| 27 এপ্রিল 2024
Categories
ভাসাবো দোঁহারে

ভাসাবো দোঁহারে: ভালবাসার গল্প সন্ধি । শুভশ্রী সাহা

আনুমানিক পঠনকাল: 5 মিনিট

গুপ্ত রাজধানী উজ্জয়িনী-তে গভীর নিশীথে মন্ত্রণা সভা বসেছে। উপস্থিত হয়েছেন রাজপুরোহিত কেশবাচার্য, মহামন্ত্রী বৈতরিক এবং ভুক্তির প্রধান প্রাদেশিকারা এবং প্রধান রাজ গুপ্তচর গুঢপ্রদেশিক। গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভাগ্যাকাশে এখন করাল মেঘ জমা, চিন্তার প্রতিটি রেখার কুঞ্চন সুস্পষ্ট রাজপুরুষের ললাটে।

উত্তর সীমান্তে অবস্থান করছেন ক্ষত্রপ প্রধান কিদারা। তিনি একে একে রাজ্য জয় করে গুপ্ত সাম্রাজ্যের সীমানায় এসে যুদ্ধে বন্দী করে নিয়েছেন গুপ্ত সম্রাট রামগুপ্তকে! বন্দী করে ক্ষত্রপ প্রধান সম্রাটকে নিয়ে সীমান্ত ছাড়িয়ে বিন্ধ্য পর্বতের নিকট তাঁবু ফেলে অপেক্ষা করছেন। তার আবদার বিষম, এক্ষেত্রে
সন্ধি অথবা যুদ্ধ ছাড়া পরিত্রাণ নেই।


আরো পড়ুন: হেমন্তের অবিরল পাতার মতন । শাহ্‌নাজ মুন্নী


সন্ধি হিসেবে রাজমহিষী ধ্রুবারুপাকে তার চাই। তবেই রামগুপ্ত মুক্তি পাবেন। লিচ্ছবী দুহিতা এবং গুপ্ত সাম্রাজ্যের মহারাণীর রুপ গুণ সমগ্র আর্যাবর্ত্মে আজ গুঞ্জরিত, সেই শোভা দর্শন এবং স্পর্শের জন্য ক্ষত্রপ প্রধান উন্মুখ হয়েছেন। সন্ধির বিপ্রতীপে সবাই যুদ্ধের পক্ষে হলেও স্বয়ং মহারাজ রামগুপ্তই ঘোর বিরোধী। তিনি পত্র পাঠিয়েছেন রাজমহিষী ধ্রুবাকে প্রেরণ করা হোক। তিনি যে কোন শর্তেই মুক্ত হতে চান। রাজপুরুষেরা তাই মন্ত্রণা কক্ষের বৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন।
মন্ত্রণা কক্ষের সুবৃহৎ দ্বার খুলে প্রতিহারী জানালে যুবরাজ চন্দ্রগুপ্ত এসে পড়েছেন। মহারাজ রামগুপ্তের ভ্রাতা, স্বর্গীয় দিগবিজয়ী সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের পুত্র তরুণ যুবা যুবরাজ চন্দ্রগুপ্ত প্রবেশ করলেন। দেওয়াল গিরির মৃদু প্রলম্বিত বিভায় সুপুরুষ যুবরাজের কান্তিময় ছায়া এসে পড়ল। তিনি যুদ্ধের সময় সুদূর পেশোয়ারে গমন করেছিলেন। যুদ্ধ এবং বিপর্যয়ের সংবাদ শুনেই রওনা দিয়েছেন বটে, কিন্তু পেশোয়ার থেকে শিপ্রার উপকূলে উজ্জয়িনী অবস্থান, পৌঁছানো সহজ কথা নয়!

– যুবরাজ চন্দ্রগুপ্ত, আপনি কী স্থির করলেন, মহামন্ত্রী বৈতরিক প্রশ্ন করলেন।, মহারাজ রামগুপ্তের পর একমাত্র আপনিই পরম ভট্টারক দিগবিজয়ী বীর সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের নায্য উত্তরাধিকারী!
যুবরাজ চন্দ্রগুপ্ত প্রথমে রাজগুরুকে প্রণাম জানালেন, তারপর স্থির অথচ দৃঢ গলায় বললেন,

-মহামন্ত্রী, আমার বক্তব্য একটিই যুদ্ধ! আমার মতে, এক্ষেত্রে যুদ্ধই একমাত্র সঙ্গত পথ।

– সত্য যুবরাজ,কিন্তু, এক্ষণে সম্রাটের প্রেরিত পত্রখানি পাঠ করা আবশ্যক। মহামন্ত্রী পাঠ শুরু করলেন…

এমতাবস্থায় “মহারানী ধ্রুবা দেবীকে শক শিবিরে অর্পণ করা ছাড়া কোন উপায় নেই মহামন্ত্রী।, উজ্জয়িনী-র জনগণ শান্তিকামী। কেবলমাত্র একটি নারীর জন্যে সমগ্র আর্যাবর্তকে বিপন্ন করার সম্যক কারণ, কী দর্শায়? সীলমোহর করা পত্র প্রাপ্তি মাত্রই, লিচ্ছবি দুহিতা মহারাণী ধ্রুবরুপাকে অবিলম্বে প্রেরণ করার ব্যবস্থা করবেন।
আদেশ পূর্বক
মহারাজা রামগুপ্তশর্মা।

রাজার পত্র পাঠ করলেন মহামন্ত্রী! মন্ত্রণা গৃহে সূঁচ পড়বার শব্দও শোনা যায়। অদ্য প্রত্যেকে যে যার আসনে প্রস্তরীবত স্থির হয়ে রইলেন।
কেবলমাত্র কুলগুরু গর্জে উঠলেন,
-কিন্ত তাই বলে, মহারানীকে! তিনি রাজবংশের কুললক্ষ্মী, আসমুদ্রহিমাচল বিজেতা সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের পুত্রবধূ। শিউরে উঠলেন রাজগুরু কেশবাচার্যদেব! হে, পশুপতি, উজ্জয়িনী-র মেদিনী কী বীরশূন্য হয়ে পড়ল!

– প্রধান প্রাদেশিক গলার মধ্যে অদ্ভুত শব্দ করে বলে উঠলেন, কিন্তু রাজার আদেশ, শীলমোহর করা পত্র, সামান্য নয়, উপেক্ষা করাও যায় না, গুরুদেব! তিনি এখনো জীবিত আছেন। উজ্জয়িনী তো, বৃজি, নিচ্ছবি নয়, এ রাজ্যে ভাগ্যনিয়ন্তা একমাত্র তিনিই!

সবার স্তব্ধতা ভঙ্গ করে যুবরাজ চন্দ্রগুপ্ত তার শানিত তরবারি বার করে বলে উঠলেন কক্ষনো নয়! দেবীকে অর্পণ করা অসম্ভব! রাজগুরু , মহামন্ত্রী, এবং মহাপ্রাদেশিক, রাজাদেশ যদি পালন করতেই হয় তবে আমি দেবীর সঙ্গে গমন করব। আমি তাঁকে ক্ষত্রপ প্রধানের নিকট পৌঁছাব। যুবরাজ বলে চললেন,

তিনি প্রধানা মহিষী। উজ্জয়িনীর ভাবী রাজমাতা। মহারাজ যদি প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন তবে আমি বিনা তিনি শিবিকায় উঠবেন না, এটা আমার সিদ্ধান্ত। প্রত্যেকে চুপ থাকলেন। এবার দুহাত অগ্রে স্থাপন করে আশীর্বাদ করলেন রাজগুরু। আমি নিশ্চিত ছিলাম বহু পূর্বেই সমুদ্রগুপ্তের প্রকৃত উত্তরাধিকারী আপনি, আজ প্রমাণ হয়ে গেল কুমার।,

– জয়ী হয়ে আসুন। বিজয়ী ভব! দেবাদিদেব পশুপতি আপনার সহায় হোন।

-ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন যুবরাজ, রাজাধিরাজ সমুদ্রগুপ্তের পর কেবল আপনিই এই সমগ্র আর্যাবর্ত্মের যোগ্য উত্তরাধিকারী কিন্তু…। বৃদ্ধ মহামন্ত্রীর দীর্ঘশ্বাস যুবরাজের কর্ণে এড়ালো না। আপনি ক্ষাত্রজাত, স্বধর্ম রক্ষা করুন দেব। মন্ত্রণা গৃহের মধ্যে যেন সহসা স্বস্তির মুক্তবায়ু বহে গেল।

মন্ত্রণাগৃহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যুবরাজ অলিন্দের প্রকোষ্ঠে গমন করে রাজগুরুর জন্য প্রতীক্ষা করতে লাগলেন। তার স্কন্ধে একটি ভারী হাত এসে পড়ল।

– পুত্র চন্দ্র, তোমার সিদ্ধান্ত যথোপযুক্ত, এ বিষয়ে দ্বিধা রেখো না হৃদয়ে,
– কিন্তু গুরুদেব, দেবী ধ্রুবরুপার সম্মতি কী নেওয়া উচিত নয় আমাদের! না জানি তিনি কী ভাবছেন!
গুরুদেব সামান্য হাসলেন এবার। তুমি কী লিচ্ছবির রাজদুহিতাকে সামান্য নারী ভাবছ চন্দ্র! তিনি আর্য নারী, আর্য দুহিতা, যে কোন কঠিন সময় অতিক্রান্ত করার মতো যথেষ্ট যোগ্যতার অধিকারী তিনি! আর তাছাড়া তিনি এই প্রথমবার যুদ্ধ বিনিময়ের মাধ্যম হচ্ছেন না, আশাকরি পূর্বের অভিজ্ঞতাও দেবীর স্মরণে আছে।
– পূর্বের অভিজ্ঞতা? যুবরাজ বিস্মিত হলেন।
– সত্য চন্দ্রগুপ্ত!
তুমি তখন পুরুষুপুরে, লিচ্ছবিরাজ বৃষকেতু সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গে যুদ্ধে পরাস্থ হলে তার অসামান্য রুপসী এবং গুণী কন্যাকে সম্রাটকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন। সম্রাট তখন বৃদ্ধ এবং দুইটি উপযুক্ত পুত্রের পিতা। এবং তিনি তার কনিষ্ঠ পুত্রের সঙ্গে বিবাহ দিতে মনস্থ করেন। কনিষ্ঠ পুত্র তখন পেশোয়ার হতেও দূর হিন্দুকুশ পর্বতের নিকট অবস্থান করছিলেন, কী তাই তো?
– তারপর? চন্দ্র গুপ্ত উদগ্রীব হলেন।

কিন্তু রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করার কালে তিনি গুরুতর পীড়িত হয়ে পড়েন এবং মুমূর্ষু অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঈশ্বর জানেন চন্দ্র, সুস্থ সবল মহারাজার শরীরেও বিষক্রিয়া দেখেছিলেন রাজবৈদ্য। এরপর মহারাজ রামগুপ্ত লিচ্ছবি গমন করেন এবং সেখানে ধ্রুবাকে বিবাহ করেই প্রত্যাবর্তন করেন। তুমি তখন বহুদূরে, এ সমস্ত তথ্য তোমাকে গোপন করার নির্দেশ ছিল। তাই এতোদিন মৌন হয়ে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না আমাদের। আমার ধারণা অসত্য না হলে, এই কথা দেবীর অজানা নয়, কিন্তু তিনি রাজপ্রাসাদে পণবন্দী মাত্র, আপন ইচ্ছায় বিবাহ করেননি কিই বা বলতে পারেন! ধ্রুবাকে কৌশলপূর্বক বিবাহ করেছিলেন আপনার জেষ্ঠ ভ্রাতা সম্রাট রামগুপ্ত! এমনকি আপনার পিতাকেও… কথা শেষ করলেন না গুরুদেব, অন্ধকারেও তার দু চোখে প্রতিহিংসার তীব্র আগুন দেখতে পেলেন যুবরাজ চন্দ্রগুপ্ত।

অতি প্রত্যুষে, শিবিকা রওনা হলেও সীমান্তে উপস্থিত হতে হতে অন্ধকার নেমে এলো। তমসাবৃত গিরি পর্বতের আড়ালে কুমার চন্দ্রগুপ্ত নারীর বেশ ধারণ করার পূর্বে দেবীর শিবিকার পার্শ্বে উপস্থিত হলেন এবং অতি নিম্ন কন্ঠে বাক্যালাপ শুরু করলেন।

দেবী ধ্রুবা আপনি ইচ্ছা করলে এখানে গিরি কন্দরে অবস্থান করতে পারেন, আপনার শিবিকায় আমি গমন করব। অন্যথায় আপনি গমন করলেও করতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে রক্ষা করার সমুদয় দায় আমার উপর ন্যস্ত থাকল, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।

ধ্রুবা সহসা শিবিকার পর্দা উন্মোচন করে দিতেই দুজনেই দুজনকে দর্শন করে বাক্যহারা হয়ে গেলেন। পরমুহূর্তেই যুবরাজ সরে যেতে প্রবৃত্ত হলেই মহারানী বলে উঠলেন,

কিসের লজ্জা আমাদের মধ্যে দেব! আমার লাজ লজ্জা, মান সম্ভ্রম এমনকি জীবন পর্যন্ত আপনার হাতে, আমাকে রক্ষা করতে আপনি চলেছেন শত্রুর নিকট, অথচ যার রক্ষা করার দায়িত্ব তিনি আমাকে প্রত্যার্পণ করতেই ব্যস্ত, বিনিময়ে তিনি তার সিংহাসন ফিরে পাবেন, এই তো সত্য, কুমার! তবে কিসের জন্য এই অবগুণ্ঠন, দুর্বোধ্য প্রহেলিকার মতো প্রাচীর!

কুমার অধোবদন রহিলেন তার হৃদয়ে তখন উত্তাল ঝড় বয়ে যাচ্ছিল, এই দুর্মর, তেজী, দুঃসাহসী, ফুল্ল কুসুমের ন্যায় রুপবতী নারীকে সে কী তার বক্ষে স্থাপন করতে পারবেন কোনোদিন! পারবেন তাকে তার ন্যায় স্থানটি দিতে? হয়ত অন্যায় আকাঙ্খা, তবুও যুবরাজ আকুল হলেন।

ধ্রুবা তার কোমল অধরটি দংশন করলেন।
কোনকালে পিতার পণ রাখতে, লিচ্ছবিকে বাঁচাতে আপনার ভ্রাতার বাহুলগ্না হয়েছিলাম দেব, এখন স্বামী আমাকে পণ করেছেন কুমার! নারী কী কেবল পণের দ্রব্য মাত্র! তার কী ইচ্ছা অনিচ্ছা নেই! কক্ষনো নয় দেবী! আমার পিতা মহারাজ সমুদ্রগুপ্ত, আমার শোণিতে তারই ধারা বয়ে চলেছে৷ আমি অঙ্গীকার করলাম আপনার সম্মানের নিকট আমার সমুদয় সম্পর্ক তুচ্ছ হবে। সর্বাগ্রে আপনি থাকবেন। কোনো অন্যায় আমার প্রাণ থাকতে হবে না! পদ্মপলাশ চোখে বুঝি একটি লহমার জন্য প্রণয়ের মেঘ জমল। যুবরাজ রোমাঞ্চিত হলেন।

উত্তর সীমান্ত শেষ হয়ে, শক শিবিরের নিকটবর্তী হতেই আরো ঘোর তমসা ঘিরে এলো চতুর্দিকে। শকরাজ মদিরা সেবন করে নিদ্রায় যাবেন এমন সময়, মহারানীর আগমন বার্তা পেয়ে গভীর রাতেই তৈরী হলেন দেবী ধ্রুবারুপার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের জন্য।

মদিরাসক্ত শক দলপতি, সামান্য কয়েকজন অনুচর বর্গ এবং রাণীর এক সখীকে আমল দেবার প্রয়োজন ও বোধ করলেন না। ধ্রুবাদেবীকে রাত আরো নিশুত হলে রেশম পট্টবস্ত্র সরিয়ে দেখতে গেলেন মত্ত ক্ষত্রপরাজ। কুমার চন্দ্রগুপ্ত মুহূর্তে তার শাণিত তরোবারি উঠিয়ে এক কোপে উড়িয়ে দিলেন ক্ষত্রপরাজ কিদারার মাথা! চতুর্দিক দিক থেকে বেরিয়ে এলো গিরিকন্দরে লুকিয়ে থাকা রাজধানীর সৈন্যদল। প্রবল যুদ্ধ শুরু হলো দুই পক্ষের। তবে ক্ষত্রপ প্রধানের মৃত্যুর পর সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল বেশির ভাগ।

ধ্রুবা দেবীকে নিয়ে অশ্বের পিঠে উঠিয়ে পরবর্তী শিবিরে এসে ভ্রাতা রামগুপ্তকে নিতে এসেও, অসীম ঘৃণায় তাকে মুক্ত করলেন না! মনে পড়ে গেল মহামন্ত্রী ও রাজপুরোহিতের বাক্য, সর্বোপরি, মহারাণীকে করা অঙ্গীকার! পিতা সমুদ্রগুপ্তের গুপ্ত হত্যা স্মরণে আসতেই যুবরাজ আর পশ্চাতে ফিরলেন না। শক ক্ষত্রপের সৈন্য সামন্ত, সেনাপতি লুন্ঠনের বহু মূল্যবান রত্নরাজি ফেলে দিয়েই পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছে, তারা ফিরে আসা পর্যন্ত মহারাজ জীবিত থাকলে তারা নিশ্চয় প্রতিশোধ না নিয়ে গমন করবে না।

রাত্রি অতিক্রান্ত। বহু শক সেনা সংঘর্ষে মৃত এবং ছত্রভঙ্গ। ততক্ষণে রাজধানী থেকে আরো সৈন্যদল এসে যোগ দিয়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। তারাও গুপ্ত স্থানে লুকিয়ে ছিল গিরিমুখে, সংকেত ধ্বনি শুনে সবাই যোগদান করেছে। রাজধানীতে প্রত্যাগমনের যাত্রাকালে শিবির থেকে নিষ্ক্রান্ত হবার পর হঠাৎ মহারাণী ধ্রবাদেবী বললেন, কুমার আমার এক অতি মহার্ঘ বস্তু শিবিরে ফেলে এসেছি! পরের হস্তে পড়লে যে অতি বিপদজনক হবে দেব! বলেই অশ্বের রশ্মি স্বয়ং টেনে ধরলেন। ক্ষনিকের জন্য যুবরাজ চন্দ্রগুপ্তের অধরে সামান্য হাসি দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল।

শিবিকায় প্রবেশ করে তাঁর স্বামী বন্দী মহারাজ রামগুপ্তের মুখোমুখি হলেন লিচ্ছবি দুহিতা মহারানী ধ্রুবারুপা। রামগুপ্ত আনন্দে অধীর হয়ে উঠলেন।

– আমি নিশ্চিত ছিলাম পূর্বেই প্রিয়া, তুমি অন্তত আমায় মুক্ত করে নিয়ে যাবে উজ্জয়িনী-তে রাজপ্রাসাদে! রাজপ্রাসাদে প্রত্যাবর্তন করে সর্বাগ্রে আমি কৃতঘ্ন চন্দ্রগুপ্তকে হত্যা করবো।৷ বাক্য শেষ হতে না হতেই, কষিতে গোঁজা ছুরিকা বার করে রাজ মহিষী ধ্রুবা নির্ভুল লক্ষ্যে ছুঁড়লেন। ছুরিকা তুমুল ভাবে বিঁধে গেল মহারাজ রামগুপ্তের বক্ষপঞ্জরে।

– কি সে মহার্ঘ বস্তু দেবী! দেখি! আপনি প্রত্যাবর্তন জন্য এতো ব্যগ্র ছিলেন ! চন্দ্রগুপ্ত স্মিত হাসলেন।
ধ্রুবা কৌতুকের হাসি হেসে বললেন, সংগ্রহের অভিলাষা ছিল বটে কুমার, কিন্তু পরে মনে হলো এতদূর পথ অনর্থক বহন করেই বা কী লাভ!

চন্দ্রগুপ্ত প্রত্যুত্তরে অর্থপূর্ণ হাসলেন শুধু। অশ্ব ছুটে চলল দুর্বার গতিতে উজ্জ্বয়িনী অভিমুখে।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত