| 29 নভেম্বর 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত প্রবন্ধ

নোবেল বিজয়িনী ডরিস লেসিং এর নোবেল বক্তৃতা

আনুমানিক পঠনকাল: 15 মিনিট

ডরিস লেসিং ২০০৭ সালের নোবেল সাহিত্য পুরষ্কার বিজয়িনী। আটাশি বছর বয়সে এই পুরষ্কার জিতে সাহিত্যে তিনিই এখন প্রবীণতমা এবং নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত নারীদের মধ্যে একাদশতম।
নারীবাদী, সুফি, কমিউনিষ্ট নানা অভিধায় অভিহিত এই লেখিকার জন্ম ইরানের (তৎকালীন পারস্য) কিরমান শহরে ১৯১৯ সালের ২২ অক্টোবর। বাবা-মা দু’জনেই ব্রিটিশ। মা ছিলেন নার্স আর বাবা চাকরি করতেন ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব পার্সিয়াতে, সামান্য কেরানি হিসেবে। পরবর্তীতে ভাগ্যান্বেষণে তিনি চলে যান দক্ষিণ রোডেশিয়ায় অর্থাৎ বর্তমান জিম্বাবুয়েতে। কিন্তু সফল হননি। সেখানেই কাটে ডরিস লেসিং এর আনন্দ-বেদনার অসম শৈশব। চৌদ্দ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিলেও নিজেকে স্বশিক্ষিত করে তোলেন লেসিং । শৈশবেই তার পরিচয় ঘটে ডিকেন্স, স্কট, ষ্টিভেনসন ও কিপলিং এর মত সাহিত্যিকদের রচনার  সাথে। পরে তিনি পাঠ করেন ডি. এইচ.  লরেন্স, স্তাঁধাল, তলস্তয় ও  দস্তয়েভষ্কি। যা তার চিন্তা ও কল্পণাকে সুবিন্যস্ত করে।
ডরিস লেসিং-এর প্রথম উপন্যাস দ্যা গ্র্যাস ইজ সিংগিং (১৯৪৯)। কিন্তু তিনি খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে যান তাঁর দ্যা গোল্ডেন নোটবুক (১৯৬২) উপন্যাসের জন্যে। এই উপন্যাস বিবেচিত হয় নারীবাদী ক্লাসিক হিসেবে। তিনি উঠে আসেন জাঁ পল সাত্র ও চেশোয়ভি মিয়োশের মত লেখকদের কাতারে। সমালোচকদের দৃষ্টিতে তিনি “প্রচন্ড নারীবাদী” এবং তাঁর অধিকাংশ রচনাই “আত্ম প্রতিনিধিত্বমূলক।”
নোবেল ফাউন্ডেশন এই মহীয়সী নারীকে অভিহিত করেছে “নারী অভিজ্ঞতার সেই মহাকাব্যিক রূপকার যিনি সংশয়বাদ, উদ্দীপনা ও সৃজনীশক্তি দিয়ে এক বিভাজিত সভ্যতাকে তাঁর বিশ্লেষণের অধীনস্থ করেছেন।”
বর্তমানে ইংল্যান্ডবাসী ডরিস লেসিং-এর “নোবেল জয়ের প্রেক্ষিতে রচিত নয়” শীর্ষক এই নোবেল বক্তৃতাটি তাঁর পক্ষে পাঠ করে শোনান তাঁর প্রকাশক নিকোলাস পিয়ারসন, ২০০৭ সালের ৭ ডিসেম্বর।


দরজায় দাঁড়িয়ে, উড়ন্ত ধূলি-মেঘের মধ্য দিয়ে আমি যে দিকে তাকিয়ে আছি, আমাকে বলা হয়েছে ঐ দিকে এখনো একটি অক্ষত অরণ্য আছে। গতকাল দু’পাশে কেটে রাখা ও আগুনে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া অজস্র গাছের মধ্যে দিয়ে মাইলের পর মাইল  আমি গাড়ি চালিয়েছি। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ও চমৎকার অরণ্যটি ’৫৬ সালে ওখানেই ছিল। সব ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষের খাদ্য প্রয়োজন; আগুনের জন্যে জ্বালানি প্রয়োজন।
আশির দশকের গোড়ার দিকে উত্তর-পশ্চিম জিম্বাবুয়ের চিত্র এটি। আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছি। এক সময় লন্ডনের কোন এক স্কুলে শিক্ষকতা করতো সে। আমার ঐ বন্ধু জিম্বাবুয়ে এসেছে ‘আফ্রিকাকে সাহায্য করতে’। সে একজন কোমল হৃদয়ের ভাববাদী মানুষ। কিন্তু এখানকার স্কুলের বাস্তব চিত্র দেখে সে এতটাই হতাশায় ভুগছিল যে, তা থেকে খুব সহজে রেহাই পাবার উপায় ছিল না। স্বাধীনতার পর জিম্বাবুয়েতে যত স্কুল  তৈরি হয়েছে এ স্কুলটি সেগুলোর একটি। ইট-গাঁথা পরপর চারটি রুম এক, দুই, তিন, চার। ধূলার স্তুপে সোজা দাঁড়িয়ে আছে। এক প্রান্তে ছোট্ট একটি লাইব্রেরি। ক্লাসরুমগুলোতে ব্ল্যাকবোর্ড আছে কিন্তু আমার বন্ধু চক সব সময় পকেটেই রাখে, তা না হলে ওগুলো চুরি হয়ে যাবে। স্কুলে কোন মানচিত্র নেই, গ্লোব নেই, পাঠ্যবই নেই, খাতা নেই, কলমও নেই। লাইব্রেরিতে এমন কোন বই নেই যা শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে পড়বে। যা আছে তা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আসা মোটা মোটা ভারী বই, তুলতেও কষ্ট হয়। শ্বেতাঙ্গরা অনেক আগেই এসব বই ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। কিছু গোয়েন্দা কাহিনী আছে।
স্কুলের মাঠে একটা ছাগল কিছু রুগ্ন ঘাস চিবিয়ে তৃপ্তি পাবার চেষ্টা করছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করে বরখাস্ত হয়েছেন। তিনি এমন একটা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন যা সবাই জানে, মার্জিত ভাষায় ঃ সবাই তাদের দেখছে, এটা জেনেও তারা কেন এমন কাজ করে?
আমার বন্ধুর হাতে খুব একটা টাকা-কড়ি থাকে না, কারণ বেতন পাবার পর ছাত্র-শিক্ষক প্রত্যেকেই তার কাছ থেকে ধার নেয় এবং সে জানে ঐ টাকা ফেরত পাবার সম্ভাবনাও কম। এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের বয়স ছয় থেকে ছাব্বিশ বছর পর্যন্ত, কারণ এর আগে যারা স্কুলে পড়ার সুযোগ পায়নি তারা এখন ভর্তি হয়েছে। এখানে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা প্রত্যেক সকালে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে রোদ বৃষ্টি অগ্রাহ্য করে কিংবা নদী পার হয়ে স্কুলে আসে। তারা বাড়িতে পড়তে পারে না কারণ গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। চেলাকাঠের সামান্য আগুনে কতটুকুইবা পড়া যায় ! স্কুলের সময়টুকু ছাড়া মেয়েদের সারাদিনই ব্যস্ত থাকতে হয় নদী থেকে জল আনা ও রান্নার কাজে।
আমার বন্ধুর সাথে তার রুমে বসে যখন কথা বলি, লোকজন লাজুকভঙ্গিতে ভেতরে প্রবেশ করে। তাদের প্রত্যেকেÑ বলা চলে সবাই বইয়ের জন্যে মিনতি করে, বলে: “লন্ডনে ফিরে দয়া করে আমাদের জন্যে কিছু বই পাঠাবেন।” একবার এক লোক আমাকে বললো, “ওরা আমাদের পড়তে শিখিয়েছে ঠিকই কিন্তু কোন বই দেয়নি।” আমার সাথে যাদেরই দেখা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকে বইয়ের জন্যে এভাবেই আকুতি জানিয়েছে।
আমি বেশ কিছুদিন ওখানে ছিলাম; যথারীতি ধূলা উড়েছে; পাম্পগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় পানির অভাব ছিল প্রচণ্ড, তাই নারীরা আবার নদীমুখো হয়েছে।
লন্ডন থেকে আসা আরেকজন শিক্ষক ‘স্কুলের’ এমন অবস্থা দেখে অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন প্রায়। ওখানে আমার শেষ দিনটি ছিল স্কুলের শিক্ষাবর্ষেরও শেষ দিন। শিক্ষার্থীরা একটি খাসি জবাই করে বড় হাড়িতে রান্না করলো। বিদায়ীভোজের এটাই ছিল সেরা খাবার খাসির মাংসের সাথে যব-সেদ্ধ। ভোজ চলছিল, আর আমি ফিরে এলাম সেই কেটে রাখা আর পুড়ে যাওয়া গাছের মধ্যে দিয়ে। আমার মনে হয় না এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা কোন কারণে পুরস্কার পাবে। পরদিন আমি উত্তর লন্ডনের একটি স্কুলে এলাম। খুব ভাল স্কুল। আমরা সবাই ওটার নাম জানি। স্কুলটা শুধু ছেলেদের জন্য। আকর্ষণীয় ভবন; সুন্দর বাগান। প্রতি সপ্তাহেই এই স্কুলে বিখ্যাত ব্যক্তিরা আসেন। তাদের কেউ আসেন বাবা হিসেবে, কেউ মা হিসেবে। তাই সেলিব্রেটিদের আগমন এখানকার ছাত্রদের জন্যে বিশেষ কিছু নয়।
উত্তর-পশ্চিম জিম্বাবুয়ের সেই ধুলি-ধূসর স্কুলের চিত্র এখন আমার মানস পটে। আমার সামনের খানিকটা উৎসুক মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি এবং বলার চেষ্টা করছি গতসপ্তাহে আমি কী দেখেছি। ক্লাসরুমগুলোতে বই নেই- পাঠ্যবই নেই, মানচিত্রের বই নেই,এমনকি দেয়ালেও কোন মানচিত্র টাঙ্গানো নেই। সেই স্কুলের কথা বলার চেষ্টা করছি, যার আঠার-উনিশ বছরের শিক্ষকরা বইয়ের জন্যে মিনতি করে যে বই পড়ে তারা শিখবে কিভাবে পড়াতে হয়। আমি এই ছেলেদের বলছিÑ প্রত্যেকে, প্রত্যেকে বইয়ের জন্যে অনুনয়-বিনয় করে। বলে: “দয়া করে আমাদের জন্যে বই পাঠাবেন।” আমি নিশ্চিত, লন্ডনের এই স্কুলে যারা বক্তব্য দিচ্ছেন তারা এই দৃশ্যকে তখনই উপলদ্ধি করতে পারবেন যখন চোখ বন্ধ করবেন। শ্র্রোতারা আমার বক্তব্য বুঝতে পারবে না, কারণ আমার বক্তব্যের সাথে মিলিয়ে নেবার মত কোন ছবি তাদের মানস পটে আঁকা নেই। তাই বলছি, কল্পনা করুন ধূলির মেঘের  মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সেই স্কুলকে, যেখানে পানির জন্যে হাহাকার, আর শিক্ষাবর্ষের শেষে শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন করা হয় সদ্য জবাই করা খাসির মাংস দিয়ে।
কিন্তু লন্ডনের এই ছেলেদের জন্য দারিদ্র্যের এমন দৃশ্য কল্পনা করা সত্যিই কি অসম্ভব ?
আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এখানকার শিক্ষার্থীরা বেশ ভদ্র। আমি অনেকটা নিশ্চিত, এখানকার অনেকেই পুরস্কার জিতবে। এই স্কুলে আমার বক্তব্য শেষ হবার পর স্বভাব সুলভভাবে শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করলাম লাইব্রেরির অবস্থা কেমন, ছাত্ররা বই পড়েতো। আর বিশেষ সুবিধাভোগী এই স্কুলে আমি তাই শুনলাম যা অন্যান্য স্কুল, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও শুনে থাকি। তারা বললো, “আপনিতো জানেনই বাস্তবতা কেমন। এখানকার ছাত্রদের একটি বড় অংশ কখনোই বই পড়েনা। তাই লাইব্রেরিটাও পুরোপুরি ব্যবহৃত হয়না।” “আপনিতো জানেনই বাস্তবতা কেমন”। হ্যাঁ, আমরা সত্যিই জানি বাস্তবতা কেমন। আমরা সবাই জানি।


আরো পড়ুন: নোবেলজয়ী লুইস গ্লুকের কবিতা

আমরা এখন বহুখন্ডিত সংস্কৃতির মধ্যে বাস করছি যেখানে আমাদের ভবিষ্যত নিশ্চয়তাগুলো প্রশ্নবিদ্ধ।সাধারণভাবে লক্ষ্যণীয়, আমাদের তরুণ প্রজন্ম শিক্ষিত হয়েছে তেমনকিছু না পড়েই; বিশ্ব সম্পর্কে তেমনকিছু না জেনেই। তারা শিক্ষিত হয়েছে গুটি কয়েক বিষয়ের বিশেষত্ব শিখে, যেমন- কম্পিউটার। বিংশ শতকে যা ঘটেছে তা হল এক বিস্ময়কর আবিস্কার কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং টেলিভিশন। একটি বিপ্লব বটে। কিন্তু এটাই আমাদের তথা মানব জাতির জন্য প্রথম বিপ্লব নয়। এর আগেও বিপ্লব ঘটেছে মুদ্রণ বিপ্লব। সেটা  দুই-এক দশকের ব্যাপার ছিল না। এর জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। এই বিপ্লব আমাদের মনকে ও মননকে পাল্টে দিয়েছে। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমরা সবাই এটাকে মেনে নিয়েছিলাম। আমরা সবসময় যা করি এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা একবারও প্রশ্ন করিনি: মুদ্রণ যন্ত্র আবিস্কারের ফলে আমাদের কী লাভ হবে? ঠিক একইভাবে একবারও প্রশ্ন করিনি ইন্টারনেট কিভাবে আমাদের এবং আমাদের মনকে পরিবর্তন করবে? এই আবিস্কার পুরো প্রজন্মকে এমনভাবে তার অসারতার দিকে প্রলুদ্ধ করেছে যে সাধারণ বিচারবুদ্ধির মানুষও স্বীকার করবেন একবার ইন্টারনেটের কাছে আটকা পড়লে তা থেকে রেহাই পাওয়া খুব সহজ নয়। হয়তো দেখা যাবে পুরোদিনটাই ব্লগিং এর পেছনে ব্যয় হয়ে গেছে।
ইদানিং যে কোন ব্যক্তি এমনকি স্বল্প শিক্ষিতরাও জ্ঞান, শিক্ষা ও আমাদের বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডারের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করেন। অথচ আমরা জানি এই সুখের সময়ে অনেকেই পড়ার ভান করছে, জ্ঞানকে শ্রদ্ধা করার ভান করছে। কিন্তু স্পষ্ট দলিল আছে এক সময় শ্রমজীবী নারী ও পুরুষরা বইয়ের জন্যে ব্যাকুল ছিল। ১৮ ও ১৯ শতকের শ্রমজীবী মানুষের লাইব্রেরি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কলেজগুলো তারই সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। অধ্যয়ন, বই এসবই ছিল সাধারণ শিক্ষারই একটা অংশ। বয়োজ্যেষ্ঠরা এখনকার তরুণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললেই বুঝতে পারবেন বইপড়া কতটা শক্তিশালী শিক্ষা ছিল। কারণ এখনকার তরুণ শিক্ষার্থীদের জানার পরিধি খুব কম। যদি দেখেন শিশুরা পড়ছে না তবে বুঝবেন তাদের পড়ার অভ্যাস নেই। এই দুঃখের কাহিনী আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা এর পরিণতি জানি না।
আমরা নিশ্চয় একটি প্রবচন জানিÑ “পঠন একজন মানুষকে পরিপূর্ণ করে।” পঠন নারী ও পুরুষকে তথ্য, ইতিহাস ও সব ধরনের জ্ঞানে পরিপূর্ণ করে। আমরা হয়তো অতিভোজন সম্পর্কীত কৌতুকটি ভুলে গেছি।
পৃথিবীতে শুধু আমরাই মানুষ নই। এইতো কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু ফোন করে বললো, জিম্বাবুয়ের কোন একটি গ্রামে থাকাকালীন তারা সবাই তিনদিন অভুক্ত ছিল। কিন্তু তারপরও তারা বই নিয়ে আলোচনা করেছে, বই সংগ্রহের উপায় নিয়ে কথা বলেছে; অভুক্ত থাকা সত্ত্বেও তারা ঐ তিনদিন শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করেছে।
আমি ছোট্ট একটি সংগঠনের সাথে জড়িত যার উদ্ভব হয়েছিল জিম্মাবুয়ের গ্রামগুলোতে বই সরবরাহের উদ্দেশ্য নিয়ে। এর আগে একটি প্রতিনিধিদল অন্য এক কারণে জিম্বাবুয়ের তৃণমূল পর্যায়ে জরিপ চালিয়েছিল। তাদের প্রতিবেদনে জিম্বাবুয়ে সম্পর্কে যথেষ্ট ভিন্ন তথ্য ছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে জিম্বাবুয়ের গ্রামগুলো মেধাবী মানুষ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিশু-শিক্ষার্থী এবং প্রবীণ ব্যক্তিতে পরিপূর্ণ। আমি নিজেও একটি জরিপ চালিয়ে জানার চেষ্টা করেছিলাম সেখানকার লোকেরা কী ধরণের বই পড়তে চায়। কাকতালীয়ভাবে আমার জরিপের ফল একটি সুইডিস জরিপের ফলের সাথে মিলে গিয়েছিল। আমি যা জানলাম তা হলো, জিম্বাবুয়ের লোকেরা ঠিক তাই পড়তে চায় যা ইউরোপিয়ানরা পড়তে চায়। তাদের আগ্রহের বিষয়গুলোর মধ্যে সব ধরণের উপন্যাস, কল্পবিজ্ঞান, কবিতা, গোয়েন্দা কাহিনী, নাটক ও শেক্সপিয়রও রয়েছে। আর ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়মাবলী’র মত ‘নিজে কর’ জাতীয় বইয়ের অবস্থান ছিল তাদের পছন্দের তালিকার একদম নিচে। তারা শেক্সপিয়রের নাম জানে এবং তাঁর সব বই পড়তে চায়। কিন্তু গ্রামবাসীদের বই জোগার করার ক্ষেত্রে সমস্যা হল তারা জানেই না কোন বইটি বাজারে পাওয়া যায়। ফলে গধুড়ৎ ড়ভ ঈধংঃবৎনৎরফমব এর মত স্কুলের পাঠ্যবই তাদের কাছে জনপ্রিয়। কারণ এটি তাদের হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। একইভাবে অহরসধষ ঋধৎস এর মত উপন্যাস তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছে।
আমার ছোট্ট সংগঠনটি যেখান থেকে পেরেছে বই সংগ্রহ করেছে। কিন্তু ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে যাওয়া খুব সাধারণ মলাটের একটি বইয়ের দাম সেখানে কম করে হলেও এক মাসের বেতনের সমান। এটা অবশ্য রবার্ট মুগাবের ত্রাসের রাজত্বের পূর্বের কথা। আর বর্তমান মূদ্রাস্ফীতির মধ্যে এই মূল্য দাঁড়াবে কয়েক বছরের আয়ের সমান। কিন্তু তারপরও পেট্রোলের মহাসংকট সত্ত্বেও এক বাক্স বই যদি কোন গ্রামে নিয়ে যাওয়া যায় তবে গ্রামবাসীরা সেগুলো অশ্র“ দিয়ে বরণ করে নেবে। হয়তো কোন গাছের নিচে ইটের উপর তক্তা পেতে লাইব্রেরি বানানো হবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই সেখানে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। যারা পড়তে পারে তারা নিরক্ষরদের পড়তে শিখাবে; নাগরিকত্বের উপর ক্লাস হবে। ভেবে দেখুন, কোন এক প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে টোংগা (ঞড়হমধ) ভাষায় লিখিত কোন উপন্যাস নেই সেখানে একদল ছেলে উপন্যাস লিখতে বসে গেছে। এভাবে জিম্বাবুয়ের ছয়টি প্রধান ভাষায় উপন্যাস লেখা হয়ে গেছে যেগুলো সহিংসতা, অজাচার, অপরাধ ও হত্যার বর্ণনায় পরিপূর্ণ।
আমাদের সংগঠনটি প্রথম থেকেই নরওয়ের সহযোগিতা পেয়েছে, পরে সহযোগিতা করেছে সুইডেন। এ ধরণের সহযোগিতা ছাড়া আমাদের পক্ষে বই সরবরাহ করা সম্ভব হতো না। জিম্বাবুয়েতে প্রকাশিত উপন্যাস এবং ‘নিজে কর’ জাতীয় বই-ও আমরা বই পিপাসুদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
বলা হয়ে থাকে জনগণ যেমন, সরকারও তেমন। কিন্তু আমি মনে করি জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রে একথা সত্য নয়। মনে রাখতে হবে বইয়ের প্রতি তাদের এই শ্রদ্ধাবোধ ও আকর্ষণ মুগাবের শাসনামলে সৃষ্টি হয়নি, সৃষ্টি হয়েছিল তারও আগে শেতাঙ্গদের শাসনামলে। এটি এক বিস্ময়কর বাস্তবতা। বইয়ের এমন ক্ষুধা কেনিয়া থেকে উত্তমাশা অন্তরীপ পর্যন্ত সর্বত্রই চোখে পরবে।
অভাবনীয়ভাবে আরো একটি বাস্তবতার সাথে এর সম্পর্ক আছে। জিম্বাবুয়েতে আমি যে বাড়িতে বেড়ে উঠেছি সেটা ছিল মাটির তৈরী, ছনে ছাওয়া। পৃথিবীর যেখানেই নলখাগড়া বা ঘাস, উপযুক্ত কাদামাটি আর খুঁটি পাওয়া গেছে সেখানেই এ ধরণের বাড়ি তৈরি হয়েছে। সেক্সন ইংল্যান্ড তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যে বাড়ির কথা আমি বলছি তাতে চারটি রুম ছিল; পরপর চারটি রুম। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো পুরো বাড়িটাই ছিল বইয়ে ভর্তি। আমার বাবা-মা শুধু ইংল্যান্ড থেকে বই নিয়েই আসেননি, আমার মা মাঝে মধ্যেই বইয়ের জন্য অর্ডার পাঠাতেন। চমৎকার বাদামী রঙের পার্সেলে যে বইগুলো আসতো সেগুলোই ছিল কৈশোরে আমার আনন্দ, আমার উচ্ছ্বাস। সামান্য একটি মাটির ঘর অথচ বইয়ে পরিপূর্ণ। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ আমাকে চিঠি লেখে সেই গ্রামগুলো থেকে যেখানে হয়তো বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। তারা লেখে: “আমিও আপনার মত একজন লেখক হব, কারণ আপনি যে ধরণের বাড়িতে বড় হয়েছেন আমার বাড়িটাও ঠিক তেমনি।” কিন্তু সমস্যা হলো, তা হবার নয়।
লেখা, লেখক এমন কোন ঘরে সৃষ্টি হয় না যেখানে কোন বই নেই। তফাৎটা এখানেই; সমস্যাটাও এখানেই।
সম্প্রতি নোবেল জয়ী অনেকের বক্তব্যই আমি পড়েছি। পামুকের কথাই ধরুন। তিনি বলেছেন, তাঁর বাবার সংগ্রহে ১৫০০ বই ছিল। সুতরাং তাঁর প্রতিভা হাওয়ায় ভেসে আসেনি, তিনি এক মহান ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত ছিলেন। ভি. এস. নাইপল এর কথা ধরুন। তিনি উল্লেখ করেছেন, তাঁর পারিবারিক স্মৃতির পেছনে বেদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাঁর বাবা তাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছেন। আর ইংল্যান্ডে চলে আসার পর তিনি ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করেছেন। তাই তিনিও এক মহান ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এবার জন কোয়েৎজির কথা ধরুন। তিনি শুধু ঐতিহ্যের সাথে যুক্তই ছিলেন না, তিনি নিজেই ছিলেন এক মহান ঐতিহ্য। তিনি কেপটাউনে সাহিত্য পড়াতেন। আমি দুর্ভাগা কারণ এই মহাত্মার কোন ক্লাসে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়নি।
লেখার জন্য, সাহিত্য সৃষ্টির জন্য অবশ্যই লাইব্রেরি, বই ও ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
জিম্বাবুয়েতে আমার এক বন্ধু আছেন; তিনি একজন লেখক। মোরব্বার বয়াম ও সংরক্ষিত ফলের কৌটার লেবেল দেখে দেখে তিনি নিজেই পড়তে শিখেছিলেন। তিনি বড় হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এক গ্রামীণ অঞ্চলে। আমি সেখানে একবার গিয়েছিলাম। পুরো অঞ্চলটাই নুড়ি পাথর আর হালকা ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ। কুড়ে ঘরগুলো জীর্ণশীর্ণ, সচ্ছলতার কোন চিহ্ন নেই। একটা স্কুল আছে কিন্তু তার অবস্থাও আমার বলা আগের স্কুলটার মতই। আমার ঐ বন্ধু একবার আবর্জনার স্তুপে শিশুদের একটি বিশ্বকোষ কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এবং ওটা থেকেই তিনি জ্ঞানার্জন করেছিলেন।
১৯৮০ সালে স্বাধীনতার সময়েও জিম্বাবুয়েতে অনেক ভাল ভাল লেখক ছিলো। জিম্বাবুয়ে তখন গায়ক পাখিদের সত্যিকার আশ্রয়। তারা শিক্ষা লাভ করেছিলো তদানীন্তন দক্ষিণ রোডেশিয়ার শেতাঙ্গদের দ্বারা পরিচালিত অপেক্ষাকৃত ভাল মিশন স্কুলগুলোতে। জিম্বাবুয়েতে এখন আর লেখক জন্ম নেয় না। মুগাবের শাসনামলে লেখক হওয়া খুব সহজ নয়।
লেখক হওয়াতো দুরের কথা, নূন্যতম শিক্ষা অর্জন করতে সব লেখককেই বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আমি বলবো, মোরব্বার বয়ামের ছাপানো লেখা আর পরিত্যক্ত বিশ্বকোষ খুব বিরল কিছু ছিল না কিন্তু যে মানুষগুলোর কথা আমরা বলছি যারা শিক্ষার জন্যে আহাজারি করেছে, তারা এগুলো থেকেও অনেক দূরে ছিল। অনেক সন্তানে ভরপুর একটি কিংবা অনেক কুড়ে ঘর, একজন পরিশ্রান্ত মা এর অর্থই হলো খাদ্য ও বস্ত্রের জন্য সংগ্রাম। এতোসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও লেখকদের আবির্ভাব থেমে থাকেনি। আমাদের আরো একটা কথা মনে রাখতে হবে, জিম্বাবুয়ের দখলদারিত্বের সূত্রপাত প্রায় একশ বছর আগে। এসব মানুষদের দাদা-দাদীরা হয়তো পুরো গোত্রকেই গল্প  শুনাতেন তারা ছিলেন গল্প-কথক। এটা তাদের বাচনিক ঐতিহ্য। কিন্তু দু-এক প্রজন্ম পরই এসব মৌখিক গল্পগুলো ছাপার অক্ষরে রূপান্তরিত হয়েছে; বইয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এটা অনেক বড় অর্জন।
এখানকার বইগুলো আক্ষরিক অর্থে আবর্জনার স্তুপ থেকে পাওয়াÑ শেতাঙ্গরা যেগুলো পরিত্যাগ করেছে। যদি টাইপ করা কিছু কাগজকে বই বানাতে চান তবে আপনাকে একজন প্রকাশক খুঁজতে হবে। যিনি আপনাকে কিছু টাকা দেবেন, নিজে সচ্ছল থাকবেন এবং বইগুলো বিতরণ করবেন। কিন্তু উত্তর আফ্রিকার মত স্বতন্ত্র ঐতিহ্যের অধিকারী স্থানেও এমন কিছু চিন্তা করা স্বপ্নের মত।
আমি সেইসব বইয়ের কথা বলছি যেগুলো কখনোই লেখা হয়নি, লেখকরা লেখতে পারেনি কারণ তাদের প্রকাশক ছিল না। তাদের কণ্ঠস্বর অশ্র“তই রয়ে গেছে। মেধা ও সম্ভাবনার এমন অপচয় কখনো নিরূপন করা সম্ভব নয়। একটি বই সৃষ্টির যে পর্যায়ে প্রকাশক, অগ্রিম অর্থ এবং প্রেরণার প্রয়োজন হয় তার পূর্বেই এমন আরো অনেক কিছুর ঘাটতি থেকে যায়।
প্রায়ই লেখদের জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কিভাবে লিখেন? কম্পিউটারে? টাইপ রাইটার দিয়ে? পাখির পালক দিয়ে? নাকি সাধারণ কলম দিয়ে? কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, “আপনি কি কোন স্থান খুঁজে পেয়েছেন, সেই শূন্য স্থান যা লেখার মুহূর্তে আপনাকে ঘিরে থাকবে? যে স্থানে শব্দ, চেতনা, অনুপ্রেরণা এসে জড়ো হবে; যে শব্দগুলো আপনার সৃষ্ট চরিত্র উচ্চারণ করবে। যদি কোন লেখক এই শূন্য স্থান খুঁজে না পান তবে তার কবিতা, তার গল্প হবে সদ্যজাত মৃত সন্তান।” যখন লেখকরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন, তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কি ঐ স্থান খুঁজে পেয়েছেন ? আপনি কি ঐ স্থানকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছেন ?”
এখন চলুন দৃশ্যত কিছুটা ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। ধরুন আমরা বিশ্বের অন্যতম বড় শহর লন্ডনে আছি। এখানে একজন নব্য লেখিকা আছেন। অনেকটা ছিদ্রান্বেষী ব্যক্তির মত আমরা লক্ষ্য করছি, তার স্তন কেমন ? সে কি সুন্দরী? কিংবা সে যদি পুরুষ হয়Ñ তবে কি সে ক্যারিশম্যাটিক ? হ্যান্ডসাম ? আমরা এসব নিয়ে কৌতুক করি কিন্তু এগুলো কৌতুক নয়।
এই নব্য লেখক/লেখিকারা প্রসংসিত, স্বীকৃত। হয়তো তাকে অনেক অর্থ-কড়িও দেওয়া হয়েছে। পাপারাৎসিদের বিরক্তিকর ভনভন শব্দ তাদের কানে আসতে শুরু করেছে। তারা সর্বত্র সম্মানিত হচ্ছে, প্রসংসীত হচ্ছে আর জগত সম্পর্কে দ্রুত মত পাল্টাচ্ছে। আমরা যারা প্রবীণ, যারা এসব দেখেছি তারা এই নব্য দীক্ষিতদের জন্যে দুঃখবোধ করছি। কারণ ওদের ধারণাই নেই আসলে কি ঘটছে।
তাদের তোষামোদ করা হচ্ছে; তাদের তুষ্ট করা হচ্ছে। কিন্তু ঠিক এক বছরের মাথায় তাদের জিজ্ঞেস করুন এখন তারা কী ভাবছে। আমি জানি, কারণ আমি শুনেছি, তারা বলবে, “এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে ঘটনা।” শুরুতে অনেক প্রচার পেয়েছেন কিন্তু পরে আর লেখেননি কিংবা যা লেখতে চেয়েছিলেন, যা বুঝাতে চেয়েছিলেন পরে তা পারেননি, এমন লেখক বহু আছে।এখান থেকে অনেক কিছু শিখার আছে।
আফ্রিকার মন্ত্রমুগ্ধ স্মৃতিতে আমার মন পরিপূর্ণ। আমি চাইলেই এই স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারি। আফ্রিকাকে ফিরে দেখতে পারি। কী চমৎকারই না ছিল সূর্যাস্তগুলো সোনালি, লাল আর কমলা আভা সন্ধ্যার আকাশকে  আচ্ছন্ন করছে। কালাহারীর সুগন্ধী ঝোপঝাড়ে সেই উড়ন্ত প্রজাপতি, পতঙ্গ আর মধুমক্ষিকাগুলো। কিংবা আমি বসে আছি জাম্বেসি নদীর তীরে, শুকনো মৌসুম, মলিন ঘাসের তীরে লুটোপুটি খাচ্ছে জাম্বেসির জল। ঘন সবুজ আর উজ্জ্বল বর্ণের আফ্রিকার সমস্ত পাখিরা এসে ভিড় করেছে এই তীরে। হাতি, জিরাফ, সিংহ আরো কত কি! কোন কমতি নেই। আর রাতের আকাশ! এখনো নিষ্কলঙ্ক, কালো ও বিস্ময়কর। চঞ্চল নক্ষত্রখোচিত।
আমার আরো স্মৃতি আছে। এক তরুণ, বয়স আঠের হবে; অশ্র“সজল চোখে তার লাইব্রেরিতে দাঁড়িয়ে আছে। এক আমেরিকান পর্যটক তার বইশূন্য লাইব্রেরি দেখে এক বাক্স বই পাঠিয়ে দিয়েছেন। সে খুব যত্নের সাথে একটি  একটি করে বই বের করছে আর প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে রাখছে। আমরা বললাম, “কিন্তু এই বইগুলোতো পড়বার জন্যেই পাঠানো হয়েছে, তাই না? সে বলেছিল, “না, এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে, এরপর আর কোথায় পাব ?”
সে আমাদের অনুরোধ করেছিল ইংল্যান্ড থেকে কিছু বই পাঠাবার জন্য যেগুলো পড়ে সে শিখবে কিভাবে অন্যদের পড়াতে হয়। সে অভিযোগ করে বলেছিল, “আমি সিনিয়র স্কুলে চার বছর পড়েছি কিন্তু তারা আমাকে শিখায়নি কিভাবে স্কুলে পড়াতে হয়।” আমি এক স্কুল শিক্ষককে দেখেছি যার স্কুলে কোন পাঠ্য বই নেই, এমনকি এক টুকরো চকও নেই সব চুরি হয়ে গেছে। তিনি পাথর দিয়ে ধূলাতে লিখেন আর বলেনÑ“দুই দুগুনা চার … ” এরকম আরো অনেক কিছু। আমি একটি মেয়েকে দেখেছি, যার বয়স বিশের উপর হবে না। তার অবস্থাও একইÑ বই, খাতা, কলম কিছুই নেই। প্রখর রোদ আর ধূলার ঘূর্ণির মধ্যেও সে লাঠি দিয়ে মাটিতে দাগ কেটে বাচ্চাদের অ, ই, ঈ, উ শেখায়।
এখানে আমরা দেখছি  যে, আফ্রিকাতে শিক্ষার ক্ষুধা সৃষ্টি হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের যে কোন স্থানে কিংবা বিশে^র যে কোন অংশে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। কারণ শিক্ষা তাদের দারিদ্র্য থেকে শিক্ষার সুফলগুলোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আমাদের শিক্ষা এখন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। আমি আপনাদের একটি দৃশ্য কল্পনা করতে অনুরোধ করবো। কল্পনা করুন, প্রচন্ড অনাবৃষ্টির সময়ে আফ্রিকার দক্ষিণ ভাগে কোন এক দারিদ্র্য পীড়িত অঞ্চল। সেখানে একটি ভারতীয় দোকানে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার মত আরো অনেকেই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে; তাদের অধিকাংশই নারী। পানি ভরে রাখার সর্ব প্রকার পাত্র তাদের হাতে । প্রতিদিন বিকেলে শহর থেকে এই দোকানে পানির চালান আসে আর এই মানুষগুলো সেই মহামূল্যবান পানির জন্যে অপেক্ষা করছে।
ভারতীয় লোকটি কাউন্টারে ভর দিয় দাঁড়িয়ে এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে দেখছে। তার হাতে কয়েকটি কাগজ, দেখে মনে হচ্ছে কোন বইয়ের ছেঁড়া অংশ। সে আসলে আন্না কারিনিনা পড়ছে।
ঐ কৃষ্ণাঙ্গ নারী খুব ধীরে ধীরে শব্দগুলো উচ্চারণ করছে। স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে বইটা কঠিন। এই তরুণীর দুটো সন্তান তার পা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে; সে গর্ভবতী। ভারতীয় লোকটি বিমর্ষ কারণ এই তরুণীর মাথায় পেঁচানো সাদা স্কার্ফটি ধূলায় হলুদ হয়ে গেছে। তার দুই বাহু আর স্তনের মাঝখানে ধূলার আস্তর পরে গেছে। ঐ ভারতীয় বিমর্ষ, কারণ লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলো তৃষ্ণার্ত কিন্তু তার কাছে যথেষ্ট পানি নেই। সে ক্ষুদ্ধ কারণ সে জানে ধূলিমেঘের ওপারে মানুষ মারা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে তার ভাইও এখানে ছিল কিন্তু বিশ্রামের কথা বলে সে শহরে গেছে। আসলে অনাবৃষ্টির কারণে তার ভাইও অসুস্থ। ভারতীয় লোকটি যথেষ্ট উৎসুক। সে ঐ তরুণীকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কী পড়ছো?”
মেয়েটি বললো, “এখানে রাশিয়া সম্পর্কে লিখা আছে।”
ঐ ভারতীয় আবার জিজ্ঞেস করলো, “তুমি জান রাশিয়া কোথায়?”
এবার তরুণীটি সরাসরি তার দিকে তাকালো। যদিও ধূলার আঘাতে চোখ লাল হয়ে গেছে তবুও তার চোখে-মুখে গর্বের ছাপ স্পষ্ট। সে বললো, “আমি ক্লাসের সবচেয়ে সেরা ছাত্রী ছিলাম। আমার শিক্ষক বলেছেন, আমিই সবার সেরা।”
সে আবার পাঠে মনোযোগ দিল। সে সম্পূর্ণ প্যারাগ্রাফটি শেষ করতে চায়। ভারতীয় লোকটি এবার ছোট বাচ্চা দু’টোর দিকে তাকায় এবং ফান্টার বোতলের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তাদের মা বাঁধা দিয়ে বলে, “ফান্টা ওদের পিপাসা আরো বাড়িয়ে দেবে।”
ঠিক হবেনা জেনেও ঐ ভারতীয় কাউন্টারের পেছেনে লুকিয়ে রাখা একটি কন্টেইনার থেকে দু মগ পানি ভরে বাচ্চা দু’টোকে এগিয়ে দেয়। সন্তানদের পানি খাওয়া দেখে ঐ তরুণীর মুখও কিছুটা নড়ে ওঠে। দোকানী তাকেও এক মগ পানি দেয়। তার যন্ত্রণাদায়ক তৃষ্ণা ঐ ভারতীয়কে আরো ব্যাথিত করে।
এবার সে নিজের জন্যে রাখা কন্টেইনারটি তরুণীকে দিয়ে দেয়। মা ও তার সন্তানরা গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকে যাতে এক ফোটা পানিও ছলকে পড়ে না যায়। সে আবার বইয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে। সে খুব ধীরে ধীরে পড়ছে কিন্তু প্যারাটি তাকে এতোটাই মুগ্ধ করেছে যে, সে দ্বিতীয়বার পড়তে শুরু করেছে।
“ভারেনকা আজ কালো চুলে সাদা স্কার্ফ পড়েছে। বাচ্চারা তাকে ঘিরে রেখেছে। আজ সে উৎফুল্ল, হাসিখুশি। তার আকাঙ্খিত পুরুষ আজ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। কোজনিশেভ কাছে এসে দাঁড়ায়। তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ভারেনকার মুখ থেকে যত মিষ্টি কথা সে শুনেছিল, তার যা কিছু ভাল সে জানতো, কোজনিশেভের আজ সব মনে পড়ে যায়। তার মনে পড়ে যায় সেই প্রথম যৌবনের অনুভূতি ভারেনকাকে নিয়ে তার স্বপ্ন একেবারে সাদামাটা ছিল না। এটা অবশ্য অনেকদিন আগের কথা। কিন্তু এতোদিন পরে হলেও আজ সে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এটাও কম আনন্দের নয়। কোজনিশেভের এ আনন্দ আরো বেড়ে যায় যখন ভারেনকার ঝুড়িতে একটি লম্বা, প্যাচানো মাশরুম রাখার অজুহাতে সে তার চোখে চোখ রাখে। ভারেনকার অপূর্ব মুখে আনন্দের ঝিলিক, ভয়ও কিছুটা আচ্ছন্ন করে তাকে। কোজনিশেভ খানিকটা দ্বিধান্বীত হয়ে পড়লেও মুহূর্তেই সে দ্বিধা কেটে যায়। ভারেনকার যাদুময়ী মুখের দিকে তাকিয়ে সে হাসে, নিরবে হাসেÑ সে হাসি বলে দেয় অনেক কিছু।” এই ছাপানো কথাগুলো দোকানের কাউন্টারে পড়ে আছে কিছু পুরনো ম্যাগাজিন আর পত্রিকার সাথে।
এই স্বর্গীয় দোকান ছেড়ে যাবার সময় হয়েছে। ঐ তরুণীকে দু’টো বাচ্চা নিয়ে পুরো চার মাইল পথ হেটে ফিরে যেতে হবে তার গ্রামে। “সময় হয়ে গেছেÑ পানি দিন”, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলারা এভাবেই শোরগোল করতে থাকে; নালিশ করতে থাকে । কিন্তু দোকানী তাতে কান দেয় না। সে জানে বাড়িতে ফেরার পর এর জন্য এই তরুণীকে কতটা মূল্য দিতে হবে। সে স্থির করেছে টেবিলে পড়ে থাকা বইয়ের পাতাগুলো মেয়েটিকে দিয়ে দেবে। যদিও এখনো সে বিশ্বাস করেনা বইটি পড়ে মেয়েটি কিছু বুঝতে পারবে।
আন্না কারেনিনার এক তৃতীয়াংশ কেনইবা এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভারতীয় দোকানে এলো? এর একটা কারণ আছে।
জাতিসংঘের কোন এক কর্মকর্তা প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের সময় এই উপন্যাসের একটি কপি সাথে রাখেন। বিমানের বিজনেস ক্লাসে বসে প্রতিবারই তিনি এই মোটা বইটিকে ছিড়ে তিন টুকরো করেন। এতে তার পড়তে সুবিধে হয়। প্রতিটি খণ্ড পড়া শেষ করে তিনি পাঠিয়ে দেন বিমানের পেছনে থাকা তার সেক্রেটারির কাছে। এতে বিমানের যাত্রীদের মধ্যে এক প্রকার ঔৎসুক্য সৃষ্টি হয়। তারা বইটির নাম জানতে চান। এভাবেই আন্না কারোনিনা নামটি যাত্রীদের মানস পটে লিপিবদ্ধ হয়ে যায় চিরদিনের জন্যে।
আমরা আবার সেই দোকানে ফিরে আসি। কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েটি এখনো কাউন্টারেই দাঁড়িয়ে আছে। সে জিন্স পড়ে কিন্তু উপরে থাকে উলের স্কার্টÑ আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী পোষাক। এই স্কার্ট ধরে তার বাচ্চা দু’টো দাঁড়িয়ে আছে। সে দোকানীর দিকে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকায়। সে জানে লোকটি তাকে পছন্দ করে, তার জন্যে সে ব্যাথিত। দোকন থেকে বের হয়ে মেয়েটি আবার হাটতে শুরু করে ধূলি মেঘের দিকে। বাচ্চারা কাঁদতে শুরু করেছে। তাদের গলায় ধূলা আটকে গেছে। ধূলার স্তুপের উপর দিয়ে এক পা দু’পা করে এগিয়ে যাওয়া খুব কঠিন, সত্যিই কঠিন। কঠিন কিন্তু সে এতে অভ্যস্ত ছিল। তাই নয় কি? তার মন পড়েছিল সেই গল্পের মধ্যে। সে ভাবছিল: আমিও ভারেনকার মত। মাথায় সাদা স্কার্ফ। সেও বাচ্চাদের দেখাশুনা করে। আমিও তো তার জায়গায় থাকতে পারতাম। আর সেই পুরুষ  যে তাকে ভালবাসে, তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে! আমারও তো এমন কেউ থাকতে পারে। যে আমাকে এসব কিছু থেকে মুক্তি দেবে। আমাকে, আমার  সন্তানদেরকে গ্রহণ করবে। আমাকে ভালবাসবে। আমার দায়িত্ব নেবে।”
সে চলছে। ইতোমধ্যে পানির কন্টেইনারটি আরো ভারি হয়ে উঠেছে। বাচ্চারা কান্টেইনারের ভিতর পানির শব্দ শুনতে পায়। মাঝপথে সে থামে । বাচ্চারা তৃষ্ণায় কাতর, বারবার কন্টেইনারটি ছুঁয়ে দেখছে। কিন্তু ওদের মা জানে বাড়িতে পৌঁছার আগে সে এটা খুলতে পারবে না। ধূলায় সবটুকু পানি নষ্ট হয়ে যাবে।
সে সন্তানদের অপেক্ষা করতে বলে। তাকে আবার চলতে হবে।
তার মনে পড়ে, ঐ দিকে একটি লাইব্রেরি আছে। একটি সুপার মার্কেটের চাইতেও বড় লাইব্রেরি। সে হাসছে। আফ্রিকান ধূলো এই তরুণীর মুখে আছড়ে পড়ছে অথচ সে হাসছে! তার কল্পনায় এখন তারই প্রতিচ্ছবি আমি মেধাবী, শিক্ষক বলেছেন আমি মেধাবী। স্কুলের সবার চাইতে বেশি মেধাবী। আমার মত আমার সন্তানরাও মেধাবী হবে। আমি ওদের লাইব্রেরিতে নিয়ে যাব বইয়ে পরিপূর্ণ লাইব্রেরিতে নিয়ে যাব। ওরা স্কুলে যাবে; ওরা শিক্ষক হবে। আমার শিক্ষক বলেছিলেন আমিও শিক্ষক হতে পারবো। ওরা এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবে, অর্থ উপার্জন করবে। ওরা বড় লাইব্রেরিটার কাছে থাকবে আর সুন্দর  জীবন যাপন করবে।
আপনারা জিজ্ঞেস করতে পারেন, কাউন্টারের উপর ঐ রাশিয়ান উপন্যাসটি কি কখনো শেষ হবে না ?
এটা আরেকটা গল্প। হয়তো অন্যকেউ আপনাদের বলবে। সেই গরিব মেয়েটি, যে চলার পথে ভাবছিল বাড়ি গিয়ে  সন্তানদের মুখে পানি দেবে, নিজে খাবে। সে এখনো ভয়ংকর ধূলার মধ্য দিয়েই হাটছে।
আমাদের বিপন্ন বিশ্বে আমরা এখন পরিশ্রান্ত। নিষ্ঠুরতা, এমনকি নৈরাশ্যবাদ বজায় রাখতে আমরা অনেক দক্ষ। কিছু কিছু শব্দ ও চিন্তাকে আমরা খুব কম ব্যবহার করি। ফলে সেগুলো এখন ক্ষয়প্রাপ্ত। কিন্তু যে শব্দগুলো তাদের তীব্রতা হারিয়েছে আমরা হয়তো তাদের পুনপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতে পারি।
আমাদের বিপুল সম্পদ আছে। এই সম্পদ আমাদের সাহিত্য মিশরিয় সাহিত্য, গ্রিক সাহিত্য, রোমান সাহিত্য। এই সম্পদ বার বার আবিস্কৃত হবে; ভাগ্যবানরাই আবিষ্কার করবে। যদি আমাদের এই সম্পদ না থাকতো আমরা কতোটাই না নিঃস্ব আর দেউলিয়া হয়ে যেতাম!
আমাদের উত্তরাধিকার ভাষার উত্তরাধিকার, কাব্যের উত্তরাধিকার, ইতিহাসের উত্তরাধিকার। এই উত্তরাধিকার কখনোই নিঃশেষ হবে না। এটি আছে এবং থাকবে। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি কিচ্ছা-কাহিনী। এগুলো আমাদের অর্পিত সম্পদ। তাদের কারো নাম আমরা জানি, কারোটা জানি না। তারা চলে গেছেন দূরে, বহুদূরে। অরণ্যের কোন এক বৃক্ষহীন চত্বরে; যেখানে বৃদ্ধ জাদুকর অগ্নিকুণ্ডের চারপাশে নৃত্যরত। কারণ আমাদের এই ঐতিহ্যের উদ্ভব জাদু-মন্ত্র থেকে, আগুন থেকে, আধ্যাত্মিক জগত থেকে। এবং আজও এই ঐতিহ্য একইভাবে লালিত।
যে কোন আধুনিক গল্পকথককে জিজ্ঞেস করুন, তারাও বলবেন আগুন তাদেরকে স্পর্শ করেÑ যাকে আমরা বলি অনুপ্রেরণা। তারা বলবেন এই আনুপ্রেরণা আমাদের উদ্ভবের আদিপর্বে নিয়ে যায়। আমাদের নিয়ে যায় সেই আগুন, বরফ ও বাতাসের কাছে যারা আমাদের এবং আমাদের জগতকে সুবিন্যস্ত করেছে।
এই গল্পকথকরা আমাদের প্রত্যেকের গভীরেই আছে; এই গল্পকাররা সবসময় আমাদের সাথেই আছে। ধরুন, আমাদের বিশ্ব এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত, ত্রাসের রাজত্ব। যার ভয়াবহতা খুব সহজেই কল্পণা করা যায়। ধরুন, আমাদের জনপদগুলো বানের জলে ভেসে যাচ্ছে, সমুদ্র ফুঁসে উঠেছে। কিন্তু তারপরও আমাদের গল্পকথকরা থাকবে। কারণ আমাদের কল্পণা আমাদের সুবিন্যস্ত করে, আমাদের রক্ষা করে, আমাদের সৃষ্টি করেÑ মঙ্গল এবং অমঙ্গলের জন্যে। যখন আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হব, আঘাতে জর্জরিত হব, এমনকি ধবংস হয়ে যাব তখন এই গল্প এবং গল্পকথকরা আমাদের পুনর্জন্ম দেবে। এই গল্পকথক, এই স্বপ্নদ্রষ্টা, এই পূরাণ স্রষ্টা এরাই আমাদের ফিনিক্স পাখি; আমাদের সৃষ্টিশীলতার সর্বোত্তম নজির। সেই গরিব মেয়েটি, যে ধূলার মধ্যে দিয়ে পা টেনেটেনে হাঁটছে, সন্তানদের শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখছে, আমরা কি তার চেয়ে খুব ভাল আছি? আমাদের রান্নাঘর কি খাবারে পরিপূর্ণ? আমাদের আলমারি কি কাপড়ে ঠাসা? প্রাচুর্য কি আমাদের শ্বাসরোধ করতে চাচ্ছে?
আমি মনে করি, যে তরুণী এবং নারীরা তিন দিন অভুক্ত থাকা সত্ত্বেও বই এবং শিক্ষা নিয়ে কথা বলেছে, হয়তো তারাই একদিন আমাদের ব্যাখ্যা করবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত