| 26 এপ্রিল 2024
Categories
ইতিহাস

ইরাবতী ইতিহাস: ক্যালেন্ডারের ইতিকথা । জয়জিৎ দে

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

ক্যালেন্ডার বা দিনপঞ্জি আমরা সবাই ব্যবহার করি। নতুন বছর ২০২২ সবে পড়েছে, হয়তো আমরা ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করে ফেলেছি নতুন বছরের ক্যালেন্ডার, বা সংগ্রহ করবো। একটা সময় লম্বা লম্বা দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডার খুব জনপ্রিয় ছিলো, তারপর এলো ফোল্ডেড ছোটো টেবল ক্যালেন্ডাররা।এখন অবশ্য ডিজিট্যাল যুগে মুঠোফোনের মধ্যেই ক্যালেন্ডার, যা নিজে নিজেই আপডেট হয়ে যায়। তাও, কাগজের ছাপানো ক্যালেন্ডার আমাদের সকলের জীবনেই একটা বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। এখনো বাড়ির বহু বয়স্ক সদস্যরা দিন আর তারিখের ব্যাপারে কাগজে ছাপানো নানান রকম রং বেরঙয়ের চিত্রিত ক্যালেন্ডারের ওপরই নির্ভর করে থাকেন, প্রতিটা মাস শুরু আর শেষের দিনগুলো দাগিয়ে রাখেন। একটা সময় মানব সভ্যতা জানতোই না লিখিত ক্যালেন্ডারের অস্তিত্ব, শুধুমাত্র আকাশের নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তন দেখে মনে মনে হিসাব করে চালিয়ে নিতো দিন, মাস, বছরের হিসাব। তারপর ধীরে ধীরে সভ্যতা যত এগোলো মানুষ শিখলো লিপিবদ্ধ দিনপঞ্জীর ব্যবহার। পৃথিবীর নানান দেশে ভৌগোলিক অবস্থানের নিরিখে নানা রূপে ধরা দিলো সেইসব ক্যালেন্ডাররা। ইতিহাসের পাতা থেকে আজ সেরকমই দেখে নেওয়া যাক নর্স ক্যালেন্ডারের জন্ম কথা।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,ক্যালেন্ডার
অঙ্কিত মিশরীয় ক্যালেন্ডার; Image source: EXQUISIT

প্রথমেই বলে রাখি বর্তমানে যে ক্যালেন্ডার আমরা ব্যবহার করি সেটা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার, যার উৎপত্তি রোমে। পত্তন করেন পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি ১৫৮২ সালে এবং এই ক্যালেন্ডার পুরোপুরি ভাবেই ক্রিসচিয়ান ইনফ্লুয়েন্স কে অগ্রাধিকার দিয়ে বানানো। তার আগে প্রচলিত ছিলো জুলিয়াস সিজার কতৃক প্রবর্তিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। ইউরোপে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রসারের আগে বিভিন্ন দেশে যে তাদের নিজস্ব ধর্ম প্রচলিত ছিলো তাদেরকে বলা হতো পেগান ধর্ম, এইসব ধর্ম একেশ্বরবাদী নয়, বহু দেবদেবীদের নিয়ে গঠিত এবং এদের মধ্যে মূর্তিপুজোর প্রচলন ছিলো। যেমন প্রাচীন নর্স ধর্মে আমরা পাই থর, ওডিন, লোকি, টিয়ার, ফ্রেয়ে, হাইমডাল ইত্যাদি নানান দেবদেবীদের কথা আর এইসব দেবদেবীদের উপাসনার জন্য ধার্য করা ছিলো বছরের বিশেষ বিশেষ ঋতু, দিন বা সময় যাদের নাক্ষত্রিক অবস্থান নির্ণয়ের ভিত্তিকে প্রাধান্য দিয়ে নির্মিত হয়েছিল তাদের নিজস্ব দিনপঞ্জি। পরবর্তীকালে কালের নিয়মে খ্রিস্টধর্মের ব্যাপক প্রসার ও জনপ্রিয়তায় এইসব প্রাচীন পেগান ধর্মের অবলুপ্তি ঘটলেও, বহুক্ষেত্রেই বিভিন্ন দেশ যত্নে লালন করে চলেছিল তাদের পুরোনো অস্তিত্বের শিকড়টাকে। এরকমই প্রায় অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত নর্স রীতি মেনে তৈরী করা আইসল্যান্ডিক ক্যালেন্ডার তার স্বমহিমায় বিরাজ করেছিল ইউরোপে এবং সেই ক্যালেন্ডারের সুবাদেই আমরা ধারণা পেয়েছি যে প্রাচীন জার্মেনিক সংস্কৃতির প্রচলিত দিনপঞ্জি আদতে কেমন ছিলো ।

প্রাচীন নর্স ক্যালেন্ডারে সমগ্র একটা বছরকে সমান দুভাগে ভাগ করা হয়েছিল দুটো ঋতুতে – গ্রীষ্ম এবং শীত। সূর্যের আয়নায়ন কে এক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও, ভাইকিং জনজাতি প্রথম চান্দ্রমাস কে ভিত্তি করে প্রচলন করে নতুন মাস গননা পদ্ধতির, যেখানে চন্দ্রকলার হ্রাস বৃদ্ধি কে মাথায় রেখে প্রথম বারো মাসে বছর তৈরী করা হয় এবং প্রতি মাসকে তিরিশ দিনে। এখানে এক পূর্ণিমা থেকে পরের পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়কালকে প্রধান বিবেচ্য হিসাবে ধরা হতো। প্রতি চারটে গ্রীষ্ম অন্তর অন্তর চারদিন করে অতিরিক্ত ধরা হতো, যেটা থেকেই বর্তমানের লিপ ইয়ারের কনসেপ্ট শুরু হয়, এবং সেই চতুর্থ গ্রীষ্মকে বলা হতো সামারাউকি।
নর্স ক্যালেন্ডারের মাসগুলো ছিলো :
নেট্যল ই য়াসি ( বা গ্রীষ্ম ঋতুর মাস )
১. হার্পা : মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে। এই মাসের প্রথমদিন পালিত হতো ‘ সিগরব্লউট ‘ উৎসব যা ছিলো মূলত শীতের ওপর গ্রীষ্মের জয়সূচক অনুষ্ঠান বা বছর পয়লার উৎসব। এই দিনটা উৎসর্গ করা ছিলো দেবী ফ্রেয়ার নামে।
২. সক্লার্পলা : মধ্য মে থেকে মধ্য জুন
৩. সৌলমেনুডজর : মধ্য জুন থেকে মধ্য জুলাই
৪. হেয়ান্নির : মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট ( এই মাসে হার্ভেস্ট ডে তথা haymaking পালন করা হতো।
৫. (জ)ভেমেনুডজর : মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর
৬. হাউস্টমেনুডজর : মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর
সস্ক্যামডইগি ( বা শীত ঋতুর মাস )
১. গরমেনুডজর : মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর, মূলত যা ছিলো শিকারের মাস।
২. য়িলের : মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর। এই সময়টাকে বলা হতো ইউল মান্থ। এই ইউল ছিলো প্রাচীন ক্রিসমাসের সমার্থক। বছরের এই সময় দেবতা ওডিনের নামে ‘জোলনির’ বা ‘ য়লনির ‘ উৎসব পালন করা হতো।
৩. মৌরসুগুর : মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি। এই সময়টায় মারাত্মক রকম শীত পড়তো বলে কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব ছিলো না। তাই এইসময় শিকার করা পশুর চর্বি ছাড়িয়ে সেগুলো খাওয়া হতো যাতে শরীর সেই প্রচন্ড ঠান্ডায় গরম থাকে। ‘ মৌরসুগুর ‘ নামের অর্থই হল ‘ দ্য ফ্যাট সাকিং মান্থ ‘।
৪. থ(পৌ )রি : মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী। এইসময়টা চারিদিকে সাদা বরফে ঢেকে যেত এবং দেবতা থরের নাম থেকে এই মাসের নামকরণ। এই মাসে ‘ হাসব্যান্ড’স ডে ‘ পালন করা হতো অর্থাৎ সেই উৎসবে সব বাবা ও স্বামীদেরকে সম্মান জানানো হতো।
৫. গ্যয়া : মধ্য ফেব্রুয়ারী থেকে মধ্য মার্চ। গ্যয়া বা উইন্টার স্পিরিটের নাম থেকে মাসের নামকরণ। এই মাসে ‘ গুঁওবলৌট ‘ বা ‘ ওয়াইফ’স ডে ‘ উৎসব পালন করা হতো অর্থাৎ সেই উৎসবে সমস্ত মায়েদের ও স্ত্রীদের কে সম্মান জানানো হতো।
৬. আইনমেনুডজর : মধ্য মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল। নামের অর্থ ‘ শীতের শেষ মাস ‘

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত