| 26 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদিত গল্প ধারাবাহিক

মহানগরের নয়জন নিবাসী (পর্ব-১০) । ডঃদীপক কুমার বরকাকতী

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, Assamese literature Dipak Kumar Barkakati 1মিজোরামের আইজল শহরের পদার্থ বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডঃদীপক কুমার বরকাকতী (১৯৪৮) অসমিয়া সাহিত্যের একজন সুপরিচিত এবং ব্যতিক্রমী ঔপন্যাসিক। আজ পর্যন্ত আটটি উপন্যাস এবং দুটি উপন্যাসিকা,অনেক ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাছাড়া শিশুদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তারই ইংরেজি ভাষার একটি নতুন দিল্লির চিলড্রেন বুক ট্রাস্ট থেকে ১৯৯২ সনে প্রকাশিত হয়। দেশ-বিভাজন,প্রব্রজন ,ভেরোণীয়া মাতৃত্ব (ভাড়াটে মাতৃত্ব), ধর্ম এবং সামাজিক বিবর্তন ইত্যাদি তাঁর উপন্যাসের মূল বিষয়। আলোচ্য ‘মহানগরের নয়জন নিবাসী’উপন্যাসে ১৯৩২ সনে স্টালিনের বিরুদ্ধে লেলিনগ্রাডের নয়জন টলস্টয়বাদী গান্ধিজির অহিংসা নীতির দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে করা আন্দোলনের ছবি ফুটে উঠেছে। তাঁর ইংরেজি ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ দুটি হল From Valley to Valley (Sahitya Akademi,New Delhi ,2010) এবং The Highlanders(Blue Rose Publishers, New Delhi,2010)। বাংলা ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ ‘স্থানান্তর’ (অর্পিতা প্রকাশন,কলকাতা,২০০৭)। বাসুদেব দাসের অনুবাদে ইরাবতীর পাঠকদের জন্য আজ থাকছে মহানগরের নয়জন নিবাসীর পর্ব-১০।


 

 

 

মস্কোতে ফিরে আসা পর্যন্ত ফিয়োডরের মনের পরিবর্তন হল। সে লেনা অঞ্চলের য়াকুরিম গ্রামে যাওয়ার চেয়ে প্রথমে লেনিনগ্রাডে যাওয়া  মনস্থ করল।

ফিয়োডর সারাটা পথ কিছু কথা ভাবতে ভাবতে এল। ঠাকুরমা পপভনার সঙ্গে সম্বন্ধ সে লেনিনগ্রাডে বড় হওয়া ডিমিট্রি গরিন পরিবারের সঙ্গে বড় ঘনিষ্ঠ ছিল। তিনিই তার পিতা ইভান লিঅ’নিড’ভিছকে তাদের ওখানে রেখেছিলেন। তাছাড়া মা ওলগা পেট্রভনা তাকেও সেই পরিবারের সঙ্গে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করায় ঠাকুমার নাদিয়া পপভনা  একটা চিঠি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন এবং সেই জন্যই ডিমিট্রি গরিনের পরিবার মারিয়া এন্টনভনাই তাকে সাদরে গ্রহণ করেছিল।

ফিয়োডর নাটালিয়াকে  বলল–’ নাটালিয়া  আমি একটা কথা ভাবছি। য়াকুরিম  গ্রাম তো অনেক দূরে । সেখানে গিয়ে ঠাকুরমার খোঁজ করার আগে আমাদের আরও একটু তৈরি হয়ে  নিতে হবে।

নাটালিয়া জানে লেনা অঞ্চলে থাকা য়াকুরিম গ্ৰাম সত্যিই বহুদূরে। অতি দ্রুতগামী ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলপথেই পূর্ব দিকে থাকা এই অঞ্চলে তিন চার দিনের যাত্রা। কিন্তু সেখানে যাবার আগে আরও কীভাবে একটু তৈরি হয়ে নিতে হবে সে কথাই সে বুঝতে পারল না। তাই ফিয়োডরের মুখের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল–’ তৈরি? কীভাবে তৈরি হতে হবে?’

সে বলল–’ তৈরি মানে আমাদের ঠাকুমার বিষয়ে আরও কিছু জেনে নিতে হবে। তার জন্য লেনিনগ্রাডে যেতে হবে। ডিমিট্রি গরিন পরিবারের বাড়িতে যেতে হবে। আমি সেখানেই বড় হয়েছিলাম নাটালিয়া।’

ফিয়োডর বলল– ঠাকুরমা মারিয়া নেই।কাকা ডিমিট্রিও অনেক আগেই মারা গেছেন– আমি সেখানে যাবার আগে। দাদা গেভরিল সুরঙ্গ খনন আর বানানোর কাজ করত। তিনি আমি যাবার এক  বছর আগেই সেখানে ভূমিস্খলন হয়ে চাপা পড়ে যায়। কিন্তু বৌদি বারবারা গ্ৰিগরয়েভনা টানিয়া এবং ঠাকুরমা মারিয়াকে নিয়ে ছিল । টানিয়া তখন তেরো বছরের। পুরুষ মানুষ না থাকা বাড়িটিতে আমাকে নিয়ে যখন গিয়েছিল বৌদি বারবারা এবং ঠাকুরমা আমাকে সাদরে গ্রহণ করলেন। তাছাড়া ঠাকুরমা নাদিয়া পপভনার চিঠি তো সঙ্গে ছিলই।’

ফিয়োডর জিজ্ঞেস করল–’ তুমি লেনিনগ্রাডে  যাবে কি?’

তার প্রশ্ন শুনে  নাটালিয়ার  রাগ হল। বলল–’ তুমি কেন জিজ্ঞেস করছ?’

সে বলল–’ কারণ তুমি আমার সঙ্গে এতদিন ঘুরে বেড়িয়েছ। তাছাড়া লেনিনগ্রাড হল পশ্চিমে।

য়াকুরিম গ্রামে আমাদের পূব দিকে যেতে হবে। তোমার এমনিতেই কষ্ট হবে। মস্কোতে কয়েকদিন বিশ্রাম নিতে পারবে।’

নাটালিয়া বলল–’ফিয়োডর, আমরা এই দুই তিন মাস কেসটা সমাধান করার জন্য একসঙ্গে ঘোরাফেরা করিনি কি? আমি এখন এক মুহূর্তও তার থেকে দূরে সরে থাকতে চাই না। তাছাড়া মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নাম কীভাবে জড়িয়ে পড়ল তার আদি-অন্ত এখনও জানতে পারিনি। সে কথা এখনও চাপা পড়ে আছে। আমরা বিচার করেও দেখি নি। করার মতো সুবিধাও পাইনি।’

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে সে পুনরায় বলল–’ তাছাড়া কেসটা লেনিনগ্রাডের। তুমি জান আমি লেনিনগ্রাড দেখিনি। কলা –সংস্কৃতির কেন্দ্র বলে জায়গাটার কথা এত শুনেছি যে আমি দেখার জন্য আকুল হয়ে আছি। তোমার মহানগরতো।’

ফিয়োডর নাটালিয়ার দিকে তাকাল। তার গম্ভীর মুখটা দেখে সে ভেতরে ভেতরে মজা পেল। মুখে দুর্লভ মুচকি হাসি ছড়িয়ে সে বলল-‘ আচ্ছা, তুমিও যাবে। মহানগর দেখবে। তাছাড়া আমরা দুজনেই অধ্যাপিকা পলিনা আন্ড্রেয়েভনা পেট্রভাকোর সঙ্গেও দেখা করতে পারব।’

নাটালিয়ার মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ল।

এক সপ্তাহ পরে ফিয়োডর এবং নাটালিয়া রেলপথে লেনিনগ্রাডে উপস্থিত হল। মস্কো থেকে লেনিনগ্রাড পৌঁছানোর জন্য ওদের পাঁচ ঘন্টা সময় লাগল।

লেনিনগ্রাড পাওয়ার  একটু আগে ফিয়োডর বলল–’ নাটালিয়া, টলস্টয়ের ‘ দুজন হুসার’ নামের উপন্যাসিকাটির শুরুটা  তোমার মনে আছে কি? সেই যে উনিশ শতকের শুরুতে মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ পর্যন্ত মানুষ ঘোড়ার গাড়ি গুলিতে খুচরো মালপত্র, রান্নার সরঞ্জাম ইত্যাদি বোঝাই করে নিয়ে কীভাবে যাত্রা করেছিল –তার বর্ণনা, কত দিন লেগেছিল তার উল্লেখ? তাদের নাকি ধূলিময়, কখনও কাদায় পরিপূর্ণ এই পথটুকু অতিক্রম করতে আটদিন আট রাত  লেগে যেত। আমাদের লাগল প্রায় পাঁচ ঘন্টা।

নাটালিয়া সায় দিল এবং নামার জন্য প্রস্তুত হল। লেনিনগ্রাড স্টেশনে নেমেই সে এই সেপ্টেম্বর মাসে মস্কোর চেয়ে বেশি শীত  অনুভব করল। বাইরে এসেই লোকজনের চলাফেরা, গাড়ি- মোটর- ট্রাম- বাস প্রশস্ত পথ -ঘাট, প্রণালী, সেতু এবং আলোর মেলায় পাশের দালানগুলির দৃশ্যে  নাটালিয়া অনুভব করল মহানগরের একটি বিশেষ বাতাবরণ। সে উত্তেজনায় একটা মৃদু কম্পন অনুভব করল। সে যেন  আনন্দ অনুভূতিতে মূক বধির হয়ে পড়ল। সে গায়ের জ্যাকেটটার জীপটা গলা পর্যন্ত টেনে দিয়ে চারপাশটা দেখতে লাগল।

ফিয়োডর নাটালিয়াকে বাসে করে নিয়ে গিয়ে কয়েকটি সেতু পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হোস্টেলে নিয়ে গেল। সে নিজেও মাঝেমধ্যে এসে থাকার মতো হোস্টেলের একটি ঘরে থাকার জন্য গেল। যাবার সময় সে বলে গেল–’ এখন সেপ্টেম্বর মাস। ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। এখনকার শীত মস্কো থেকে অগ্রগামী এবং দীর্ঘকালীন।’

কথাটা বলার সময় ফিয়োডর লেনিনগ্রাডের অক্টোবর মাসের আবহাওয়ার কথা ভেবে গেল। ততদিনে ঘরের টুই, উঠোন, পথঘাট এবং গাছের ডাল পাতাগুলি বরফের পাতলা আস্তরণে ঢাকতে শুরু করে। মাঝেমধ্যে তুষারপাত হবে। পরবর্তী ছয় মাস সাদা রং লাভ করা গাছগুলি ডালপালা নিয়ে আকর্ষণীয়ভাবে পথের পাশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে। এপ্রিল মাস থেকে বরফ গলতে শুরু করবে এবং মে মাসের মধ্যে গাছগুলিতে  নতুন নতুন পাতা গজিয়ে পরবর্তী মাসে সবুজ পাতায় ঝলমলে হয়ে নানা রঙের ফুল ফুটে লেনিনগ্রাডে ক্ষণিকের জন্য বসন্ত নামিয়ে আনবে।

চলার পথে ফিয়োডরের মনে  পড়ল ১৭০৩ সনে মহান পিটার সুইডেন থেকে যুদ্ধে জয় লাভ করে নেভা নদীর এই বদ্বীপ অঞ্চলের জলা জায়গায় সেন্ট পিটার্সবার্গ নামে নগরটি স্থাপন করার কথা। তারপরে ১৭১২ সন থেকে ১৯১৮ সন পর্যন্ত এই দুশো বছরের কালই জারদের রাজধানী থাকার কথাও তার মনে পড়ল। প্রথম মহাযুদ্ধের শুরুতে ১৯১৪ সনে জার্মানি রাশিয়া আক্রমণ করায় শহরের নামটি বদলে পেট্রগ্ৰাড করা হয়েছিল । পুনরায় ১৯২৪ শনে লেনিনের মৃত্যুর পরে শহরটির নাম লেনিনগ্রাডে  পরিবর্তিত করা হয়েছিল। কিন্তু তার বহু আগেই শহরটির দুশো বছরের ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এখানে ভিন্ন ভিন্ন ঘর দুয়ার প্রাসাদ অট্টালিকা রাজমহল গড়ে উঠেছিল শহরটির মূল দ্বীপটিতে পিটার এবং পল  নামের দুটি দুর্গ তৈরি করা হয়েছিল । এর বেছিলিকায় অনেক রোমান’ভ জারকে কবর দেওয়া হয়েছিল । নেভা নদীর কোন পারে তৈরি হয়েছিল মহান পিটারের ঘোড়ায় উঠে থাকা একটি সুউচ্চ প্রস্তর মূর্তি। এখন যাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা  সেন্ট ইজাকের ক্যাথেড্রালটা ইজাক মার্গে সোনার কলস দিয়ে প্রায় ১০০ মিটার উঁচু করে তৈরি করা হয়েছিল ।

ফিয়োডরের ভালোলাগা মহানগরটির অন্য দুটি অট্টালিকার একটি হল শহরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মহান পিটার মনোমুগ্ধকর ফোয়ারায় তৈরি করা তাদের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ — পেএডভরেটসটা– পিটারের প্রাসাদটা। অন্যটি হল জারিনা ক‍্যথারিনের   তৈরি হয়ে ওঠা শীত প্রাসাদ– উইন্টার প‍্যালেসটা। ১৯১৭ সনের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই প্রাসাদটিতেই দ্বিতীয় জার নিকোলাস বাস করতেন ।

এই মহানগরটিকে নিয়ে আরও অনেক কথা আছে। এই সমস্ত কিছুই ফিয়োডরের মানসপট  দিয়ে তীব্র গতিতে পার হয়ে গেল।

নাটালিয়াকে হোস্টেলে রাখার সময় সে তাকে বলল–’ আমি তোমাকে শহরটির বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলব। তাছাড়া বিকেল বেলায় ডিমিট্রি গরিন পরিবারের বাড়িতে যাবার আগে সকালবেলা মহানগরটির কিছুটা আভাস নেব এবং সকাল বেলা অধ্যাপিকা পলিনা আন্ড্রেয়েভনার সঙ্গে আমরা দেখা করব।’

পরের দিন সকালের আহার খেয়ে ফিয়োডর নাটালিয়ার সঙ্গে দেখা করল। সেও আহার করে প্রস্তুত হয়েছিল। বাইরের এখানে সেখানে গাছপালা এবং বাগানগুলির ওপরে  পরা  স্ফটিকের মতো তুষারের পাতলা স্তরগুলি তাকিয়েছিল।

ফিয়োডর বলল–’ ভিড় আরম্ভ হওয়ার আগে মহানগরটির   কিছু আভাস নিয়ে নেওয়াটা ভালো হবে,নয় কি নাটালিয়া? ততক্ষনে বরফের আস্তরণ ও গলে শেষ হয়ে যাবে।

সে মহানগরের কথা বলে বলে নাটালিয়াকে নেভা নদীর দক্ষিণ পারের  প্রধান অংশগুলিতে  নিয়ে গেল। নিয়ে গেল ব-দ্বীপ  সংযোগী বিভিন্ন প্রণালীর ওপরের সেতুগুলি , পাথরে বাঁধানো নদী এবং প্রণালীর তীরগুলি, তাতে থাকা লোহার রেলিংগুলি  এবং সেই অতীতে  তৈরি পাথরের পদপথ গুলির ওপর দিয়ে ।

রেলিংয়ের পাশে পাশে পায়েচলা পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফিয়োডর নাটালিয়াকে বলল – নাটালিয়া, মহানগরটিতে  অনেক কিছু দেখারআছে– নেভা এসপ্ল্যানেড, নেভস্কি  প্রসপেক্ট– মানে নেভস্কির মুক্ত প্রাঙ্গণ ,তার আশেপাশে থাকা অত্যন্ত বিলাস পূর্ণ আবাসিক এলাকা , মার্চোভো ময়দান, শীত এবং গ্রীষ্মকালীন রাজপ্রাসাদ, পুশকিন থিয়েটার, সল্টিকভ -শ্বেড্রিন  গ্রন্থাগার, হার্মিটেজ জাদুঘর এবং তার সামনে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে বিজয়ের চিহ্নস্বরূপ তৈরি করা বিজয় গম্বুজ । এর উল্লেখের শেষ নেই।’

সে বলল–’ আমি এই মহানগরের যদিও, এর সমস্ত কিছু দেখেছি বলতে পারব না। কারণ প্রায় একশোটা ব-দ্বীপ এবং প্রায় সাতশো  সেতু দিয়ে সংযোগী এই মহানগরটি বড় বিশাল। তাছাড়া মহানগরটিতে ছয় হাজারের মতো রাজমহল আছে। তারই দুশো বিশাল মহল মহানগরের কেন্দ্রস্থল নেভা নদীর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে । আগামী কয়েকদিন তোমার সঙ্গে আমিও এইসব দেখব ।’

ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হল। তার আগে ওরা দুপেয়ালা কফি খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে থাকা চৌহদ ফিয়োডররা যাওয়া পর্যন্ত যৌবনের ঐশ্বর্য ধীরে ধীরে প্রাণ পেয়ে উঠেছিল। সুউচ্চ মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সঙ্গে নাটালিয়া  যদিও অভ্যস্ত লেনিনগ্রাড স্টেট ইউনিভার্সিটির অট্টালিকায় ও একটি বিশেষত্ব সে উপলব্ধি করল।ফিয়োডর পরিচিত পরিবেশের মধ্য দিয়ে অধ্যাপিকা পলিনা আন্ড্রেয়েভনা পেট্রভার ঘরে নাটালিয়া কে নিয়ে গেল।

অধ্যাপিকা তার রুমেই ছিলেন।

ফিয়োডর নাটালিয়াকে অধ্যাপিকার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তারা করতে থাকা তাদের কাজের কথা বলায় পলিনা আন্ড্রেয়েভনা পেট্রভার দুই চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। বললেন–’ নাটালিয়া তোমার কথা শুনে খুব ভালো লাগল। আমাদের অতীতের প্রবাদ– মেয়েরাই পৃথিবীর অর্ধেকটা  ধরে রাখে – মনে রাখবে ।’

তিনি বললেন–’ আমাদের মেয়েদের জীবনই আমাদের উন্নতির প্রতিবন্ধক।  সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। না হলে অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। হোমমেকার হয়ে থাকলে তুমি মেইনস্ট্রিমের বাইরে থেকে যাবে।’

‘ সেদিন’– অধ্যাপিকা বলে গেলেন–’ একটা সেমিনারে হওয়া অভিজ্ঞতার কথা বলছি শোনো। সেমিনারটি ছিল মহিলাদের বিজনেস ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে। সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের, প্রধানত ইউরোপীয় দেশের অনেক প্রতিনিধি এসেছিল। বেশিরভাগই ছিলেন মহিলা। সেখানে একটি দেশের একজন মহিলা বললেন–’ আমি এখান থেকে সবসময় ইংরেজি ভাষায় ডিয়ার স্যার বলে চিঠি পাই। ডিয়ার ম্যাডাম বলে সম্বোধন করা চিঠি পাওয়ার অপেক্ষায় এখনও পথ চেয়ে  রয়েছি।’

অধ্যাপিকা মুচকি হেসে বললেন–’ আমাদের জেন্ডার ইকুয়ালিটি কবেই স্থির হয়ে গেছে। তবু আমাদের  মেয়েরা কোনো মহিলাও যে কোনো কোম্পানির সি ই অ হিসেবে থাকতে পারে সে কথা ভাবার এখন ও সময় হয়নি।’

অধ্যাপিকার সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত ফিয়োডর হেসে বলল–’ ম্যাডাম, আমিও আপনাদের সঙ্গে বসে রয়েছি। কেবল মেয়েদের নিয়ে কথা বলবেন না।’

পলিনা আন্ড্রেয়েভনা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন–’ না,না ফিয়োডর আমি নাটালিয়াকে উৎসাহিত করতে চাইছি। সঙ্গে তোমাকেও ধন্যবাদ দিতে চাইছি, কেননা তুমি তাকে একটা বিশেষ কাজের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছ।’

‘ও’– তিনি বলে গেলেন–’ তোমরা তো’ লেনিন গ্রাডের নয়জন নিবাসী’র কেসটা অধ্যয়ণ করছ। এই টলস্টয়বাদীরা নিশ্চয় একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভূমিকা নিয়েছিল । আমরা লেনিনগ্রাড বাসীরা এদের নিয়ে গর্ব করার যথেষ্ট কারণ আছে । এই গর্ব করতে পারা বিষয়ের তালিকা অনেক দীর্ঘ । যাই হোক না কেন ‘– তিনি নাটালিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন–’ তুমি মহানগর ভালোভাবে দেখেছ কি?’

নাটালিয়া  বলল–’ গত কালই এসেছি। আজ সকালের দিকে দু ঘন্টার মতো খালি আভাস  নিয়েছি।’

‘ দেখবে, ভালোভাবে দেখবে।’– অধ্যাপিকা বললেন–’ রোমের ক্ষেত্রে যেমন একটি আপ্তবাক্য রয়েছে, তেমনই আপ্তবাক্য  এই মহানগরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একশোটি ব-দ্বীপ সাতশো সেতুর দ্বারা জড়িয়ে থাকা ছয়  হাজার প্রাসাদ একদিনে গড়ে উঠেনি। এই শহরটি মহান পিটার আঠারো শতকের প্রথম দশকে তৈরি করে, রাজধানী এখানে এনে ইউরোপীয় জনজীবন এবং সংস্কৃতিকে আমাদের খুব কাছে নিয়ে এসেছে। এর আগে শতেরো শতকের শেষের দশকে মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে তিনি কয়েক মাস ধরে পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণ করে সেখান থেকে বহু শিক্ষা নিয়ে এসে এখান থেকেই সংস্কার সাধন করলেন। মধ্যযুগের গন্ডি থেকে মুক্ত করে আধুনিক যুগের দরজায় আমাদের উপনীত করালেন। মানুষগুলিকে অতীতের ঢিলেঢালা পোশাক বাদ দিয়ে ইউরোপের অন্য মানুষের মত সাজ পোশাক করতে তিনি বাধ্য করলেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের এবং অভিজাত শ্রেণীর মানুষদের গ্রামের চাষাদের মতো দাড়ি রাখাটা  বন্ধ করলেন। কেউ আপত্তি করলেও জোর করে দাড়ি কামিয়ে দিলেন। অবশ্য চাষাদের সঙ্গে ধর্মযাজকরা দাড়ি রাখতে পারবে বলে অনুমোদন জানালেন।’

তিনি বললেন–’ পশ্চিমের প্রযুক্তিবিদ এনে তিনি কারিগরি এবং ঔদ্যোগিকবিদ্যার উন্নতি সাধন করলেন। তার দ্বারা তিনি সামরিক এবং নৌ বাহিনী উন্নত করার সঙ্গে বিভিন্ন ধাতু এবং বয়ন উদ্যোগও স্থাপন করলেন।’

অধ্যাপিকার মুখাবয়বে প্রজ্ঞার কমনীয়তা প্রকাশ পেল। তিনি বলে গেলেন–’ তখনকার ব্যবসা কেন্দ্র ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গ। দক্ষিণ থেকে উত্তরে জিনিসপত্র, কাঁচামাল পত্র নৌপথে পরিবহন করার সুবিধার জন্য মহান পিটার ভল্গা  এবং নেভা নদী সংযোগী প্রণালীগুলি সেই  তখনই খনন করিয়েছেন।’

তিনি বললেন–’ এই মহান পিটারই নতুন ধরনের পাঠশালা স্থাপন করেন। গণিত ,পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন বিজ্ঞানের পাঠ্যপুথি রুশ ভাষায় ছাপিয়ে সেগুলির দ্বারা শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করলেন। তিনিই প্রথমবারের জন্য এখানেই অ্যাক্যাডেমি অফ সাইন্স স্থাপন করলেন।’

‘ আর মহিলাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে’– পলিনা অ্যান্ড্রেয়েডনা  বললেন–’ তিনি বিশাল অবদান রেখে গেলেন। ভালো ঘরের মেয়েকে বিদেশে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। তাছাড়া মেয়েদের জন্য বিশেষ পাঠশালাও স্থাপন করলেন।’

‘ পিটারের মৃত্যুর পরে’– অধ্যাপিকা বলে গেলেন–’ এলিজাভেটা রাজপাটে বসলেন। তিনি ফরাসি ভাষা এবং ফরাসি আচার-ব্যবহার শিখেছিলেন। ইতালিয়  সংগীতের ও তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন, পরিবেশন করেছিলেন। তাছাড়া তার রাজ্যাভিষেকে জার্মান অভিনেতার আনন্দ অভিনয় প্রদর্শনে অনুমোদন জানিয়েছিলেনতিনিইএখানেপ্রথমঅপেরাহাউস, রাশিয়ান থিয়েটার  স্থাপন করেছিলেন। সঙ্গে এই লেনিনগ্রাড– অর্থাৎ তখনকার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকেই মস্কোতে ইনভারসিটি স্থাপন করেছিলেন।’

‘ আর সঙ্গে’– তিনি বললেন– সামাজিক ব্যবস্থার ও অভাবনীয় ভাবে পরিবর্তন করেন। পরিবার এবং মেয়েরা মুক্ত হল। পুরুষেরা দুর্গ এবং বাসস্থানে আবদ্ধ করে রাখতে পারলেন না। আনন্দ উৎসবের সম্মিলিত যাত্রায় ভালুকদের রাজপথে আনাটা বন্ধ করলেন। তার প্রায় উনিশ বছর কাল শাসনকালে একজনকেও ফাঁসি দেওয়ার অনুমতি দিলেন না। প্রজারা রাশিয়ান থিয়েটারের আনন্দ এবং বিষাদ নাটক দেখতে লাগলেন। মানুষের অভিরুচির পরিবর্তন হল।


আরো পড়ুন: মহানগরের নয়জন নিবাসী (পর্ব-৯)


অধ্যাপিকা পলিনা আন্ড্রেয়েভনা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। তিনি বললেন–’ তোমরা নিশ্চয়ই মহান ক্যাথেরিনের ত্রিশ  বছরের শাসনের বৌদ্ধিক বিকাশের কথা জান। তিনি নিজে জন্মসূত্রে জার্মান ছিলেন যদিও সেই সময়কে মেনিয়ার সময় করে তুলেছিল। ফরাসি পরিচারিকা, ফরাসি ঘরোয়া শিক্ষক, ফরাসি সাজ পোশাক এবং বিলাস-ব্যসন আঢ‍্যবন্ত  মানুষের ঘরগুলি পরিপূর্ণ হয়েছিল । এই রুচিবোধ গুলি শহরটি থেকেই রাশিয়ার অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল । তাছাড়া সেইসময়ের রাজকুমারী একাটেরিনা ডাসকভার কথা তো আছেই । তিনি ফরাসি ভাষার পন্ডিত ছিলেন। ভলতেয়ারের মতো ফরাসি পন্ডিত গুলির সঙ্গে তাঁর  যোগাযোগ ছিল এবং পাঁচ বছর ফ্রান্সে থাকার পরে তিনি যখন ফিরে এসেছিলেন সেই রাজকুমারীকে সেন্ট পিটার্সবার্গের আকাদেমি অফ সায়েন্সের পরিচালিকা পাতা  হয়েছিল । তিনিই রুশ ভাষা অধ্যয়নের আকাদেমি স্থাপন করে পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাঁর তত্ত্বাবধানেই রুশ ভাষায় বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা সম্বলিত অভিধানও রচনা করা হয়েছিল। তিনিই পরবর্তীকালে জীবনস্মৃতি লিখেছিলেন।

‘ বুঝেছ নাটালিয়া’– তিনি বললেন–’ এই শহরে– সেন্ট পিটার্সবার্গে– ভূমিদাস প্রথার সংস্কার সাধনের দাবিতে ১৮২৫ সনে ডিসেমব্রিস্টরা আন্দোলনই  নয় , এখানকার ডিসেমব্রিস্ট মার্গে কয়েকজন প্রাণাহুতি দিয়েছিল । কয়েকজন নির্বাসিত হয়েছিল। ভূমিদাস প্রথা১৮৬১ সনে উঠে যাবার সঙ্গে সঙ্গে সামন্তবাদের অবসান হল। কিন্তু পুঁজিবাদের উত্থান হল। এই শতকের শেষের দিকে দেখা গেল শতকরা পনেরো   ভাগ মহিলাই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু বেতনের বৈষম্য থাকল। সঙ্গে কারখানার মালিকদের থেকে শোষণ ,অবজ্ঞা, অবমাননা ,এবং অত্যাচার ছিলই । এই শতকের শেষের দশক থেকে অনেক মহিলা আপত্তি দেখিয়ে হরতালে যোগ দিতে আরম্ভ করল। তাই যখন ১৯০৫  সনে মাঞ্চুরিয়া দখলের সন্দর্ভে জাপানের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধে দেশটা পরাজিত হল, তখন অসন্তুষ্ট জনসাধারণ, বিশেষ করে অনেক শ্রমিকই কেবল নয় সন্তানসন্ততি সহ অনেক মহিলাও সঙ্গে নিয়ে ৯ জানুয়ারি  এখানকার শীত প্রাসাদে থাকা জারের বাসস্থানে প্রজার প্রয়োজন গুলি লিপিবদ্ধ করে আর্জি দখল করার জন্য যাত্রা করতে পারল । সেই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা প্রাসাদের রক্ষীদের ধারাসার গুলিবর্ষণে অশান্ত হয়ে উঠল এবং তা হয়ে উঠল একটা ব্লাডি সানডে– রক্তাক্ত রবিবার।  প্রায় চার হাজার মানুষ আঘাতপ্রাপ্ত বা মৃত্যু হল। তার মধ্যে অনেক মহিলাও ছিল।’

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অধ্যাপিকা হেসে বললেন–’ প্রকৃতপক্ষে আমাদের মহানগরীর কথা সেই তখন থেকে ।এখানে উদ্ভব হওয়া ধ্যান ধারণার কথা বলতে গিয়ে এতগুলি কথা বলতে হল। কিছু গুণী মানুষ রাসপুটিনকে হত্যা করার কথা, এখানকার স্মলনি ইনস্টিটিউট থেকে আরম্ভ করা লেনিনের অক্টোবর বিপ্লবের কথা নাইবা বললাম।’

অধ্যাপিকা বললেন–’ দেখ নাটালিয়া, আমাদের বিশাল রাশিয়ায় কত গোষ্ঠীর মানুষ– শ্লাভিক, টার্কিক, বাল্টিক, ফিন’– অগ্রিয়ানস,যাফেটিক আদি। প্রত্যেক গোষ্ঠীতে আবার কত শ্রেণি, কত ভাষা– প্রায় একশোর মতো। আমাদের এই শহরের জাতীয় কবি আলেকজান্ডার পুশকিন কী না করেছে? তিনিই আমাদের বহুভাষী দেশটিতে আমাদের ঘরোয়া রুশ ভাষাটির সঙ্গীতময় মাধুর্য পরিস্ফুট করে তোলেন নি কি? আর এই ভাষায় কবিতা রচনা করেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় প্রায় নশো দিন নাৎসি বাহিনীর অধীনে থেকে মহানগরটির  সঙ্গে লেনিনগ্রাডবাসীর বিধ্বস্ত হয়ে পড়া মনগুলিকে প্রেরণা  দিয়ে এককভাবে বাঁচিয়ে রাখেননি কি যুবতি ওলগা–ওলগা বেরগল্টছের কবিতা?’

‘তাই’– কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পলিনা আন্ড্রেয়েড না বললেন–’ এই যে তোমরা ‘লেনিনগ্ৰাডের  নয়জন নিবাসী’র কেসটা অধ‍্যয়ন করছ তা থেকে লেনিনগ্রাডে  উদ্ভূত অন্য একটি ধারণা হয়তো আমরা দেখতে পাব। তোমাদের জন্য শুভেচ্ছা রইল।’

নাটালিয়া অধ‍্যাপিকার  কথা মন দিয়ে শুনছিল। সে মহানগরটির  এবং অতীত  থেকে তার আবাসীদের অবদানের কথা শুনে বড় আল্লাদিত হয়েছিল। অধ্যাপিকাকে কিছুক্ষণের জন্য থামতে দেখে সে অমায়িক ভাবে বলল–’ ধন্যবাদ ম্যাডাম। আপনার শুভেচ্ছা এবং কথার জন্য ধন্যবাদ। আমরা সময় পেলেই কেসটার সম্পর্কে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। সম্ভব হবে কি?’

‘ কেন হবেনা? গত, অর্ধশতক জুড়ে আমরা যে মৃক বধির অবস্থায় ছিলাম সেই পরিবেশ গত তিন চার বছরে পরিবর্তিত হয়েছে। আমরা পুনরায় মুক্তভাবে চিন্তা এবং ভাব বিনিময় করতে পারছি। নতুনকে আদর জানাতে সক্ষম হয়েছি।আসবে– আলোচনা করার জন্য। আজ কিন্তু আর সময় দিতে পারব না।’

পলিনা আন্ড্রেয়েডনা বললেন–’ আধঘন্টা পরে একটা সেমিনার আছে। আমাকে যেতে হবে। কিন্তু নাটালিয়া, মনে রাখবে যে কোনো রিজনেবল মহিলা পরিবারের সঙ্গে থেকে চাকরি করতে চায়, কেননা তারা মেইনস্ট্রিমে থাকতে চায়। তোমাকেও থাকতে হবে। এটা কিছুটা স্বার্থপরের মতো শোনায়, কিন্তু যে কিছুই চায় না সে কিছুই পায় না।’

তিনি বললেন–’ তুমি গবেষণা করছ, ভুলে যেও না– তোমার বিষয়ে তুমিই তার নেতা। তুমিই তার কৃতিত্বের দাবিদার।’

ফিয়োডর পরিচিত অধ্যাপিকাকে বলল–’ ম্যাডাম, আমিও আছি কিন্তু।’

পলিনা আন্ড্রেয়েভনা মুচকি হেসে বললেন–’ তাইতো ফিয়োডর , আমি আগেই বলেছিলাম আমাদের প্রবাদ মতে মেয়েরা পৃথিবীর অর্ধেকটা ধরে রাখে। গবেষণার বিষয়ের কৃতিত্ব থাকবে নাটালিয়ার, বাকি অর্ধেক তোমার।’

কিছুক্ষণ পরে নাটালিয়ারা বিদায় নিল।

বিকেলে ওদের যেতে হবে ডিমিট্রি গরিন পরিবারে। সেখানে বা ঠাকুরমা নাদিয়ার কী খবর পাওয়া যায়?

নাটালিয়া  উৎসুক হয়ে পড়ল।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত