এই সেদিনের কথা। কাজের সূত্রে আমি তখন সুকনায়। দার্জিলিং হিমালয়ের পাদদেশে ছোট্ট একটা গ্রাম সুকনা। ছোট বড় ঝরনা, মহানন্দা নদী, জঙ্গল আর চা বাগান। পাহাড়, মেঘ নিয়ে ছোট্ট গ্রাম সুকনা। হিলকার্ট রোড শিলিগুড়ী থেকে সোজা চলে গেছে দার্জিলিং। ফরেস্ট অফিস, ফরেস্ট বাংলো, হাসপাতাল আর টয় ট্রেনের ছোট্ট স্টেশান। সকালে একটা ট্রেন এন.জে.পি. থেকে দশটা নাগাদ আসে এখানে। তখন দেশি-বিদেশি পর্যটকে গমগম করে স্টেশানটা। হিল কুইন ইঞ্জিন একটু দম নেয়, জল নেয়, কয়লা নেয় তারপর রওনা দেয় দার্জিলিং এর পথে।
আবার সব শুনশান। এরকমই ফাঁকা শুনশান স্টেশনে তার সঙ্গে প্রথম দেখা।
নতুন একটা ক্যামেরা এসেছে হাতে। কাজের ফাঁকে সেটা নিয়ে আমার সারাদিন এখানে ওখানে ছবির খোঁজে ঘোরা ফেরা। পিপল গাছে বুলবুলির ছবি তুলতে পেরে আমি তখন বেশ উত্তেজিত। হাসপাতালের চৌহুদ্দিতে একটা বট গাছ। লাল লাল ফলে আছে ভরে। ধনেশ পাখী দল বেঁধে এসেছে তার টানে। একটা ডাল ঝুলে রয়েছে টয় ট্রেনের লাইনের ওপর। কয়েকটা ধনেশ পাখী হুটোপুটি করছে সেখানে। কিছুতেই আর তাদের ধরা যায় না ক্যামেরায়। হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে বলল, জলদি কিস লিয়ে সাব। থোড়া ইন্তেজার কিজেয়ে। উনকো সমঝনে কো কোসিস কিজিয়ে। দেখ লিজিয়েগা খুদ আকে আপকো পোজ দে কে জায়েগা।
সত্যিই ত এরকমও আবার হয় নাকি। ধনেশ পাখীটা এসে আমায় পোজ দিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্ত হয়ে গেল রিটায়ার্ড ফরেস্ট গার্ড মনবাহাদুরের সঙ্গে। মনবাহাদুর তামাং। লোকে বলে বয়সের গাছ পাথর নেই। যতদিন চাকরি করেছে পেনশান খেয়েছে তার চেয়েও বেশী। চোখের কোলে বয়সের কালি, শিথিল ত্বকে সর্বত্র সময়ের দাগে ভরা মুখটায় তার চোখদুটো ছিল বড় বেমানান। মহানন্দার জলের স্বচ্ছ সরলতা অথবা কাঞ্চনজঙ্গা পেরিয়ে আকাশের অপার শূণ্যতা কিম্বা জঙ্গলের অসীম গভীরতা নাকি এসব কিছু মিলে মিশে একাকার এক উপলব্ধির সাথে সম্পৃক্ত ছিল গভীর গোপন কোন বেদনা। কে জানে।
মহানন্দা রিজার্ভ ফরেস্টের বিভিন্ন জায়গায় আমি যখন ছবি তুলে বেড়াতাম মনবাহাদুর আমাকে অনেক গল্প বলত। আসলে পাহারা দিত। ছবি তোলার ঘোরে সরতে সরতে কতবার মনবাহাদুরের ঘাড়ে হোঁচোট খেয়েছি। নির্বিকার মনবাহাদুর গল্প বলে যেত। ওর অনুচ্চ গুন গুন স্বর পাখি প্রজাপতির ওড়াউড়ি, শুকনো পাতার খসে পড়া, ডালপালার মাঝে বাতাসের আনাগোনা, নুড়ি পাথরের ফাঁকে বয়ে চলা নদীর সাথে মিলে যেত মিশে যেত। হোঁচোট খেয়ে বুঝতাম ওর গায়ে হোঁচোট না খেলে আমি পাঁচশো ফুট নীচে পড়তাম। ঠিক ঠিক সময়ে ঠিক ঠিক জায়গায় হোঁচোট খাওয়ানোর জন্য ও অজানতে দাঁড়িয়ে থাকত।
এরকমই ফাঁকা শুনশান স্টেশনে তার সঙ্গে মনবাহাদুরের প্রথম দেখা। ট্রেনটা মিস্ করার জন্য নাকি কেঁদে ফেলেছিল মনকলা। তা অবশ্য কাঁদবারই কথা। ট্রেন ত তখন দিনে একটা। আর সেসময় হিলকার্ট রোড দিয়ে মিনিটে দশটা গাড়ী শিলিগুড়ী থেকে দার্জিলিং যেত না। ওকে ত যেতে হবে রংটং। সুকনার পরের স্টেশন। পাঁচ কিলোমিটার চড়াই। বাগান থেকে ফেরার পথে পিঠের ঝুড়িটায় কিছু শাকসব্জি আনাজপাতি আর এক বোঝা শুকনো কাঠ নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার চড়াই। কি করবে ভেবে না পেয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে ছিল কয়েক ফোঁটা জল। বলেই কেমন যেন লজ্জা পেয়ে গেল মনবাহাদুর। আমি বললাম কি করলে তখন।
সেদিন মনকলার সঙ্গে হিলকার্ট রোড ধরে ট্রেন লাইনের সঙ্গে কাটাকুটি খেলতে খেলতে মন বাহাদুর পৌঁছে গেছিল রংটং। দূর পাহাড়ের দিকে ওর বেঁকে যাওয়া বেতো আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে ছিল। ওই বস্তিতেই নাকি ছিল মনকালার বাপের বাড়ি। বাপ মা তার মরে গেছে সেই কবে। ভাই বোনরাও আর কেউ নেই এখানে। কম দিন ত হল না। মন খারাপ করা গলায় বলল বাড়ীটাও ধসে গেছে খাদে। ওয়াক্ত সব কুছ লে লিয়া সাব। সব কুছ। স্রিফ কুছ পেঁড় রহে গেয়া। আগর আপ নেহি গিরাওগে তো পেঁড় রহে যাতা হ্যায় সাব। বহুত দিন রহে যাতা হ্যায়। আর থেকে যায় পথ। হিলকার্ট রোড়, টয় ট্রেনের লাইন। পাহাড় আকাশ মেঘ।
জিজ্ঞেস করেছিলাম, মনবাহাদুর আর কোন কোন রাস্তায় হেঁটে ছিলে তোমরা। মুচকি হেসে মনবাহাদুর বলতে থাকে এই যে সাব এই রাস্তায় আমরা দাঁড়িয়ে আছি, এই রাস্তা দিয়েই ত রোজ ও বাগানে যেত চা পাতা তুলতে। খুব তাড়াতাড়ি হাঁটত। দৌড়তই প্রায়। রোজই দেরী হয়ে যেত যে। কিছুটা অনুযোগের সুরে বলল, কথা বলার সময়ই থাকত না। একটু যেন হারিয়ে গেল নিজের মধ্যে। সম্বোহিত স্বরে বলল সব একই রকম আছে সাব, লম্বা লম্বা গাছগুলো, ডালপালার ফাঁকে আকাশটা, নিচে ঝোপঝাড় আর শুকনো পাতা। এমন কি গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে এই যে রোদ ছায়ার খেলা, জঙ্গল আর পথের লুকোচুরি। সব একই রকম আছে সাব।
আর এই যে এই রাস্তাটা। এটা কিন্তু আসলে রাস্তা নয়। শুখা ঝোরা। গরম কালে রাস্তা বর্ষায় নদী। এখান দিয়ে বাগানে গেলে বেঁচে যায় অনেকটা পথ। মনকলা এ রাস্তা দিয়ে যেতে বড্ড ভয় পেত। কতবার বুঝিয়েছি সঙ্গে ফরেস্ট গার্ড থাকলে জঙ্গলে কিসের ভয়। মানতে চাইত না সাব। ভেঁঙ্গিয়ে বলত হাঁ বহত বড়া ফরেস্ট গার্ড। বলেই হেসে ফেলল মনবাহাদুর। যখনই এ রাস্তা দিয়ে যেত ভয়ে চেপে ধরে থাকত হাত। প্রত্যেক বাঁক চোখ বুজে পার হত। পায়ে পায়ে হোঁচোট খেত ছোট বড় নুড়ি পাথরে। আমি মুচকি হেসে বললাম তাই নাকি। জঙ্গলের র্শটকাট দিয়ে কয়েকটা বাঁক পেরতেই চোখ জুড়িয়ে গেল।
এ বাগানেই পাতা তুলত মনকলা। ঘন সবুজ মখমলের মত চা বাগান। মাঝে মাঝে কিছু পাতা ঝরা গাছ। ওই ঝরা পাতা নাকি পচে সার হয়ে চা গাছকে পুষ্টি দেয় সারা বছর। হাতের তালুর মত চেনা সেই চা বাগানের আনাচে কানাচে ঘুরতে ঘুরতে মনবাহাদুর এরকম কত কথা বলে যেত। চেনাত কুঁড়ি আর পাতা। দেখাত কিভাবে হয় তুলতে। কোন গাছের নিচে বিশ্রাম নেওয়া যায়। কোনখানে আছে শিয়ালের গর্ত। আমি বলতাম আচ্ছা মনবাহাদুর এ বয়সেও কি করে তুমি এত তাড়াতাড়ি হাঁট। উত্তর না করে কি যেন এক অজানা সুরে গুনগুন করত। মনে হত বুঝি কোন এক সুদূর অতীতে মনকলার পায়ে পায়ে আবার তার অশক্ত শরীর বাগানের প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে যাছে।
আর দেখিয়ে ছিল মেঘ চিরে সোনা ঝরা রোদ চা বাগানের ওপর। বলেছিল মেঘ থাকে ভাসা ভাসা, আলো থাকে ঝলমলে, কুয়াশা থাকে এ পাহাড়ীতে। তবে ত চা হয় এ দার্জিলিংএ। আমি খুনসুটি করে বলি আর মনকলা। মনবাহাদুর হাসে। হাঁ সাব। নরম হাতে, বড় আদর করে তুলে নিতে হয় দুটো পাতা আর একটা কুঁড়ি। বড়া নাজুক হ্যায় সাব ইয়ে পাত্তি। পেয়ার হোনা চাহিয়ে। নেহি তো বান্তা নেহি। আমি বলি আচ্ছা। পেয়ার হোনা চাহিয়ে। নেহি তো বান্তা নেহি। কিতনা পেয়ার হোনে সে বান্তা হ্যায় ইয়ে ত বাতাও। প্রাণ খুলে হাসতে থাকে মনবাহাদুর। বলি কি শুনে ছিল তোমার কথা। মেনে নিয়ে ছিল তোমাকে।
সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলাম মনবাহাদুর, বিয়ে করে ছিলে তোমরা। উত্তর না করে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল মনবাহাদুর। জঙ্গলের একটা শব্দ আছে নিজস্ব, একটা গন্ধ আছে নিজস্ব, আছে তার নিজস্ব ভাষা। জঙ্গলের কোলে চা বাগানের গায়ে গুলমা এস্টেট। অবারিত নীল আকাশ, সবুজ মাঠ আর ঝুলন্ত ব্রীজ। সোমবার সোমবার হাট বসে এখানে। মনবাহাদুর বলল হাঁ সাব। এখানেই এক ভাঁঙ্গা হাটে বাড়ী ফেরার আগে জিজ্ঞেস করে ছিলাম, বিয়ে করবি আমাকে। আমি উদবিগ্ন হয়ে উঠি। অধৈর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করি, কি বলেছিল মনবাহাদুর। অল্প হেসে মনবাহাদুর বলল, কুছ বলেনি সাব। দৌড়ে ঝোরার কাছে চলে গেল। জলের দিকে তাকিয়ে রইল অনেক্ষণ। কাছে যেতে মুখ তুলে হেসেছিল।
গুলমা পেরিয়ে মহানন্দা রির্জাভ ফরেস্ট। জঙ্গল পাহাড় মেঘ দেখিয়ে মনবাহাদুর বলল ওখানে আছে এক অজানা দেশ। নদীর চরে। আমি বলি কি আছে সে দেশে। মনবাহাদুর বলে সেখানে আছে স্যাঁতস্যাঁতে ভিজে বালি, কুয়াশা, রোদ ছায়া আর শ্যাওলা। আমি বলি কারা থাকে সেখানে। মনবাহাদুর বলে সে দেশ মায়াবী নীল পরীদের দেশ। আমি বললাম তাই নাকি। তাহলে একদিন আমায় নিয়ে চল সেই মায়াবী নীল পরীদের দেশে। মনবাহাদুর বলে নিয়ে যেতে পারি সাব, কিন্তু কথা দিতে হবে, শুধু দূর থেকে দেখবেন নীল পরীদের। হাত দেওয়া যাবে না, ছোঁয়া যাবে না কিন্তু। আমি বললাম কথা দিলাম মনবাহাদুর। দূর থেকেই দেখব। হাত দেব না। ছুঁয়ে দেখব না।
স্যাঁতস্যাঁতে ভিজে বালি, কুয়াশা, রোদ ছায়ায় শ্যাওলা মাখা নদীর চরে নীল পরীদের দেশে আমায় নিয়ে গেছিল মনবাহাদুর। দূর থেকে দেখিয়ে ছিল নীল পরীদের। আমি বললাম মায়াবী এই নীল পরীদের দেশে মনকলাকে নিয়ে এসেছিলে। মনবাহাদুর বলল আপনার আগে একমাত্র মনকলাকেই এখানে নিয়ে এসেছি। আমি ছাড়া এ দেশে আসার রাস্তা আর কেউ চেনে না। কোন ফরেস্ট গার্ডও না। আমি বললাম কি বলেছিল মনকলা। কিছুই বলেনি সাব। ভিজে বালিতে হাঁটু মুড়ে হাত জোড় করে চোখ বুজে বসে ছিল কিছুক্ষন। জিজ্ঞেস করে ছিলাম কি চাইলি। হেসে এক চুটকি শ্যাওলা নিয়ে আমার কপালে তিলক কেটে দিয়ে ছিল।
মহানন্দা নদীর চরে সে দিন শুধু আমি আর মনবাহাদুর তামাং। বললাম কি সুন্দর লাগছে না মনবাহাদুর। সামনে পাহাড়, সবুজ পাহাড়। ওপরে আকাশ, নীল আকাশ। পায়ের নীচে নদী। কেমন যেন মনে হয় না হারিয়ে যাই। হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে মনবাহাদুর। নেহি সাব নেহি। মত্ খো যাও সাব, মত্ খো যাও। ডুকরে কেঁদে ওঠে, হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে ভিজে বালির ওপর। আমি ভয় পেয়ে বলি একি হল তোমার মনবাহাদুর। মহানন্দার স্বচ্ছ সরলতা, কাঞ্চনজঙ্গা পেরিয়ে আকাশের অপার শূণ্যতা আর জঙ্গলের অসীম গভীরতায় সম্পৃক্ত এক গভীর গোপন বেদনায় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে।
কোন এক দূর্গা পূজার অষ্টমীর রাত্তিরে শিলিগুড়িতে ঠাকুর দেখতে গিয়ে হারিয়ে গিয়ে ছিল মনকলা। কিভাবে যে মনকলা হারিয়ে গিয়েছিল মনবাহাদুর তা জানে না। কেউ কেউ বলেছিল ওকে নাকি নিয়ে যাওয়া হয়েছে দিল্লীতে। মনবাহাদুর যদি দিল্লীতে যায়, খোঁজ করে, তাহলে পেলেও পেতে পারে তাকে। তিন তিনটে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। চাকরি এসব ফেলে মনবাহাদুরের আর দিল্লী যাওয়া হয়ে ওঠে নি। তারপর কেটে গেছে কয়েকটা দশক, ছেলে মেয়েদের বড় করে, বিয়ে দিয়ে, সংসারী করে মনমাঝে চলে আসে এই মহানন্দা নদীর চরে। হারিয়ে যাওয়ার কথা বললে কেমন যেন আঁতকে ওঠে।
দার্জিলিং হিমালয়ের পাদদেশে একটা ছোট্ট গ্রাম সুকনা। ছোট বড় ঝরনা, মহানন্দা নদী, জঙ্গল আর চা বাগান। পাহাড়, মেঘ নিয়ে ছোট্ট গ্রাম সুকনা। হিলকার্ট রোড শিলিগুড়ী থেকে সোজা চলে গেছে দার্জিলিং। ফরেস্ট অফিস, ফরেস্ট বাংলো, হাসপাতাল আর টয় ট্রেনের ছোট্ট স্টেশান। সকালে একটা ট্রেন এন.জে.পি. থেকে দশটা নাগাদ আসে এখানে। তখন দেশি-বিদেশি পর্যটকে গমগম করে স্টেশানটা। হিল কুইন ইঞ্জিন একটু দম নেয়, জল নেয়, কয়লা নেয় তারপর রওনা দেয় দার্জিলিং এর পথে। আবার সব শুনশান। এরকমই ফাঁকা শুনশান স্টেশনে মনবাহাদুরের সঙ্গে মনকলার প্রথম দেখা।
ডিজিটাল ম্যাগাজিনের চাকরিটা ছয় মাসও হয়নি। পাকা হবার আগে সব বিভাগে কাজ করতে হবে। রাজনীতি, বিনোদন, খেলা, স্বাস্থ্য হয়ে এবার ভ্রমণ। উত্তরবঙ্গের চিত্র সাংবাদিক ছবি পাঠিয়েছে। ছবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে একটা গল্প লিখতে হবে। সম্পাদকের নির্দেশ। স্কুলের পরীক্ষায় প্রশ্ন আসত ছবি দেখে গল্প লেখার। বাধ্যতামূলক ছিল না সে প্রশ্নের উত্তর করা। সব সময় মোনালিসা এড়িয়ে যেত। আজ আর উপায় নেই তাই লিখে ফেলল। আর সমীর। ক্লাসের সেই ছেলেটা। যে কোন ছবির গল্প বলে দিত। মোনালিসার খাতার মলাটে টিউলিপ বাগানের ছবির নীচে লিখেছিল – তোর চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ, চুনি উঠল রাঙা হয়ে। টিউলিপের দিকে তাকিয়ে বললি সুন্দর। সুন্দর হল সে। ছত্রে ছত্রে চুরি করত, পাতায় পাতায় মিথ্যা লিখত ছেলেটা। মোনালিসা জিজ্ঞেস করেছিল – কি করে এমন লিখিস তুই। সমীর বলল দাঁড়া তোকে শিখিয়ে দিচ্ছি। পেনটা ধর। পেন সমেত মোনালিসার হাতটা হাতেখড়ির ঢঙে ধরে দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া এক পথের ছবির নীচে লিখেছিল এ পথ যেন না শেষ হয়। কোনও এক শর্টকাট পথে কোলকাতা থেকে কানপুর হয়ে ক্যালিফোর্নিয়া চলে গেল।
সম্পাদকের ফোনে সম্বিত ফিরল মোনালিসার। বলুন স্যার। – ভালো হয়েছে মোনালিসা, তবে কি জান, ভ্রমণের কলমে এরকম ট্র্যাজিক এন্ড চলবে না। শেষের দিকটা একটু পরিবর্তন করো। শান্ত গলায় মোনালিসা উত্তর করল ঠিক আছে স্যার।
জন্ম ১৯৬৭ সালে। কোলকাতায়। পড়াশোনা উত্তরপাড়া সরকারি স্কুলে। আর জি কর মেডিকেল কলেজে। পেশায় চিকিৎসক শিক্ষক। প্রকাশিত লেখার সংখ্যা সামান্য। বেশীরভাগই স্কুল কলেজের পত্রিকায়, কখনও বইএর পাতায় কখনও দেয়ালে সাঁটা কাগজে। “উনিশ কুড়ি” পত্রিকায় একটা ছোট গল্প ছাপা হয়েছিল। “টগবগ” এ আর একটা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রথম লেখা “চামড়ার মাণিব্যাগ” প্রকাশ করল “ইরাবতী”।
চমৎকার