আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
চোখ দুটো দেখাও আমাকে। আমি
কোথা গেলে ভিনদেশি? আমি যে কাতর
তোমার বাড়ির পাশে বসন্তে কোকিল হয়ে
অপাপবিদ্ধের মতো জোড়া জোড়া চোখ দেখে ভয়;
এই বুঝি রিরংসা নামের কোনো বিস্ফোরণ ঘটে
দূরে ট্রেন চলমান, ঝাউবনে স্রোতকল্প দোলা
এসো, তোমাকে উদ্ভিন্ন করি রাতপরিদের নামে
ইন্দ্রিয়ের ক্ষমজলে, তরল ক্ষীরের মতো
সহস্র তিরের শব্দ, শত হুল তোমার পেছনে;
ভয় বুঝি সংবেদনের কোনো ডানা?
তাহলে উড্ডীন হও, উড়ে চলো বনের ভেতর।
ক্রমহননের পথ পাড়ি দিয়ে দ্যাখো:
পর্বতের ধাপে ধাপে মনুষ্যখুলির ছায়া প্ররোচনা আকারে সাজানো;
আর দ্যাখো, জলের আঙুলে আঁকা চিত্রময়
তোমাকে ঘিরেই জাগে শত শত দেয়াল, প্রাকার;
ক্রমহননের পথ আমাকে বেষ্টন ক’রে
বাঘিনী আমারে শুধু ডেকে চলে ভরা পূর্ণিমায়
বারবার কাতর মিনতি করে আমি তারে বলি :
দয়া করো, আমায় খেয়ো না, আমি অসহায় অতি ছোটো জীব
বাঘিনী করুণা করে, আমাকে থাবায় পুরে কি ভেবে
ঘুমিয়ে পড়ে। এ-সুযোগে আমি তার মুঠো গ’লে নামি;
বুকে হেঁটে-হেঁটে তার গর্জনের সীমানা পেরোই
সন্তর্পণে ঢুকি পড়ি বনপ্রান্তে, পরিত্যক্ত ঘুমের গুহায়
ভাবি, বাঁচা গেল! ভাবি, আমাকে পাবে না আর তার
দাঁত-নখ, অত্যধিক প্রেমের আঁচড়
অবশেষে এ-গর্ভগৃহের ছায়ায় বসে আমি নিরাপদ!
থ্যাঁতলানো অণ্ড-শিশ্ন, কালশিটে ঊরু ও জঘন, আর,
এই দুটি রক্তমাখা ঠোঁটে বিশল্যকরণী ঘষে ফিরে পাবো
আমাকে পাবে না আর বাঘিনীর অতিরিক্ত রতি-আক্রমণ!
কিন্তু হায়, প্রতিবারই স্বপ্নে বাঘিনী তবু পিছু নেয়;
এক লাফে সীমান্তের নদীটি পেরিয়ে
অতর্কিতে সামনে আসে; ভয়ানক দু’পায়ে দাঁড়ায়, আর
দু’বাহু বাড়িয়ে তার সে আমাকে কোলে তুলে নেয়;
ধীরে ধীরে চুমু খায়, ঠোঁটে ও গলায় তার দাঁত-নখ গেঁথে রক্ত চাটে
বেপরোয়া জ্বালামুখে আমাকে পুড়িয়ে শুধু কাবাব বানায়
শেষ রাতে মাতাল চাঁদের নিচে অ্যাম্বুলেন্স এসে
আমাকে উদ্ধার করে দ্রুত কোনো হাসপাতালে ছোটে
সামনে খুঁজি তাকে, পেছনে তাকাই
ঘুমের পোশাক গায়ে, দশ পায়ে নাচি
কোথায় সে? যখন সূর্য-পূজারির ঘরে
ঘোড়া ফেলে দিচ্ছে আমাকে আর তার জিন;
রাত্রির উপসংহার এলিয়ে পড়ছে মোরগঝুঁটিতে
তার শিরদাঁড়া বেয়ে নামছে রক্তঘন চিৎকারের নদী
কোন গাঢ় কুয়োর অতলে তার শব?
নেকাবঢাকা কোন শরবনে গিয়ে তাকে খুঁজি!
পথের ক্লান্তিহেতু গ’লে যাচ্ছে খুর
আমার হৃদয় আজ ঝুলছে অনেক ডালে ডালে
ঘুম পালিয়ে যাচ্ছে এক জানালা থেকে
ঘোড়া ফেলে দিচ্ছে আমাকে আর তার জিন
—এক চিৎকারের নদী থেকে আরেক চিৎকারের নদীতে!
তোমাকে খুঁজতে এসে ঝর্নার কিনারে গিয়ে দেখি
সমস্ত জঙ্গল ঘিরে ঠুস্কে পড়ছে কালো রাত
সাঁকো নেই, চতুর্দিকে নদী;
জলের ডানার নিচে ওঁতপাতা হাঙ্গর, কুমির
তদুপরি ভয়! মাংসলোভী কাফ্রিদল
ছুরি আর অজস্র মুষল নিয়ে ঘোরে
তবু আমি তোমাকে দেখার লোভে
সকল গাছের দৈর্ঘ্য মেপে মেপে ওপরে উঠেছি;
চাক্ষুষ প্রমাণহীন সেই ছবি জ্বলবার আগে গেছে নিভে
তবু আলট্রা মেরুন রাতে একটি ইঁদারা তার সাক্ষ্যে টলোমল
হে গরুড়,ক্ষিপ্র ওজনহীন ডানা
তোমার স্ফটিকজলে শুয়ে আমি দেখব আকাশ
জুয়েল মাজহারের জন্ম ১৯৬২ সালের ২০ জানুয়ারি। নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া থানাধীন গড়াডোবা ইউনিয়নের সাখড়া গ্রামে। পিতা মুকদম আলী, মা বেগম নূরজাহান (সরু)। দুজনই প্রয়াত। বন্ধু শিরিন সুলতানা ও পুত্র অর্ক মাজহারের সঙ্গে থাকেন ঢাকায়। পেশা সাংবাদিকতা।
কৈশোরে নিরুদ্দেশযাত্রা। দীর্ঘ ভবঘুরে জীবন। যৌবনের একটা বড় অংশ কেটেছে বৃহত্তর সিলেটের হ্ওারে-পাহাড়ে। বিশেষত হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে। ঘৃণা করেন বৈষম্য, জাতিবৈর, সকল প্রকারের অন্ধতা ও পৃথিবীকে খ-ক্ষুদ্র করে দেওয়া সীমান্ত নামের ‘খাটালের বেড়া’।
#
#
প্রকাশিত কবিতাবই:
—————————
১.
দর্জিঘরে একরাত (২০০৩ আগামী; ২০১৪ শুদ্ধস্বর)
২.
মেগাস্থিনিসের হাসি (২০০৯ বাঙলায়ন; ২০১৫ শুদ্ধস্বর )
৩.
দিওয়ানা জিকির (২০১৩; শুদ্ধস্বর)
৪.
নির্বাচিত কবিতা (২০১৯ ; বেহুলাবাঙলা)
৫. রাত্রি ও বাঘিনী (২০২০); কবিতাভবন (বাতিঘর, ঢাকা)
#
#
প্রকাশিত অনুবাদগ্রন্থ:
——————————-
১.
কবিতার ট্রান্সট্রোমার টোমাস ট্রান্সট্রোমারের বাছাই করা কবিতার অনুবাদ সংকলন। প্রকাশক শুদ্ধস্বর; বাংলা একাডেমীর ফেব্রুয়ারি বইমেলা,২০১২। এটি নতুন রূপে প্রকাশ করেছে বেহুলাবাঙলা বাংলা একাডেমি বইমেলা, ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
২.
দূরের হাওয়া ২০০ বিশ্বকবিতার অনুবাদগ্রন্থ। প্রকাশক চৈতন্য প্রকাশন। বাংলা একাডেমি ফেব্রুয়ারি বইমেলা, ২০১৬।
#
#
পুরস্কার ও সম্মাননা:
————————
১.
’জীবনানন্দ দাশ কবিতাপুরস্কার ২০১৯’
২.
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের (কলকাতার) ঐহিক সাহিত্যগোষ্ঠির ’ঐহিক মৈত্রী সম্মাননা ২০২০’
৩.
’নির্বাচিত কবিতা’ বইয়ের জন্য পেয়েছেন ’বেহুলাবাঙলা বেস্টসেলার বই সম্মাননা ২০১৯’
Related