তমান প্রজন্মকে মরতে হবে। যেমন অতীতের প্রজন্ম মৃত্যুবরণ করেছে বর্তমান প্রজন্মের স্বার্থে।
মুখস্ত শব্দের মতো আবার আউড়ে গেল মোতালেব পাটোয়ারি বুঝলাম না।
মনে মনে উষ্ণ হয়ে উঠলেন সিরাজুল ইসলাম। মেজাজ চেপে রেখে বললেন, আমাদের এই পৃথিবী খুব ছোট্ট একটা জায়গা পাটোয়ারি সাহেব। যদি আমরা না মরি তাহলে পরের প্রজন্ম জায়গা পাবে কোথায়? তারা থাকবে কোথায়? খাবার পাবে কোথায়? তাহলে তো প্রাণের প্রবাহ বলে কিছু থাকবে না। আর প্রাণের প্রবাহ না থাকলে পৃথিবী থেকে পুরো মানবজাতিই একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যেমন বিলুপ্ত হয়ে গেছে ডাইনোসররা। ডাইনোসরদের কথা শুনেছেন বোধহয়!
না শুনি নাই। শুনলেও কিছু আসে-যায় না। আমি মরতে রাজি না, এইটাই হলো সাফ কথা। আপনে জ্ঞানী-গুণী মানুষ। পারলে তেমন পথ বাতলান। টাকা-পয়সার সমস্যা নাই। যদি আপনে নিজেও তেমন না মরতে ইচ্ছা করেন, তাইলে আমার সাথে শরিক হবার পারেন। খয়-খরচা সব আমার।
উঠে পড়লেন সিরাজুল ইসলাম না! আমার তেমন কোনো ইচ্ছা নাই।
তা আপনের খায়েশ না থাকলে নাই। আমার আছে। আপনে আমারে উপদেশ দ্যান যাতে আমি পথ বিচরাইতে পারি।
রাগে গা রি রি করে উঠল সিরাজুল ইসলামের। তিনি অপাঙ্গে তাকালেন লোকটার লোভী মুখের দিকে। হঠাৎ রাগের জায়গায় করুণায় ছেয়ে গেল তার মন। লোকটা জানেও না কী অসম্ভবের পেছনে ছুটছে সে। তিনি বললেন, শুনেছি মৃত্যু হয় তিন রকমের। কমা, সিনকোপ, আর অ্যাসফেক্সিয়া। কমা হয় মস্তিষ্কের অকার্যকারিতায়, সিনকোপ হয় হার্টের কারণে, আর অ্যাসফেক্সিয়া হয় লাংস বা ফুসফুসের কারণে। আপনি যদি যথাসময়ে বার বার আপনার অকার্যকর মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড আর ফুসফুস বদলে নিতে পারেন, তাহলে হয়তো আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন ইচ্ছামতো।
০৪.
নজর আলি আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই ঠিক তিনজন লোককে নিয়ে হাজির।
লোকগুলোকে গ্রাম থেকে আনা হয়েছে। নজর আলি কাঁচুমাচু মুখে জানাল, শহরের মানুষ রাজি হতে চায় না। তাছাড়া শহরের গরিব মানুষদের শরীর আর মন হাজার রকমের বিষ দিয়ে ভর্তি। তাদের মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস সুস্থ্য নয়। স্যারের পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে।
ঠিক কথা! একমত হলো মোতালেব পাটোয়ারি। পুত্রস্নেহের দৃষ্টি নিয়ে তাকাল লোক তিনজনের দিকে। প্রথম জনকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি তাহলে স্বেচ্ছায় তোমার ব্রেন বা মস্তিষ্ক আমার কাছে বিক্রি করতে রাজি?”
লোকটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল মোতালেব পাটোয়ারির দিকে। বুঝতেই পারে নি তার কথা।
নজর আলি অনুবাদ করল তার স্যারের কথা। তুমি তোমার মগজ নিজের ইচ্ছায় বিক্রি করতে রাজি আছো কি না সেটাই জানতে চাইছেন স্যার।
ও এই কথা! লোকটা এবার সশব্দ মজোক লিবার চান তো ল্যান। মজোক আমার কুনো কামেই লাগে না ছার। এই ধরেন হাত দরকার কামলা খাটার কামে। পা-ও দুইখান দরকার এটি-সেটি যাওয়ার কামে। মজোক আমার কুনো কামে লাগে না ছার। ধরেন নুনু যে নুনু, তারও দরকার আছে। মুতার জন্যে লাগে। বিবির জন্যে লাগে। মজোকখান দিয়া কুন কামডা হয় আমার! খালি খালি মাথার উপরোত ঐ জিনিসটাক বয়ে বেড়াবার দরকারডা কী আমার? ল্যান ছার। মজোক লিবার চাইলে লিয়া ল্যান।
আর তুমি? প্রয়োজনমতো সময়ে তোমার হার্ট দান করতে রাজি আছো তো?
অবশ্যই রাজি স্যার। আমি স্যার কিছুটা লেখাপড়া শিখেছিলাম। সেইসব বিদ্যা আমার কোনো কাজেই লাগে নি। বিদ্যা বিক্রি করে আমি কিছুই উপার্জন করতে পারি নি। তো আমি শুধু শুধু এই শরীর এই হার্ট দিয়ে কী করব স্যার? আমি তো কিছুই করতে পারি না। না নিজের জন্য, না সমাজের জন্য, না জাতির জন্য। আমার চাইতে এই জিনিসটা আপনার কাছে থাকলেই ভালো হয় স্যার। দেশের কাজে লাগে, সমাজের কাজে লাগে।
বাহবা বাহবা কী অপূর্ব বোধশক্তি!
আর তুমি? তুমি ফুসফুস দিয়ে দিতে রাজি?
বিশালদেহী লোকটা চরাঞ্চলের ভাড়াটে লেঠেল। এমনিতে এই ধরনের লোক কথা বলে খুব কম। কিন্তু চরের দখল নিয়ে যখন লড়াইতে নামে, এদের ফুসফুস থেকে যে বিকট হাঁক বেরিয়ে আসে তা শুনে অন্যদের কলজে শুকিয়ে যায়। লোকটা খুব সংক্ষেপেই বলল, রাজি!
সিদ্ধান্ত হলো, এরা তিনজন আর নজর আলি থাকবে মোতালেব পাটোয়ারির ছায়াসঙ্গী হয়ে। বলা যায় না কখন কোন অঙ্গের প্রয়োজন হয়। আর বাড়ির ছাদে হেলিপ্যাড বানিয়ে একটা হেলিকপ্টার সবসময় স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। অপারেশনের জন্য কত টাকার প্রয়োজন হতে পারে আন্দাজ করতে না পেরে সিদ্ধান্ত হলো যে ট্রলি লাগানো সিন্দুকে ভরে সবসময় নগদ দুই কোটি টাকা রাখা হবে। চাবি থাকবে মোতালেব পাটোয়ারির কোমরে একটা সোনার চেইনের সাথে জড়ানো। মোতালেব পাটোয়ারি রাতে যে ঘরে ঘুমাবে, সেই ঘরের লাগোয়া তিনটে খুপড়িতে ঘুমাবে তিন অঙ্গদাতা। কোনো খুপড়িতে কোনো দরজা আটকানো থাকবে না।
সব ঠিকঠাক করে পরিপূর্ণ সুখি মন নিয়ে ঘুমাতে গেল মোতালেব পাটোয়ারি। ঘুমিয়ে পড়ার আগে একবার জানতে ইচ্ছা হলো সবাই তার ডাকে সাড়া দেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে কি না। সে মৃদুস্বরে ডাকল, মগজ!
তৎক্ষণাৎ সাড়া এল, ‘জ্বে ছার!’
হার্ট!
প্রেজেন্ট স্যার!
ফুসফুস!
মৃদু কিন্তু জলদগম্ভীর স্বর ভেসে এল হুকুম!
নিশ্চিন্ত হয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল মোতালেব পাটোয়ারি।
শেষরাতের একটু আগে পেচ্ছাপের বেগ এসে প্রায়ই ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। বোধহয় প্রন্টেট গ্ল্যান্ড একটু বড় হয়েছে। সেই সময় এসেছে। ঘুমও পাতলা হতে শুরু করেছে। সেই পাতলা ছিঁড়তে শুরু করা ঘুমের মধ্যেই মোতালেব পাটোয়ারির মনে হলো তার অঙ্গদাতারা সচেতন রয়েছে কি না পরীক্ষা করা হোক। সে ডাকল মগজ!
সাড়া এল যথারীতি।
হার্ট!
সাড়া এল।
ফুসফুস!
সাড়া এল।
নিশ্চিন্ত হতে গিয়েও খটকা লাগল মোতালেব পাটোয়ারির। মনে হলো সাড়াগুলি এসেছে খুবই কাছ থেকে। এমনকি মনে হলো সাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনজনের নিঃশ্বাসও তার শরীর স্পর্শ করেছে। মনে হলো বিছানার খুব কাছে দাঁড়িয়ে তিনজনই। সে আবছা অন্ধকারের মধ্যেই চোখ দুটোকে পুরো টান টান করে তাকাল খাটের চারদিকে। দেখল তার খাট ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে চারটি অবয়ব। তিন নয়, চার। একজনের হাতে ছোরা, একজনের হাতে মুগুর, অন্য দুজনের হাত খালি। এরা কারা? মোতালেব পাটোয়ারি নিজের অজান্তেই ডেকে চলল, মগজ! হার্ট! ফুসফুস!
এবার আর সাড়া নেই। চোখ খুলে তাদের খুঁজতে চাইল মোতালেব পাটোয়ারি। কিন্তু তাদের বদলে তার প্রায়ান্ধকার দৃষ্টিপথে এল বীভৎস চারটি অবয়ব। এতই বীভৎস! এরা কি আলেকজান্ডারের যুগ থেকে উড়ে আসা সেই পাখি?
জন্ম : নাটোর। ২০ জানুয়ারি ১৯৬৫
পিতা : জহিরউদ্দিন তালুকদার
মাতা : রোকেয়া বেগম
শিক্ষা : এমবিবিএস
উচ্চতর শিক্ষা : স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা
পেশা : চিকিৎসক
স্থায়ী ঠিকানা : আলাইপুর, নাটোর ৬৪০০
বর্তমান ঠিকানা : প্যারেন্টস ড্রিম, বাড়ি#২৯৪, ফ্ল্যাট ৯/ই, পুলপাড়, জাফরাবাদ, পশ্চিম ধানমন্ডি, ঢাকা ১২০৭
মোবাইল : +৮৮ ০১৭১১-৫৭৪৮৬২
ইমেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: www.zakirtalukder.com
প্রকাশিত গ্রন্থ :
গল্প :
স্বপ্নযাত্রা কিংবা উদ্বাস্তুপুরাণ(১৯৯৭)
বিশ্বাসের আগুন(২০০০)
কন্যা ও জলকন্যা(২০০৩)
কল্পনা চাকমা ও রাজার সেপাই(২০০৬) (২য় সংস্করণ ২০১৪)
রাজনৈতিক গল্প: হা-ভাতভূমি(২০০৬)
মাতৃহন্তা ও অন্যান্য গল্প(২০০৭)
The Uprooted Image(২০০৮)
গল্পসমগ্র-১ম খন্ড(২০১০)
যোজনগন্ধা(২০১২)
বাছাই গল্প(২০১৩)
গোরস্তানে জ্যোৎস্না(২০১৪)
নির্বাচিত গল্প(২০১৬)
বেহুলার দ্বিতীয় বাসর (২০১৮)
উপন্যাস :
কুরসিনামা(২০০২) (পশ্চিমবঙ্গ সংস্করণ ২০১২)
হাঁটতে থাকা মানুষের গান(২০০৬)
বহিরাগত(২০০৮)
মুসলমানমঙ্গল(২০০৯)
পিতৃগণ(২০১১)
কবি ও কামিনী(২০১২)
ছায়াবাস্তব(২০১৩)
আহ্নিকগতি (২০১৫)
১৯৯২ (২০১৭)
উপন্যাস চতুষ্টয়(২০১৮)
মৃত্যুগন্ধী (২০১৯)
প্রবন্ধ :
গল্পপাঠ(২০০১)
বাংলাসাহিত্যের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন(২০১১)
নির্বাচিত প্রবন্ধ(২০১৬)
মুক্তগদ্য:
কার্ল মার্কস- মানুষটি কেমন ছিলেন(২০১৪)
জাকির তালুকদারের মুক্তগদ্য(২০১৮)
গল্পের জার্নাল (২০১৯)
কিশোর সাহিত্য :
চলনবিলের রূপকথা(২০০৪)
মায়ের জন্য ভালোবাসা(২০১২)
বন্ধু আমার (২০১৬)
গাঁয়ের কথা নায়ের কথা(২০১৮)
মুষ্টিবদ্ধ সেই হাত (২০১৯)
ছড়া :
তিনতিড়ি(১৯৮৯)
নাইমামা কানামামা(১৯৯৫)
সম্পাদনা :
প্রতিপাঠ: উত্তরআধুনিকতা(২০০২) (২য় সংস্করণ ২০০৬)(৩য় সংস্করণ ২০১৯)
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প(২০০৮)
নরেন্দ্রনাথ মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প(২০০৮)
সুবোধ ঘোষের শ্রেষ্ঠ গল্প(২০০৭)
আবদুশ শাকুরের শ্রেষ্ঠ গল্প(২০০৬)
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কিশোর গল্প(২০০৬)
বাংলাদেশের গল্প(২০১২)
অনুবাদ :
আনা হ্যানা জোহ্যানা– মারিয়ান্নি ফ্রেড্রিকসন(২০০৩)
হেনরী কিসিঞ্জারের বিচার– ক্রিস্টোফার হিচেন্স(২০০৪)
দূর দিগন্তে উঁকি– ভিন্নভাষার গল্প সংকলন(২০১৪)
পুরস্কার ও সম্মাননা :
কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার-২০১৪
কাগজ কথাসাহিত্য পুরস্কার-২০০১
মহারানী ভবানী সাহিত্য পদক-২০০৮
বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার-২০০৯
চিহ্ন সম্মাননা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-২০১০
জেমকন সাহিত্য পুরস্কার-২০১২
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার-২০১৩
রফিক-উল-ইসলাম স্মৃতি খোঁজ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৫ (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার- ২০১৬