নব যুবক সংঘের সরস্বতী পূজার এবার পঁচিশ বছর। একটানা পঁচিশ বছর ধরে সরস্বতী পূজা হয়ে চলাটা-র মধ্যে কেমন একটা গর্বের ভাব লুকিয়ে থাকে ক্লাবের।
সরস্বতী পূজা এমনই একটা পূজা, যা বালক বয়সের শেষ দিক থেকে শুরু হয়ে কৈশোরের শেষ পর্যন্ত এসে আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যায়।
কিশোররা যৌবনে পা রাখলেই সরস্বতী পূজা দিয়ে হাতেখড়ি করা বিদ্যেয় দূর্গা, কালী ইত্যাদি পূজা করতে শুরু করে।
এমতাবস্থায় যদি আবার ক্লাবের হবু কিশোররা সরস্বতীর ভার গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হয়, তবেই পুনরায় সরস্বতীর বন্দনা শুরু হয় এবং বংশপরম্পরায় সেই পূজা হতেই থাকে। নব যুবক সংঘের সরস্বতী পূজার ইতিহাস অনেকটা সেরকমই। এবং সেভাবেই এই পূজা এবার পঁচিশ বছরে পদার্পন করে ঐতিহ্যময় হয়ে উঠেছে।
একে সরস্বতী পূজা, তারপর আবার পঁচিশ বছর; তাই বর্ত্তমান সদস্যরা পূজাটাকে একটু বিশাল ভাবে করছে। তাই তাদের পূর্ববর্ত্তী পাড়াতুতো দাদাদের স্মরণাপন্ন হয়েছে, এবং দু’চারদিন একসাথে মিটিং ও ইটিংয়ে সমবেত হবার পর ঠিক হয়েছে যেহেতু এবার পঁচিশ বছর তাই ছোটোদের সঙ্গে বড়োরাও এই পূজায় যোগদান করবে।
একটা কমিটি তৈরী করা হয়েছে। সবার করণীয় কাজ ভাগ বাটোয়ারা করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে এক একটা পদে দাদারা বহাল হয়েছে। তারা সমগ্র পূজাটা পরিচালনা করবে। ছোটোরা চাঁদা তুলবে। বড়রা কেউ চাঁদার ঝামেলায় যাবে না যেহেতু সরস্বতী পূজা, সেইজন্য। কারণ, সরস্বতী পূজায় চাঁদা তুলতে গেলে এখন একটু সম্মানে লাগবে। পাড়ার কিছু বিজ্ঞ জ্যেঠুরা কেমন যেন তাচ্ছিল্যর চোখে দেখে থাকবেন, আবার সরস্বতী বানান জিজ্ঞেস করেও ফেলতে পারেন কেউ কেউ। সেটা যুবক বয়সে একটু লজ্জার কারণ হয়েই পড়ে। তাই চাঁদাটা ছোটোরাই তুলবে।
বড়দের হাতে পড়ে পূজার বাজেটটাও অনেকখানি বেড়ে গেছে – এক লক্ষ টাকা। টাকার অঙ্কটা শুনে ছোটোরা একটু ঘাবড়ে গেলেও বড়রা আশ্বাস দিয়েছে, “তোরা চাঁদা তুলতে থাক, বাকীটা আমরা ম্যানেজ করে নেবো। শুধু চাঁদা তুলতে গেলে সবাইকে পঁচিশ বছরের পুজোর মাহাত্ম্যটা একটু ভালো করে বোঝাবি আর আমরা যে পেছনে আছি সেটাও জানাবি”।
বাজেটটা এমনি এমনি বাড়ে নি, তার কারণও আছে। একদিনের সরস্বতী পূজা এবার পাঁচ দিনের। অর্থাৎ চারদিন ঠাকুর মণ্ডপে থাকবে আর পঞ্চম দিন বিসর্জন। এই চারদিনের প্রতিদিন সন্ধ্যেয় বিচিত্রানুষ্ঠান হবে। নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক ইত্যাদি। এছাড়াও দুদিন দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে মণ্ডপে। একদিন খিচুড়ী আর একদিন মাংস ভাত। একদিন রাতে লুচি, আলুরদমও হবে। তারপর বিসর্জনের দিন প্রশেসনের আয়োজন, সঙ্গে ডিজে এবং সাঁওতালি নাচ। এছাড়াও প্যাণ্ডেল, লাইট, ফোয়ারা এসব দিয়ে পূজা মণ্ডপ জমজমাট হয়ে উঠবে।
এই জমজমাট পূজার সঙ্গে পাশের ফাঁকা মাঠে ছোটো মেলাও হবে। ফুচকা, ঝালমুড়ি, আলুকাবলীর সাথে মোমো, মোগলাই ও সাজের জিনিষের দোকান, খেলনার দোকান এসবই। মেলা না জমলে সরস্বতীদের মণ্ডপে পদধূলি পড়বে না, আর সরস্বতী পূজায় যদি সরস্বতীরাই না আসে তবে আর কিসের পূজা? এইতো হাতেখড়ি দেওয়া দেবীর মাহাত্ম্য।
লিফলেট তৈরী হয়েছে, স্যুভেনীর ছাপান শুরু হয়ে গেছে। বিল বইটা এবার আকারে একটু লম্বা-চওড়া হয়েছে। তাতে সরস্বতীর ছবিটা রঙীন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বড়োরা ছোটোদের বারংবার যে ব্যাপারটা বলে চলেছে তা হলো, বিলের ওপর লেখা সরস্বতী বানানটা ভালো করে মুখস্থ করে রাখতে। যে কোন সময় যে কোন পাড়ার জ্যেঠুরা ওটার বানান ধরতে পারেন আর ভুল বললেই চাঁদার হারও কমিয়ে দিতে পারেন।
ক্লাবের পক্ষ থেকে এবারের পূজার সেক্রেটারী লালুয়া এই ব্যাপারটায় খুব ভুক্তভোগী। তার কৈশোরে সে প্রায়ই এই বানানের প্যাঁচকলে পড়ে নাস্তানাবুদ হতো। লালুয়া সরস্বতী পূজা করত ঠিকই কিন্তু সরস্বতীর সঙ্গে তার আদায় কাঁচকলা ছিল, যদিও প্রেমটা তার সরস্বতীর সঙ্গেই হয়েছিল এবং সেই সরস্বতীই এখন লালুয়ার অর্দ্ধাঙ্গিনী। এসব ভাগ্যের ফের।
লালুয়ার প্রেমে হাতেখড়ি হয়েছিল ওই সরস্বতী পূজার দিনেই। সরস্বতী ওই দিনই পূজা প্যাণ্ডেলের পেছনের ঘেরা জায়গায় চটের তাঁবুর ফাঁক দিয়ে যখন চিঠিটা লালুয়ার কোলে ফেলেছিল তখন তাঁবুর মধ্যেটা ধোঁয়ায় ভর্তি তো ছিলই সঙ্গে অ্যালকোহলের তীব্র গন্ধে ম্-ম্ করছিল।
চোখাচোখি, ঈশারা, আড়াল-আবডালের মধ্যে প্রেমটা অঙ্কুরিত হয়েছিল অনেক দিনই। সেটা পূর্ণতা পেয়েছিল ওই সরস্বতী পূজার জনহীন দুপুরে।
সেদিন সরস্বতীর চিঠি পেয়ে লালুয়ার হাতেখড়ি দেওয়া জলীয় ও ধোঁয়ার নেশা ছুটে গেছিল তৎক্ষণাৎ; কারণ ওই বয়সে প্রেমের নেশার ঘোর মনে হয় অন্য নেশাকে পরাজিত করতে পারে খুব অল্প সময়েই।
লালুয়া সেদিন ছুটে এসেছিল সরস্বতীর কাছে। এসে দেখেছিল সরস্বতী কূপিত। সরস্বতী বলেছিল রাগত: স্বরে – “ঈ-শ্-শ্! তুমি মদ খাচ্ছিলে, বিড়ি খাচ্ছিলে! আগে জানলে আমি যেতাম না”।
ব্যাপারটা সেদিন মিটেছিল শেষে। লালুয়া সরস্বতীকে বোঝাতে পেরেছিল, ওগুলো হাতেখড়ির ব্যাপার। বোঝাতে ও বুঝতে গিয়ে অবশ্য কিছু প্রাপ্তিযোগ হয়েছিল দুজনেরই। সেটাও হাতেখড়িই ছিল। দোকানের কেনা মিষ্টির থেকে অধর সুধার স্বাদ যে আরো মিষ্ট, সে বোধ ওদের চমকিত করেছিল। সেইসঙ্গে এই অভিজ্ঞতাও হয়েছিল যে কঠিন পুরুষ শরীর ও কোমল নারী শরীর ভগবানের এক অপূর্ব সৃষ্টি।
আরো পড়ুন: স্পীড থ্রী । পার্থ ঘোষ
সেই লালুয়া এবারের পূজার সেক্রেটারী। ফলে সরস্বতী পূজা সম্বন্ধে তার জ্ঞান অবশ্যই শ্রেষ্ঠত্বের দাবী রাখে। জীবনে একটা গালভরা পদ পেয়ে লালুয়াও বেশ হর্ষিত। তাই পূজাটাতেও সে এবার তাক লাগিয়ে দিতে চায় পাড়ার লোকেদের কাছে।
প্রতি সপ্তাহেই সবাইকে নিয়ে একবার করে মিটিং ডাকছে লালুয়া। গত সপ্তাহের মিটিংয়ে আবার ঠিক হয়েছে যেহেতু সরস্বতী পূজা সেইহেতু পুস্তক বিতরণ করা হবে সাংস্কৃতিক মঞ্চ থেকে। তাই সে তার বন্ধুদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছে দারিদ্র্য সীমার নীচে থাকা কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের জোগাড় করার জন্য। অঞ্জন, রঞ্জন, সঞ্জয়, দেবার্ঘ, শমিত সবাই এই শুভ চেতনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
পূজার দিন যত এগিয়ে আসছে কাজের দ্রুততা ও উত্তজনা ক্রমশঃ বাড়ছে। একে একে মণ্ডপ, মাইক, লাইট, শিল্পী সবাইকে অগ্রিম দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। চাঁদাও ভালো উঠছে। পাড়া থেকে কেউ খুব একটা অসুবিধার সৃষ্টি করেননি। যার কাছ থেকে যেরকম চাওয়া হয়েছে প্রায় সেরকমই পাওয়া গেছে। দু’একজন একটু বেঁকে বসেছিলেন, কিন্তু দুস্থদের বই ও বস্ত্র বিতরণ করার ব্যাপারটায় তাঁরা নড়ে চড়ে বসেছেন। মেনেও নিয়েছেন। চাঁদাও দিয়েছেন।
পূজার দু’দিন আগেই প্যাণ্ডেল সম্পূর্ণ হয়ে গেল কথামতই। লাইটও সাজান হয়ে গেল। প্যাণ্ডেলের সামনে ফোয়ারা বসল। এসে গেল প্রতিমা। বেজে উঠল মাইক। আলো ঝলমলে সরস্বতী পূজার পঁচিশ বছরের আনন্দে ভাসল ক্লাবের সদস্য ও পাড়ার অধিবাসীরা। দেখতে দেখতে নিজেদের ছোটোবেলার পূজার কথা মনে পড়ে যেতে লাগল লালুয়া আর তার বন্ধুদের।
লালুয়ার বউ সরস্বতীর মনটাও কেমন নষ্টালজিক হয়ে উঠল। শুধু মেয়ে মন বলে আনন্দের পাশাপাশি একটু দুঃখও চাগাড় দিয়ে উঠল। তাই সবার অলক্ষ্যে সে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল একবার সেই কিশোরী সরস্বতীর সঙ্গে বর্ত্তমানের নিজেকে মিলিয়ে নেওয়ার জন্য। পাড়ার প্যাণ্ডেলে তখন মাইকে বেজে উঠেছে সেই মন হরণ করা গানের কলি – “ম্যায়নে প্যার কিয়া…..”
পূজার দিন সকালটা হৈ হৈ করে ভালোই কাটল। বিকেলে শুরু হল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পীরা মঞ্চে উঠে তাদের প্রমোদানুষ্ঠান প্রদর্শন করতে লাগলেন গান, নাচ, আবৃত্তির মাধ্যমে। আনন্দ যেন আকাশ চুঁইয়ে ঝরতে লাগল সরস্বতী পূজার মণ্ডপে।
মেলাটাও চালু হয়ে গেছে বিকেল থেকেই। কেনাকাটা, খাবারের গন্ধ, কচিকাঁচাদের হৈ-চৈ। সরস্বতী পূজায় দূর্গা পূজার স্বাদ। আবালবৃদ্ধবণিতা খুশী। একঘেয়ে জীবনে উৎসবের স্বাদ। উৎসব আর ক’দিন? এই সামান্য ক’দিনের আনন্দের ভরসাতেই তো সারা বছরের পথ চলা।
দ্বিতীয় দিন দুপুরে খিচুড়ী, বাঁধাকপির তরকারী আর পায়েসের ঢালাও আয়োজনে পেট ভরা খাওয়া। দুপুর শেষে আবার সাজ-সাজ রব সাংস্কৃতিক উৎসবের। ঠিক তখনই খবরটা নিয়ে এলো ভুতো, লালুয়ার ছোটোবেলার বন্ধু।
হন্তদন্ত ভুতো লালুয়াকে এসে বলল, “লালু, অবিনাশ কাকাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে সকালবেলা। কাকার খুব শরীর খারাপ”।
লালুয়া বলল, “হ্যাঁ শুনেছিলাম। কিন্তু খুব সিরায়াস ব্যাপার তা জানতাম না। কি হয়েছে অবিনাশ কাকার?”
ভুতো বলল, “কাকার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সকালে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল, ওখান থেকে কলকাতায় নিয়ে যেতে বলেছে। ইসিজিতে মারাত্মক ব্লকেজ পাওয়া গেছে। শোনা যাচ্ছে প্রেসমেকার বসাতে হতে পারে”।
লালুয়া একটুক্ষণ ভুতোর মূখের দিকে চেয়ে রইল। মনে মনে অবিনাশ কাকার মুখটা মনে করল। রোগা একহারা অবিনাশ কাকা নদীর ধারের টালির চালের ছোট্টো ঘরে থাকেন। কাকীমা অনেকদিন আগেই মারা গেছেন। একমাত্র ছেলেই কাকার দেখাশুনা করে। ছেলেটার বিয়ে দিয়েছিল কাকা, বউ পালিয়েছে বিয়ের ছয় বছর পর। সেই থেকে বাবা আর ছেলে একসাথে থাকে। লোকের বাড়ি বাড়ি ফাই-ফরমাশ খাটেন । সবাই যা দেয় তা দিয়েই সংসার চলে দুজনের। ইদানীং অবিনাশ কাকা বেশী কাজ করতে পারতেন না। হাঁপের টান উঠত। একসময় এই পাড়ার সব বাড়ীতে কাকা হরেকরকম কাজ করেছেন। বাগানের মালির কাজ বেশি করতেন কাকা। এখন বয়সের ভারে, অসুখের প্রকোপে আর পারেন না।
লালুয়া ভুতোর চোখে চোখ রেখে বলে, “অবিনাশ কাকার টাকা কোথায়, প্রেসমেকার কেনার? এতো রাজরোগ। ওঁর ছেলের মিল বন্ধ হয়ে গেছে বারো বছর। স্থায়ী চাকরী বলতে কিছু নেই। অতো টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবে?”
ভুতো কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, “জানি না-রে! তবে মানুষটা বড় ভালো রে লালু। খুব ভালো এবং বিশ্বস্ত। কেন যে এত বড় অসুখটা হল কাকার?”
লালুয়া হঠাৎই ছট্ফট করে উঠল। ওর মাথায় যেন কিসের বাজনা বাজলো। ও ভুতোর হাতটা ধরে বলল, “কর্ডলেশ মাইকটা একটু আমায় দে তো ভুতো”।
ভুতো অবাক হল। ভাবল, এইরকম সঙ্কটজনক সময়ে লালুর এ-কিরকম তামাশা! সে দোনোমনো করতে থাকল। লালুয়া চেঁচিয়ে উঠল, “দাঁড়িয়ে কেন? নিয়ে আয়, তাড়াতাড়ি”।
ভুতো কর্ডলেশ মাইকটা লালুয়ার হাতে ধরিয়ে দিল। লালুয়া মাইক হাতে স্টেজে উঠে মাইকের লাল রঙের সুইচটা অন করে উদাত্ত গলায় ঘোষণা করতে থাকল – “ বন্ধুগণ এবং আমার পাড়ার বয়োঃজ্যেষ্ঠ সবাই ও ছোটোরা। আজ আমি এই মঞ্চ থেকে সবাইকে ক’টা কথা জানাতে চাই। প্লীজ্, একটু মন দিয়ে সবাই শুনুন। আমাদের অবিনাশ কাকাকে তো আপনারা সবাই চেনেন। নদীর পাড়ের অবিনাশ কাকা সারাজীবন সামান্য পারিশ্রমিকের বদলে আমাদের সবার বাড়ীতে ফাইফরমাশ খেটে গেছেন। আমাদের বাড়ী পরিষ্কার করেছেন, আমাদের বাগান পরিষ্কার করেছেন। আজ তিনি খুবই অসুস্থ। ডাক্তারবাবুরা তাঁকে কলকাতার হসপিটালে নিয়ে যেতে বলেছেন এবং ইমিডিয়েট তাঁর শরীরে প্রেসমেকারের বসানোর দরকার আছে বলে জানিয়েছেন। আমার মনে হয় আমাদের তাঁর পাশে দাঁড়ান উচিত। তাঁর এতো টাকা নেই যে তাঁর ছেলে নিজে থেকে এই চিকিৎসার খরচ চালাতে পারে। তাই আমি ঠিক করেছি আমাদের পঁচিশ বছরের সরস্বতীকে আমরা কালই বিসর্জন দেব। এবং আমাদের পূজোর জন্যে তোলা টাকা অবিনাশ কাকার ছেলের হাতে তুলে দেব। এ টাকা আপনাদের, তাই আমি আপনাদের অনুমতি প্রার্থনা করি। আমার মনে হয় এক্ষেত্রে অবিনাশ কাকার জীবন বাঁচান আমাদের একান্ত কর্তব্য”।
লালুয়ার ঘোষণায় সমস্ত পূজা প্রাঙ্গণ কয়েক সেকেণ্ডের জন্য নিশ্চুপ হয়ে গেল। সমবেত জনতার দৃষ্টি তখন মঞ্চে দাঁড়ান লালুয়ার দিকে। ক্ষণিকের নীরবতার পর সমস্বরে সবার মুখ থেকে একটা কথাই উচ্চারিত হল – “আমরা রাজি-ই-ই”।
পাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠ তরুণ বাবু উঠে দাঁড়িয়ে লালুয়াকে বললেন, “লালু যদি আরো কিছু লাগে আমরা চাঁদা তুলে দেব, তোমরা চিন্তা করোনা। মানুষের জীবনের থেকে দামী আর কিছু নেই। আমরা সবাই তোমাদের পাশে আছি”।
ভুতো পায়ে পায়ে লালুয়ার পাশে উঠে এসে দাঁড়াল। লালুয়ার হাত থেকে কর্ডলেশটা নিতে গিয়ে সে দেখল, লালুয়ার দু’চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছে। ভুতো বুঝলো এ অশ্রু লালুয়ার আনন্দাশ্রু। এই অশ্রুর অনেক দাম। এই চোখের জলের কোন রঙ হয় না।

স্কুল জীবন থেকেই লেখার শুরু। ছোট, বড়, মাঝারি ও অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি। লেখাকে পেশা হিসেবে নয়, নেশা হিসেবে আঁকড়ে ধরে, লেখায় মগ্ন থাকাই ভালোবাসা। ভালো লাগে শব্দ সাজিয়ে সাহিত্যের মালা গাঁথতে। ভালোলাগে নানান ধরনের বই পড়তে । ছোটগল্প বা অণুগল্প খুব প্রিয়।