| 8 মে 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প ধারাবাহিক

মহানগরের নয়জন নিবাসী (পর্ব-১৫) । ডঃ দীপক কুমার বরকাকতী

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, Assamese literature Dipak Kumar Barkakati 1মিজোরামের আইজল শহরের পদার্থ বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডঃ দীপক কুমার বরকাকতী (১৯৪৮) অসমিয়া সাহিত্যের একজন সুপরিচিত এবং ব্যতিক্রমী ঔপন্যাসিক। আজ পর্যন্ত আটটি উপন্যাস এবং দুটি উপন্যাসিকা, অনেক ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাছাড়া শিশুদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তারই ইংরেজি ভাষার একটি নতুন দিল্লির চিলড্রেন বুক ট্রাস্ট থেকে ১৯৯২ সনে প্রকাশিত হয়। দেশ-বিভাজন, প্রব্রজন, ভেরোণীয়া মাতৃত্ব (ভাড়াটে মাতৃত্ব), ধর্ম এবং সামাজিক বিবর্তন ইত্যাদি তাঁর উপন্যাসের মূল বিষয়। আলোচ্য ‘মহানগরের নয়জন নিবাসী’উপন্যাসে ১৯৩২ সনে স্টালিনের বিরুদ্ধে লেলিনগ্রাডের নয়জন টলস্টয়বাদী গান্ধিজির অহিংসা নীতির দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে করা আন্দোলনের ছবি ফুটে উঠেছে। তাঁর ইংরেজি ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ দুটি হল From Valley to Valley (Sahitya Akademi, New Delhi, 2010) এবং The Highlanders (Blue Rose Publishers, New Delhi, 2010)। বাংলা ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ ‘স্থানান্তর’ (অর্পিতা প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৭)। বাসুদেব দাসের অনুবাদে ইরাবতীর পাঠকদের জন্য আজ থাকছে মহানগরের নয়জন নিবাসীর পর্ব-১৫।


ঘরের দরজা খুলে গেল। মঙ্গোলীয় চেহারার ১৮ বছরের এক যুবক উকি দিল। বোঝা গেল সেই হয়তোইভান বলা আনুক নামের ছেলেটি।

ফিয়োডর বলল–’ আমরা মস্কো থেকে এসেছি। ঠাকুরমা নাডিয়া প’পভনার সঙ্গে দেখা করার জন্য। তিনি কুশলে আছেন তো?’

আনুক  নামের ছেলেটি কিছুটা অবাক হল। আগন্তুক ফিয়োডর এবং নাটালিয়ার দিকে কিছুক্ষনতাকিয়েরইল। বারান্দায় অপেক্ষা করে থাকা ইভানের দিকেও সে তাকাল।

‘ঠাকুরমা ভালো নেই ।’– আনুক বলল – ‘তিনি বিছানায়শয্যাশায়ী।’

ঠাকুরমা অসুস্থ, তবুও বেঁচে আছেন।ফিয়োডর এবং নাটালিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আনুক ওদের ভেতরে নিয়ে গেল।

ফিয়োডর এবং নাটালিয়া ঢুকেই ওদের গায়ের জ্যাকেট খুলে দরজার পাশে থাকা খু়টিতেঝুলিয়েরাখল। ওরা মাথার উষ্ণ টুপিটাও খুলে ফেলল।

ঘরের ভেতরে বসে নাটালিয়ার মনে হল ভেতরের আসবাবপত্র গুলিতে স্থানীয় পরশ বেশ ভালোভাবে রয়েছে। তবু বাইরে থেকে দেখা ঘরের পুরোনো ভাবটা ভেতরে নেই।

ভেতর থেকে একটা লোমশ কুকুর বেরিয়ে এল। কুকুরটিকেফিয়োডরদের দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে দেখে আনু কিছু একটা বলায় চুপ করে রইল।

আনুক ফিয়োডরকে  জিজ্ঞেস করল–’ আমার ঠাকুরমাও আপনার ঠাকুমা নাকি?’

‘ হ্যাঁ আনুক, তিনি আমারও ঠাকুরমা। তাকে গিয়ে বল তাঁর নাতি এসেছে– ইভানলিঅ’নিডভিসেরছেলে।লেনিনগ্রাড থেকে।

আনুক ভেতরে যাবার সময় বলে গেল–’ও , আমাদের দুজনেরই ঠাকুরমা সেইজন্যই আমার নামটা জানে’

কুকুরটাফিয়োডরদের দিকে তাকিয়ে কাঠের মেঝেতে বসে পড়ল।

কিছুক্ষণ পরে ভেতর থেকে ষোলো বছরের একটি মেয়েবেরিয়ে এল। সে খুশি খুশি ভাবে এসেছিল এবং ফিয়োডরদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে শুরু করেছিল।

নাটালিয়া তার দিকে তাকিয়েজিজ্ঞেস করল–’ তোমার নাম নেলিয়া নয় কি?’

‘ হ্যাঁ ,হ্যাঁ। আমি নেলিয়া।’ সে হাসতে লাগল। সে বলল–’ এতদিন ধরে বিছানায়শয্যাশায়ী হয়ে থাকা ঠাকুরমা আপনাদের কথা শুনেই জেগে উঠেছে। তিনি উঠে আসতে পারেন না, কিছুক্ষণ পরে আপনাদের নিয়ে যাব।’

নেলিয়া পুনরায় ভেতরে  গেল। তার পেছনপেছনকুকুরটাও গেল।

নাটালিয়া এবং ফিয়োডর সঙ্গে নিয়ে আসা উপহারগুলি যত্ন করে রাখল। 

কিছুক্ষণ পরে আনুক এসে তাদেরকে উষ্ণশোবার ঘরে নিয়ে গেল। ঘরের এক কোণে থাকা চিমনির উনুনে আগুন জ্বলছিল।


আরো পড়ুন: মহানগরের নয়জন নিবাসী (পর্ব-১৪) । ডঃ দীপক কুমার বরকাকতী


শোবার ঘরটি মাঝারি ধরনের, সেখানে থাকা বিশাল বিছানার একপাশে উঁচু বালিশে দুধে আলতা চেহারার শ্রীযুক্ত নাডিয়া প’পভনাকেশুইয়ে রাখা ছিল।তিনি একটা রঙ্গিন উষ্ণ সোয়েটারপড়েছিলেন।তবু পা থেকে বুক পর্যন্ত একটি কম্বলে ঢেকে রাখা ছিল। তার বাইরে তাঁর হাত দুটি বেরিয়েছিল।পাতলা আকাশ রঙের  চোখের এই বৃদ্ধ যে এক সময়ে বেশ সুন্দরী ছিলেন বিছানায়পড়ে থাকলেও তা বোঝা যাচ্ছিল। মাত্র মুখের জ‍্যোতি ম্লান হয়ে পড়েছিল।ঘি রঙের মাথার চুল  সাদা হয়ে পড়েছিল।মাথার দিকে দাঁড়িয়েনেলিয়া টুপির বাইরে বেরিয়ে আসা মহিলার চুলগুলির তদারক করছিল ।

ফিয়োডর এবং নাটালিয়া ভেতরে ঢুকে চেয়ারে বসার কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত তিনি তাদের মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েরইলেন। তারপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন–’ কে এসেছে মস্কো থেকে? কে এসেছে লেনিনগ্রাড থেকে?

বয়স হয়ে গেলেওফিয়োডোরতৈলচিত্রে দেখা যুবতির সঙ্গে মহিলার সাদৃশ্য দেখতে পেল। সে বলল– ঠাকুরমা, আমি লেনিনগ্ৰাড  থেকে এসেছি। আর ও এসেছে মস্কো থেকে। আমি ফিয়োডর– ফিয়োডরইভান’ভিচ এডলার– আপনার নাতি।’

মহিলাটি তার দিকে একদৃষ্টেতাকিয়েরইলেন। 

সে বলল–’ আমার বাবার নাম ইভানলিঅ’নিডভিছ এডলার।’

‘ কী নাম বললে? ইভান? ইভানের ছেলে?’

ফিয়োডর সায় দিয়ে  নামটা পুনর্বার একটু জোরে বলল। নাডিয়া প’পভনার চোখের জ্যোতি হয়তো কমেছিল। তিনি ফিয়োডরের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়েরইলেন।

‘ ইভান? ইভানের ছেলে তুমি?

ধীরে ধীরে তার দুচোখ জলে ভরে এল।ফিয়োডর বসে থাকার চেয়ারটা বিছানার কাছে নিয়েঠাকুমার হাত ধরল। হাতটা শুকনো। জরাগ্রস্ত। ঠাকুরমা অন্য হাতটিও  এগিয়েদিলেন।ফিয়োডরঝুঁকেপড়ে তার গালে গাল লাগিয়ে সম্ভাষণ জানাল।ঠাকুরমা তার গালে একটি চুমু খেলেন।

নাডিয়া প’পভনারদুচোখদিয়েহড়হড় করে জল পড়তে লাগল। তা দেখে মাথার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নেলিয়াপায়ের দিকে থাকা আনুক হাসতে লাগল। আবেগ প্রশমিত হতে একটু সময় লাগল। নাডিয়া প’পভনা  জিজ্ঞেস করল –’ কোথা থেকে এলে ফিয়োডর? কী করছ? কেমন আছ?’

ফিয়োডর প্রথমেই কথাগুলি বলে নিয়ে বলল–’ও নাটালিয়া।ও আর আমি গবেষণা করছি।’

নাডিয়া প’পভনা এবার নাটালিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল–’ তুমিই মস্কো থেকে এসেছ নাকি নাটালিয়া?’

মহিলাটির মুখে তার নাম শুনে নাটালিয়ার  বেশ আপন আপন মনে হতে লাগল। সে আনন্দিত মনে সায় দিল–’হ‍্যাঁ, ঠাকুরমা। আমি মস্কোর। কালিনিন  প্রসপেক্টে আমাদের বাড়ি।’

নাডিয়া প’পভিনানাটলিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা মনে করতে চেষ্টা করল। কিছুক্ষণ পরে সে বলল–’ সেখানকার একজন মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। নামটা কিছুতেই মনে পড়ছে না।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তিনি বললেন–’ হ্যাঁ, অনেক বছর আগের কথা।’

তিনি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেন। তারপর মাথার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে বললেন–’ নেলিয়া এদের কফি দে। আমাকেও দেখছি সকালের খাবার দিস নি।

‘আপনি খেয়েছেন ঠাকুরমা।’– নেলিয়া বলল।

‘ কোথায় খেলাম আজকে? কালকের কথা বলছিস। 

নাডিয়া প’পভনার কথা শুনে নেলিয়া এবং আনুক হাসতে লাগল। নেলিয়া পাশেই বসে থাকা নাটালিয়াকে  উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে বলল–’ ঠাকুরমা ভুলে গিয়েছে। কথাগুলি মনে থাকেনা।’

মহিলাটি বলল–’ মনে পড়ছে না দেখছি’ তিনি নাটালিয়ার দিকে তাকিয়েজিজ্ঞেস করলেন–’ তোমার নামটা কি বলেছিলে?’

‘ নাটালিয়া।

‘ও নাটালিয়া ।মনে পড়ছে না নামটা।’

তিনি পুনরায় বললেন–’ মস্কোতে তোমার কে কে আছে?’

নাটালিয়া পিতা নিকোলাইডেভিডভিছের মৃত্যুর কথা বলল। মা লিডিয়াপাভল’ভনার  কথা বলল।

নাডিয়া প’পভনামায়ের নামটা শুনে বলল – মানে তোমার মা কোনো পাভলভের মেয়ে,নয় কি?’

‘ হ‍্যাঁ, ঠাকুর মা। আমার দাদুর নাম ছিল পাপল’ড টেলপুগ’ভ।

নাডিয়া প’পভনা যেন চমকে উঠলেন –’পাপল’ভ টেলপুগ’ভ?পাভল’ভ টেলপুগ’ভ তোমার দাদু?’

তিনি  বললেন– আমি চেষ্টা করা নামটা এটাই পাভল’ভ  টেলপুগ’ভ। আমার পিতার নাম ছিল আমার পিতার নাম ছিল প’পভ।তাঁর নাম ছিল পাভল’ভ। এই নামটাই আমার মনে রাখা উচিত নয় কি?’

তিনি বললেন–’ দেখি নাটালিয়া, কাছে এসো তো।’

ফিয়োডরমহিলাটির কাছ থেকে দূরে সরে গেল। নাটালিয়া পাশে বসে ঠাকুমার হাত ধরল। নাটালিয়ার  দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মহিলাটিরদুচোখ পুনরায় ভিজে উঠল। 

তিনি বললেন–’ আমার অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তোমাদের দুজনের সঙ্গে দেখা হয়ে আমার আগের কথা মনে পড়ছে।

‘ পাভল’ভ টেলপুগ’ভ।’– তিনি বললেন–’ কতবার দেখা হয়েছিল?’ তিনবার না চারবার? মানুষের সঙ্গে দেখা করার স্মৃতি কত বার দেখা হয়েছে তার ওপরে নির্ভর করে না। তাকে আমি ভুলিনি।’

আনুক এবং নেলিয়াঠাকুমার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়েরইল। ঠাকুরমা পুনরায় সকালে খাবার কথা গেলেন।

নাটালিয়া বলল –’ ঠাকুমারনাডিয়া, আমরা আপনার কথা জানতে চাই।’

সেই যে  লেনিনগ্রাডের পাশে ছিল, সেই যে ওখটিনস্কি সেতু পার হয়ে ট্রামেগিয়ে টেলিগ্রাফের খুঁটি থাকা পথ দিয়ে আপনাদের বাড়িতেপায়ে হেঁটে যাওয়া যেত – সেই বাড়িটাতে – সেখানে থাকা সময়ের কথা জানতে চাইছি ।

নাডিয়া প’পভনানাটালিয়ার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েরইলেন। কয়েক মুহুর্ত পরে তিনি তাঁকে কোমল স্বরে জিজ্ঞেস করলেন – কীভাবে জানলে নাটালিয়া –– সেই সমস্ত কথা ?

নাটালিয়া বলল–’ আমাদের বলেছে ঠাকুরমা মারিনাএন্টন’ভনা। আমাদের বলেছে ঠাকুরমা মারিয়াএন্টন’ভনার  সঙ্গে থাকা আপনার বন্ধুত্বের কথা। সঙ্গে বলেছেন আপনাদের বৌমা ওলগাপেট্রভনা। তাঁরা দূরে আছেন, কিন্তু আপনাদের কথা তারা ভুলে যায়নি।

ঠাকুরমা নাডিয়া প’পভনারদুচোখদিয়ে ঝর ঝর করে তপ্ত অশ্রু গড়িয়েপড়ল । নেলিয়া এবার হাসল না।সে একটা কোমল কাপড়দিয়ে ঠাকুরমার চোখের জল মুছিয়ে দিল।

বিছানার পাশে শুয়ে থাকা কুকুরটা কু কু করতে লাগল

নাডিয়া প’পভনাজিজ্ঞেস করলেন–’ ওরা কেউ আমার কথা ভুলে যায়নি? আমাকে মনে রেখেছে?’

তার দুচোখদিয়ে পুনরায় জল গড়িয়ে পড়ল।

‘ হ্যাঁ ঠাকুরমা। প্রত্যেকেই আপনার কথা মনে রেখেছে।’

নাটালিয়ারস্নেহপূর্ণকথায়নাডিয়া প’পভনা কিছুক্ষণের মধ্যে সুস্থির হলেন।

তিনি বললেন–’ নেলিয়া,আনুক এদের কফি খেতে দে।’

‘ বুঝেছিসনাটালিয়া’– মহিলাটি বললেন–’ জীবনে আমি অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। প্রথমে সংশয় হয়,কিন্তু পরে বোঝা যায় মানুষের মনের ভালোবাসা।’

মানুষটা কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা করলেন। তারপর বললেন–’ লেনিনগ্ৰাডে থাকার সময়প্রত্যেকে আমাকে ভালোবাসত। দুঃখের সময়েও  স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিল।এখানে, এই য়াকুরিমে ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসা পেয়েছি।আমার স্বামী পরিবার-পরিজনেরা আমাকে ঘিরেরেখেছিল।।স্বামী মৃত্যুর আগে আমাকে এই ছেলে মেয়েগুলি দিয়ে গেল।সঙ্গে দিয়ে গেল এই কুকুরটাকে।এরাপ্রত‍্যেকেই আমাকে ভালো বাসা  দিয়েছে।তবে মাঝে মধ‍্যে ঠাণ্ডা পড়লেই ওরা দুজন নিজের জায়গায় চলে যেতে চায়।সেখানে নাকি ওরানর্দানলাইটস দেখে।’

নাটালিয়ানর্দানলাইটসের কথা জানে।যখন উত্তর মেরু অঞ্চলে কয়েকমাস রাত হয়,দিগন্তে কদাচিৎ কখনও নানা বর্ণের  নর্দানলাইটস দেখতে পাওয়াযায়। অনুভব করা যায়, বর্ণনা করা যায় না।

নাডিয়া প’পভনারক্লান্তি লাগছিল। তিনি কিছুক্ষন অপেক্ষা করলেন। তারপরেনেলিয়াকে   বললেন –’আমাকে বসিয়ে দে তো।’

বহুদিন বসতে না চাওয়াঠাকুমার কথা শুনে নেলিয়া অবাক হল। তবু সে ঠাকুরমাকে বিছানায়বসিয়ে দিল।

‘ এরা যাব যাব করছে, ভালোবাসার টানে আমাকে কিন্তু ছেড়েযায় না। আমাকে খুব ভালোবাসে।’

ফিয়োডর কিছুক্ষণের জন্যে ওঠে বাইরে গেল। সে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ইভানকে সন্ধ্যা বেলা আসতে বলে গাড়িনিয়ে ফিরে যেতে বলল। সে ফিরে এসে দেখল বিছানার পাশের একটি টেবিলে নেলিয়াধোঁয়াউড়তে থাকা কফির পেয়ালা গুলি সাজাতে  শুরু করেছে।

কফিতে চুমুক দিয়েফিয়োডর বলল–’ ঠাকুরমা, আমি তোমাকে একটি ফোটো দেখাব।’

সি তার  ঝোলা থেকে নিনা ভলক’ভনা লেপিনার ঘরে থাকা তৈলচিত্রটির ছবি বের করে নাডিয়া প’পভনার মুখের সামনে তুলে ধরল। মহিলাটি ছবিটা হাতে নিয়েঝুকেঝুকে দেখতে লাগলেন। তার চোখে ধীরে ধীরে আশ্চর্য আলো ছড়িয়েপড়ল।

‘ এটা তোমার পেইন্টিং এর ছবি ঠাকুরমা। এঁকেছিলেন ভিক্টর একচুর্স্কি।ভলক’ভ রিয়াজনভ মহাশয়ের গ্রন্থাগারে পেয়েছি।’

নাডিয়া প’পভনার আবেগ ভরা কোমল মুখটিতে পুনরায় আকুলতার আভাস ছড়িয়েপড়ল। তিনি অস্ফুট স্বরে ফিয়োডর বলা মানুষের নাম গুলি উচ্চারণ করতে লাগলেন– ভিক্টর একচুর্স্কি,ভলক’ভ রিয়াজনভ …।’ তার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস কিছুটা দ্রুত হল। তিনি কিছুক্ষণ মৌন হয়ে রইলেন।

‘ তোরা’– ঠাকুরমা অনেকক্ষণ পরে বললেন–’ আমাকে কোন অতীতে নিয়ে গেলি সেই সময় ছিল আমার জীবনের মধুরতমসময়।’

‘ হ্যাঁ ঠাকুরমা, আমরা জানি।’ফিয়োডর বলল–’ আমরা দাদু লিঅ’নিডএডলারের  কথাও জানি। আমরা সেই সমস্ত কথা তোমার কাছ থেকে জানতে চাই।’

নাডিয়া প’পভনাকিছুক্ষন নীরব হয়ে রইলেন।তাঁর উত্তেজিত হয়ে উঠা মন-প্রাণ দেহ ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এল। তিনি বললেন–’ বলব, সমস্ত কথা বলব। কিন্তু তার আগে আমি একটু স্নান ঘরে যাব।’

ফিয়োডর এবং নাটালিয়া বসার ঘরে উঠে গেলেন। ১৫ মিনিট পরে নাডিয়া প’ভবনা যখন ফিরে এলেন তখন আনুককে বসার ঘরে একটি চেয়ার ঠিক করে দিতে বললেন। আনুউৎসাহের সঙ্গে দ্রুত একটা হেলানোচেয়ারকুশন এবং বালিশ দিয়েসাজিয়ে দিল।

সে হেসেফিয়োডরকে অনুচ্চ কণ্ঠে বলল–’ ঠাকুরমা কয়েক মাস ধরে এখানে বসতে আসেনি।’

নেলিয়ানাডিয়া প’পভনাকে এনে চেয়ারটাতে বসিয়ে দিল। তাকে বেশ শান্ত দেখা গেল। তিনি চেয়ারটাতে হেলান দিয়ে বসে পড়লেন। নেলিয়া কোমর পর্যন্ত একটা গরম কম্বল দিয়েঢেকে দিল।

তিনি বসে থাকা চেয়ারটার পাশেই মেঝেতেকুকুরটাশুয়েপড়ল।

তিনি বললেন–’ বুঝেছফিয়োডর,বুঝেছনাটালিয়া, আমি তোমাদের সবকিছু বলব। আমার সেই সময়ের কথা।’

তিনি বললেন–’ সেটা ছিল বড় সংকট পূর্ণ  সময়।১৯৩২ সন। কত বছর হল এখন?’

ফিয়োডর মনে মনে হিসাব করে বলল–’ সাতান্ন-আঠান্ন  বছর।’

‘ হ্যাঁ।’– তিনি বললেন–’ এত বছর আগের কথা।’

মহিলাটির দুচোখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে যেন অসীমে নিক্ষিপ্ত হল। তথাপি তাকে সপ্রতিভ দেখা গেল। তিনি অতীতে ফিরে গেছেন। সেই দৃষ্টি নিয়ে তিনি ধীরে ধীরে সেই সময়ের কথা বলতে শুরু করলেন।তাঁরযুবতি কলের কথা।…

সময়টা ছিল ১৯৩২ সন।

স্থান ছিল তখনকার সেন্ট পিটার্সবার্গ,১৯১৪ সন থেকে হওয়াপেট্রগ্ৰাড এবং ১৯২৪ সনে লেনিনের মৃত্যুর পর থেকে হওয়ালেনিনগ্রাড।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত