| 2 মে 2024
Categories
ঈদ সংখ্যা ২০২০

সেই বাড়িটা

আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট

অফিস টাইমে মেট্রো জ্যান্ত হয়ে ওঠে। সাপের মতো জ্যান্ত। খিদে পেলে সাপ ব্যাঙের পিছনে দৌড়ে তাকে ধরে গিলে নেয়, ব্যাঙের কথা ভাবে না। এখানে অবশ্য উল্টো। যারা অফিসে যাচ্ছে তারা জেনেবুঝে ঢুকে যেতে চায় মেট্রোর হাঁ মুখের মধ্যে।
সিঁড়ির ধাপে ধাপে লাফাতে লাফাতেও রাজদীপের চোখ এদিক ওদিক। বাকিরাও তার মতো প্র‌াণ হাতে দৌড়চ্ছে কি?
ট্রেন ঢুকে গেছে প্ল্যাটফর্মে। ধরতে পারবে কিনা সে কথা ভুলে মনে মনে হা হা হেসে উঠল সে। গা ঘেঁষে একজন বেরিয়ে গেল। মোটাসোটা মানুষ, ভুঁড়ি নিয়ে হাঁফাচ্ছে। ‘সিঁড়ি ভাঙতে হাসি পাচ্ছে আপনার? তাও এই সময়!’ বিরক্তিতে কথাটা ছুড়ে দিয়ে আগে লাফিয়ে উঠল লোকটা।
অন্য দিন এসক্যালেটর বয়ে তুলে দেয় সকলকে। আজ সেটা নেই বলে যার যার নিজের স্পিড দরকার। সবারই আজ হার্ডল রেস।
লোকটার কথা শুনে রাজদীপ বুঝতে পারল হাসি শুধু মনে নয়, তার ঠোঁটেও লেগে আছে। সে দেখল, মাঝখানের এক একটা ধাপে পা না রেখে টপকে টপকে উঠছে লোকটা। কেন হাসছি তা যদি জানতেন! সাপ আর ব্যাঙের গল্প ভাবছি যে। তাছাড়া মাসে তিন-চারদিন তো এসক্যালেটর খারাপ থাকেই। না হেসে ডাক ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে উঠলে বুঝি খুশি হতেন আপনি!
কথাগুলো পুরো শোনাতে পারল না রাজদীপ। একটুও নয়। কারণ সবই সে মনে মনেই বলেছে আর লোকটা ততক্ষণে ওপরে মিলিয়ে গিয়েছে। হাঁফাতে হাঁফাতে সেও উঠল ওপরে। এখনও মেট্রো ছাড়েনি। কয়েকজন দু’হাতে ট্রেনের পেট চিরে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। এ দৃশ্য রোজকার। এ সময়টায় ভিড় হয় খুব। রাজদীপও নিজেকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্যাগ মাথার ওপর তুলে অন্যের পিঠে পেট ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
আলিবাবার গুহার মতো ঘষা খেতে খেতে চিচিং বন্‌ধ। নেতাজি স্টেশন ছেড়ে ট্রেন চলতে শুরু করেছে।
উঠে দরজার সামনেই থাকতে চাইছিল রাজদীপ। আগে কোনওদিনও দেখতে পায়নি। আজ আর একবার চেষ্টা করবে। বাইরেটা দেখতে চায় সে। বুঝতে চায়, ওটা তার চোখের ভুল না কি সত্যিই আছে বাড়িটা। ঘুরে দাঁড়াতে পারলে কাচের ওপর নাক ঠেকিয়ে দিয়েও চেষ্টা করবে। যদি অবশ্য দরজার কাছে টিকে থাকতে পারে। বেশি সময় পাওয়া যাবে না। ঘুরে দাঁড়ালও সে। না, নেই। জায়গা ভুল হয়নি তার। নেই বাড়িটা।
হতাশ হয়ে নিজেকে ভিড়ের মাঝে উৎসর্গ করল রাজদীপ। ঠেলাঠেলিতে মাঝখানে পৌঁছে গিয়েছে সে। একটা খ্যানখ্যানে গলা শুনতে পেল। ‘ওরে বাবা রে… মরে গেলাম যে… আর চাপ নিতে পারছি না, হাড়গুলো সব ভেঙেই গেল বোধহয়।’
এবার একটা গনগনে গলা। ‘আরে থামুন তো, অনেকক্ষণ থেকে শুনছি। বাবা গো, মরে গেলাম, হাড় ভেঙে গেল। চাপ আমাদেরও নিতে হচ্ছে। আপনি এত চেঁচাচ্ছেন কেন?’
আবার সেই খ্যানখ্যানে। ‘চেঁচাচ্ছি কি সাধে! আপনি নিজেকে দেখুন আর আমাকে দেখুন। আপনার তো পিয়ানোর রিড। সহজে ভাঙবে না। আমার হারমোনিয়ামের। পট পট করে ভেঙে যাবে। তাও চাপ নিতে হয়।’
সমবেত হাসি। খ্যানখ্যানের বাক্যবাণে গনগনে থেমেছে।
এতক্ষণে জায়গাটা যে পেরিয়ে গিয়েছে তা পরিষ্কার বুঝতে পারে রাজদীপ। আদিগঙ্গা কবেই খালপাড়। তার ধারেই বাড়িটা। আবার সেই আসার সময় দেখতে হবে।
সে চোখ বুলিয়ে নিতে থাকে ভেতরে। ঝাঁকুনিতে মানুষগুলো স্থির হতে পারছে না কিন্তু তার মধ্যেই অনেকে একহাতে মোবাইল ধরে মুখের সামনে তুলে রেখেছে। হোয়াট্‌স অ্যাপ, ফেসবুক, চ্যাট। সবচেয়ে বেশি হল গেম। খেলা চলছে। ঘাড় নিচু, দৃষ্টি আটকে ফোনের স্ক্রিনে। রডের গায়ে লেপ্টে, অন্যের ঘাড়ে খোঁচা দিয়ে, ভেস্টিবিউলের ঢেউয়ে চেপেও খেলা চলেই।
ট্রেন মহানায়ক উত্তমকুমারের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। আবার একচোট হচ্ছে। ‘আরে দাদা, নামবেন না তো গেট আটকে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’
‘আমি ঠিক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে। ছোঁয়া লাগলেই যদি জাত যায়, পাবলিক প্র‌পার্টি ছেড়ে প্র‌াইভেট গাড়ি কিনুন না।’
এসব কানে আসবেই। চুপচাপ হ্যান্ডেলে নিজেকে ঝুলিয়ে রেখেছে রাজদীপ। দিনের আলোয় বাড়িটা সে দেখতে পেল না। আগে ভিড়ের মধ্যেও উঁকি দিয়েছে বাইরে। চারপাশের পুরো জগৎটাই মুখস্থ। লকগেট, সারি সারি দোকানঘর, ফ্ল্যাট, বস্তি, গাছেদের ঝাঁকড়া মাথা, আশ্রম, পাড়ার ভেতরের সরু সরু গলিরাস্তা। কিন্তু বাড়িটাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
লোক উঠছে, নামছে, একটার পর একটা স্টেশন চলে যাচ্ছে পিছনে। সামনেও আরও কত স্টেশন। রাজদীপ নামল এসপ্ল্যানেড। পিছনের গেট দিয়ে বেরোল। যেমন রোজ বেরোতে হয়। এদিকেই তার অফিস।
অন্য আরও অফিস, ধাক্কাধাক্কি, হর্ন, জুতো, টাই, তেলেভাজার দোকান, আখের রস, চায়ের স্টল সব পিছনে রেখে রাজদীপ ঢুকে পড়ল অফিস বিল্ডিংয়ে। পৌঁছে গেল দোতলায় নিজের টেবিলে। এখন সে এক মেশিনের পেট থেকে বেরিয়ে আর এক মেশিনের সামনে। পিঠের ব্যাগটা নামিয়ে রাখল ডেস্কের নীচে। চেয়ারটা এগিয়ে নিয়ে বসে পড়ল। কম্পিউটার অন করল। কাল থেকে একটা নতুন সফ্‌টওয়্যার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পেজটা খুলল। মাউস ঘোরাতে লাগল। কার্সারটা ঘুরছে স্ক্রিনে।
‘রাজদা, একটা ফাইল পাঠিয়েছি। এরর ছিল, বাগ ফিক্সেশন করে দিয়েছি। একবার চেক করে নাও।’ এক পাশের টেবিল থেকে অনির্বাণের গলা।
তাদের কোম্পানি প্রোডাক্ট সফ্‌টওয়্যার তৈরি করে। প্রোডাক্ট অ্যাপও। রাজদীপের মতো অনেকে মিলে বানায়। ক্লায়েন্ট জোগাড় করার জন্য মার্কেটিং এক্সিকিউটিভরা ঘোরে। ডেমো দিতে হয়। তারপর সাপোর্ট, ইমপ্লিমেন্ট, ডেভলেপমেন্ট। তারপর বেচতে হয়। বেশিটাই নেয় ডিস্ট্রিবিউটররা। তেমন ক্লায়েন্ট হলে ইন হাউস সেলও হয়। অনেক সময় ক্লায়েন্ট নিজেই আসে। কোম্পানি চেনা হয়ে গিয়েছে বাজারে। ক্লায়েন্টদের রিকোয়ারমেন্ট থাকে। রাজদীপরাও ইনপুট দেয়। সারা বছরই নতুন নতুন কাজ হচ্ছে। বড় বড় অফিসগুলোয় তাদের তৈরি সফ্‌টওয়্যার চলছে। প্রোমোশন পেয়ে রাজদীপ দে প্রোডাক্ট ম্যানেজার।
‘মাথাটা ভার ভার লাগছে। চা খেতে পারলে হত।’
রাজদীপের কথায় অনির্বাণ বলল, ‘আশাবুলের কাছে ঘুরে এসো না।’
রাজদীপ আজ কিছুতেই কাজগুলো মাথায় বসাতে পারছে না। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব। বারবার ভেসে উঠছে সেই বাড়িটা। দু’দিকের দুটো জানলাই বন্ধ। অথচ দরজাটা খোলা। সেখানে ঝোলানো একটা ময়লা পর্দা। হাওয়ায় উড়ছে। ভেতরটা অন্ধকার। সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছে ঘরের ভেতর থেকে ফুঁড়ে উঠেছে একটা অশ্বত্থগাছ। বাড়িটার চারপাশে খানিকটা জমি। তবে মনে হয় যেন মাটি নয়, ছাই পড়ে আছে। একটা আগাছাও নেই সেখানে। রাতে দেখে বলেই কি ওরকম লাগে? বাড়িটার তো নিজের কোনও আলো নেই। চারপাশ থেকে যেটুকু এসে পড়ে তাতেই যা দেখা যায়। আচমকাই একদিন চোখ চলে গেছিল ওই ছায়া ছায়া অন্ধকারে।
প্র‌থমবার দেখার পর সেই রাতেই বাড়িটা ফিরে এসেছিল তার স্বপ্নে। পরদিন সকালে রাজদীপ বুঝতেই পারছিল না, সে সত্যিই দেখেছিল? না কি শুধু্‌ই স্বপ্ন? পরে আর খেয়াল ছিল না। তারপর আরও একদিন অফিস থেকে ফেরার সময় চোখে পড়ল। ঠিক কতদিন আগে তা মনে পড়ে না।
কবেকার কথা। তাদের বাড়িটাও ছিল একতলা। দুটো ঘর, রান্নাঘর, কলঘর। সামনে কিছুটা জায়গা। বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি। একটা রঙ্গন গাছ লতিয়ে থাকত দেওয়ালের গা ঘেঁষে। বাবা চাকরি করত কাশীপুর গানশেল ফ্যাক্টরিতে। রোজ ভোরবেলা বেরোত। বাবার সঙ্গেই বেরিয়ে পড়ত রাজদীপও। সে যাবে মাঠে। ফুটবল প্র‌্যাকটিসে। বাসে ওঠার আগে পিঠে হাত রেখে রোজই বাবা বলত, ‘যা এবার।’
‘স্যার, চা।’
অফিসে চায়ের মেশিন আছে। পাউডারের সঙ্গে গরম জল মেশানো। ভাল লাগে না। কাজের চাপে বেরোতে পারা যায় না। প্র‌ায় রোজই ওই খেতে হয়। মাথার মেশিনটা ঠিক রাখতে মাঝে মাঝে ফুটপাতে আশাবুলের দোকানের চা। রাজদীপ বলল, ‘হ্যাঁ, দাও। তবু তোমার চা খেলে মনে হয় বেঁচে আছি।’
‘কী যে বলেন স্যার, শুনলে লজ্জা লেগে যায়।’ পান চিবোনো লালচে দাঁতগুলো মেলে দেয় আশাবুল। অফিসের অনেক বাবুই তার দোকানে আসে। কারও কারও টাকা বাকিও পড়ে যায়। আশাবুল জানে, বাড়ি ফেরার আগে তারা ঠিক টাকা দিয়ে যাবে।
রাজদীপ দেখল দেবজিৎও বেরিয়ে এসেছে। তার হাতে ভাঁড় ধরিয়ে দিল আশাবুল। চায়ে চুমুক দিয়ে দেবজিৎ বলল, ‘আমাদের আশাবুল খুব সেয়ানা। বোকা বোকা সেজে থাকে। কিন্তু এই করেই প্র‌চুর কামিয়ে নিল। টাকা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। বসিরহাটে দোতলা বাড়ি হাঁকিয়ে নিয়েছে।’
দোকান যেমন কে তেমন রেখেই কেটলিতে চা ঢেলে, প্লাস্টিকের কাপ গুছিয়ে হাসি টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেল আশাবুল। আরও অনেক জায়গাতেই সারাদিন চা দেয়। সন্ধেবেলায় কাস্টমারদের কাছ থেকে টাকা কালেকশন করে।
বাইরে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। অফিসে ঢুকে চেয়ারে বসতে বসতে দেবজিৎ বলল, ‘শালা একটা চায়ের দোকান দিলেও হত। রোজ রোজ চাকরি বাঁচানোর জন্য কাজের প্রে‌শারে মরতে হত না।’
চুক চুক আওয়াজ করল অনির্বাণ। মাথা দোলাতে দোলাতে বলল, ‘কাজে মন দাও, কাজে মন দাও।’ তারপর যেন দেবজিতের দুঃখ ঘোচাতে বলল, ‘অত সোজা ভেবো না। অফিসে আমাদের চায়ের মেশিন, তাও ঠান্ডা ঘরে। আর বাইরে আশাবুল উনুনের আগুনের সামনে। সারাদিনে কত কাপ চা বানায় জান! ও-ও একটা মেশিন। তাছাড়া তুমি-আমি দোকান দিলেও লোক আসবে না। আমাদের যে ভদ্রলোকের মতো দেখতে ভাই। আশাবুলের চেহারাটা দেখছ তো? ও হল কঙ্কাল ক্লাবের সেক্রেটারি!’
আশেপাশে যারা রয়েছে তারা কেউই অনির্বাণের কথায় না হেসে পারল না। হেসে ফেলল রাজদীপও। তারপর মনে হল, খেটে খেটেই হয়তো আশাবুলের চেহারা ওইরকম হয়েছে। তাতে কী? আমাদের সকলের ভেতরেই তো একটা করে কঙ্কাল রয়েছে। তার ওপর মাংস চাপানো। যাতে চোখে না লাগে তাই চামড়ায় মোড়া। কারও চকচকে, কারও ফ্যাকফ্যাকে।
এই অফিসে ঢোকার কয়েকদিন পর আশাবুলের দোকানে গিয়ে অবাক হয়েছিল রাজদীপ। পেলে, মারাদোনা, মেসি, রোনাল্ডোর পাশাপাশি বাইচুং ভুটিয়ার ছবিও ঝুলছে। একেবারে ফ্রেমে বাঁধানো।
সেদিনই জানতে চেয়েছিল রাজদীপ, ‘আপনি ফুটবল পছন্দ করেন?’
দুধের মধ্যে গুঁড়ো চা ফেলতে ফেলতে আশাবুলের মুখ চকচক করে উঠেছিল। ‘আমাকে আপনি করে বলবেন না স্যার, লজ্জা লাগে। ওই একটি খেলাই আমি ভালবাসি। আগে খেলেছিও খুব। একটা সময়ের পর সব ছুটে গেল। তাই ছবিগুলো বাঁধিয়ে ঘরে রেখেছিলাম। কিন্তু সেখানেও থাকতে পাই না বেশিদিন। তাই ওগুলো দোকানে এনে ঝুলিয়েছি। রোজ দেখতে পাই।’
‘তুমি খেলতে! ছাড়লে কেন?’
‘ছাড়ার কি একটা কারণ স্যার! কিছু সময় অবদি কেউ বাধা দেয় না। আপনি যত খুশি দৌড়োন। কিন্তু যেই আপনি এগোতে শুরু করেছেন অমনি পায়ে বেড়ি পড়ে যায়।’
রাজদীপ সেদিন দাঁড়িয়ে ছিল চুপচাপ। রাইট উইঙ্গার পোজিশনে খেলত সে। ইচ্ছে ছিল বড় প্লেয়ার হবে। খেলতে খেলতে পৌঁছেও গিয়েছিল সেকেন্ড ডিভিশনে। কোচ রতনদা তার আগে থেকেই বলত, ‘তুই একদিন বড় টিমে খেলবি। শুধু ড্রি‌বলটা আরও প্র‌্যাকটিস কর। ওখানে উইক আছিস।’
ড্রি‌বল করতে করতেই স্কুল, কলেজ শেষ করেছিল রাজদীপ। তারপর সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন অ্যান্ড প্রোডাক্টের কোর্স। চাকরি খুঁজতে দৌড়তে হল তাকে। বড় টিমে খেলা আর হয়নি। বলটাই তো ফসকে গেল। ফাঁকা পায়ে ছুটতে ছুটতে একদিন ঢুকে পড়ল একটা অফিসে। সেখান থেকে এখানে। দুটো মিলিয়ে এইসব মেশিনের মধ্যেই কাটিয়ে ফেলল বারোটা বছর।
মাথা ডানদিক-বাঁদিকে কাত করে ঘাড়ের ব্যায়াম করছিল অনির্বাণ। চেয়ার থেকে একবারও না উঠে কীভাবে ব্যায়াম করা যায় তা শেখানোর জন্য মালিক ইনস্ট্রাকটার এনেছিল একবার। মাঝে মাঝে ব্যাপারটা ঝালিয়েও নেওয়া হয়। সে বলল, ‘এনি প্র‌বলেম রাজদা? অনেকক্ষণ যাবৎ থম মেরে বসে আছ।’
রাজদীপ কম্পিউটার থেকে চোখ সরাল। ‘আচ্ছা ধরে নে, আমাদের অফিসটা খেলার মাঠ। মেশিনগুলো ফুটবল হয়ে গেছে। আমরা সেগুলো শট মেরে মেরে গোলপোস্টে পাঠাচ্ছি। একটা গোল একটা করে ইচ্ছেপূরণ, কেমন হবে তাহলে!’
‘তোমার কথার মাথামুণ্ডু কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।’ রাজদীপের সঙ্গে আর কথা বলা ঠিক হবে কিনা ভেবেই বোধহয় রিভলভিং চেয়ার ঠেলে মেশিনের দিকেই ঘুরে গেল অনির্বাণ।
স্ক্রিনের ওপর চোখ রেখে বসে রইল রাজদীপ। বাবা তো তাই চেয়েছিল। গোল দেবে ছেলে। কিন্তু রাইট উইঙ্গারের উইং ছাঁটা পড়েছে। সংসার আর অফিসের চাপে পরের পর গোল খাচ্ছে রাজদীপ। গোলকিপারও তো নয় যে আটকাবে!
নিয়মমতে সাতটায় অফিস ছুটি। অনেকে বেরোতে পারে। কেউ কেউ আর একটু পরে। রাজদীপ পারে না। তারপরেও এক-দেড় ঘণ্টা বাঁধা থাকে সে। স্টেশনে পৌঁছতে কুড়ি মিনিট মতো যায়। তখন কিছুটা ফাঁকাই থাকে ট্রেন। কোনও কোনওদিন বসার জায়গাও পাওয়া যায়।
আজও পেয়েছিল। মোবাইলটা বাজছে। পকেট থেকে বার করে দেখল— ঈপ্সিতা। ‘হ্যাঁ, বলো। না না, মেট্রোয় উঠে গেছি। মনে আছে। একই কথা মনে করাচ্ছ চোদ্দোবার ফোন করে করে! ছাড়ো এবার।’
ভুরুদুটো জোড়া লেগে গেছে রাজদীপের। আগে আরও দু’বার ফোন এসেছিল ইপ্সিতার। লেজুড় হয়ে মেসেজও। এই এক মহিলা। মেয়ের পড়া পড়া করে পাগল হয়ে যাচ্ছে। যদিও পুরোপরি দোষও দিতে পারে না রাজদীপ। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর সঙ্গে তাল মেলানো দায়। পড়া তো আছেই। তার সঙ্গে ক্লাস ফোরের বাচ্চাদেরও নাকি প্রোজেক্ট। ছোলাগাছ নিয়ে যেতে হবে স্কুলে। প্রোজেক্ট তো স্টুডেন্টদের নয়, মা-বাবাদের। পুরো ব্যাপারটাই একটা গেম। আর খেলায় তো কম্পিটিশন থাকবেই। ড্রিবলে উইক হলে চলবে না। গোল করতেই হবে। অ্যাম্বিশন রাখো, ভাল স্টুডেন্ট হও, মোটা চাকরি খোঁজো, বলির পাঁঠার মতো মাইনের নীচে মাথা পেতে দাও।
ফাঁকা ট্রেনেও কেউ কারও দিকে তাকায় না আজকাল। সেই অনেকগুলো হাত মোবাইল ধরে মুখের সামনে তুলে রেখেছে। ঘাড় ঝুঁকে পড়েছে। মাথাগুলো নীচের দিকে ঝুলছে। ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি আটকে গিয়েছে।
টালিগঞ্জ ছেড়ে ট্রেন যখন রওনা দিল, উঠে দাঁড়াল রাজদীপ। কারশেড ছাড়িয়ে, উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটগুলো পাশে রেখে ট্রেন ওপরে উঠছে, ঘষা কাচের ভেতর দিয়ে রাজদীপ সেই বাড়িটা দেখার অপেক্ষায় ছিল।
হ্যাঁ, ওই তো। সামান্য আলো মেখে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটা। খালপাড়ের সেই ফাঁকা জায়গাটায়। অশ্বত্থগাছটার ডালপালাগুলো যেন আগলে রেখেছে সেটাকে। দেখতে দেখতেই, ছোট হতে হতে একেবারে মিলিয়ে গেল বাড়িটা।
ট্রেন ঢুকে গেছে স্টেশনে। হুড়মুড়িয়ে নেমে পড়ল মানুষগুলো। মুহূর্তের মধ্যে সিঁড়িতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছে। এসক্যালেটরেও ভিড়। সকলেরই তাড়া। দু’মিনিট অপেক্ষা করে যাওয়ার মতো সময়টুকুও হাতে নেই কারও।
রাজদীপ ধীর পায়ে এগোচ্ছিল। কারা থাকত ওখানে? কেন চলে গেল বাড়িটাকে একলা ফেলে? যা ভাঙাচোরা অবস্থা তাতে ওরকম জায়গায় কারও থাকার কথা নয়। ভেতরে কী অন্ধকার। তাহলে দরজায় পর্দা ওড়ে কেন এখনও?
নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে পৌঁছেও দাঁড়িয়ে রইল রাজদীপ। তারপর মুখ তুলে দেখল একবার। চারতলা বিল্ডিং। বিরাট এক দানব। কত চোখ জ্বলছে। কতগুলো ফ্যামিলিকে পেটের ভেতর পুরে রেখেছে।
বাবার যখন সেরিব্রাল হল সে সময় টাকার খুব দরকার পড়েছিল। তখনই জায়গাটা প্রোমোটারকে দিয়ে দেওয়া হয়। কিছু ক্যাশ আর দুটো ফ্ল্যাট পেয়েছিল তারা। এখন মা-বাবা একতলায় থাকে। টপ ফ্লোরে থাকে রাজদীপ, ইপ্সিতা, তিতলি।
একতলার কলিংবেলের সুইচ টিপল রাজদীপ। দরজা খুলল মা। ‘এই ফিরলি? আয়।’ প্র‌ায় রোজই একই কথা বলে মা।
বসার ঘরে সোফায় বসে পড়ল রাজদীপ। অফিসে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়োয় হয় না। ফেরার পথে রোজ একবার দেখা করে যায় বাবা-মার সঙ্গে। ইপ্সিতাও খোঁজ রাখে। একে একসঙ্গে থাকাই বলে। মাঝখানে শুধু আটচল্লিশটা সিঁড়ির দূরত্ব।
‘শরীর-টরীর ঠিক আছে তো তোমাদের? বাবা কোথায়?’
‘কোথায় আবার। পাশের ঘরে টিভি চালিয়ে বসেছে।’ দরজা খুলে দিয়েই রান্নাঘরে চলে গিয়েছিলেন প্র‌তিভা। সেখান থেকেই চেঁচিয়ে উত্তর দিলেন। একটু পরে প্লেটে একটা সন্দেশ আর জল নিয়ে এসে দাঁড়ালেন ছেলের সামনে। ‘এটুকু মুখে দিয়ে নে।’
‘আবার তুমি ওসব নিয়ে এসেছ? কতবার না বলেছি, ফ্রেশ না হয়ে কিছু খেতে ইচ্ছে করে না আমার।’
‘আচ্ছা বুঝেছি, সারাদিন খেটেখুটে ফিরিস। নে।’
রাজদীপ প্লেট থেকে মিষ্টি তুলে নিল। জল খেয়েই উঠে পড়ল। ‘বাবাকে বোলো আমি এসছিলাম। দরজা বন্ধ করে দাও। সময়মতো খেয়ে নিও, দেরি কোরো না।’
নিজেদের ফ্ল্যাটে এসে ঢুকল রাজদীপ। দরজা খুলেই ঈপ্সিতার প্র‌শ্ন— ‘ছোলা এনেছ?’
এই যাঃ, ভুলে মেরে দিয়েছে। রাজদীপ বলল, ‘টালিগঞ্জ অবদি মনে করে এলাম। তারপরেই মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। কী হয়েছে জান—’
বাধা দিয়ে ঈপ্সিতা বলল, ‘থাক, আর শুনে কাজ নেই। আমি জানতাম তুমি ভুলে যাবে। একবারের বেশি ফোন করলেও তোমার রাগ হয়। কবে ছোলা আসবে আর কবেই বা তার গাছ তৈরি হবে—’
তিতলি এতক্ষণ বাবার চারপাশে ঘুরছিল। সে বলল, ‘মা, তুমি বাবাকে বকো না।’
মেয়েকে কোলে তুলে নিল রাজদীপ। এই একটা জানলা তার যেখানে সে প্রাণভরে শ্বাস নেয়।
ঈপ্সিতাকে বোঝানোর চেষ্টায় রাজদীপ বলল, ‘প্রোজেক্ট নিয়ে অত মাথা খারাপ কোরো না। তিতলি তো এখন নিচু ক্লাসে। না হলে না হবে। উঁচু ক্লাসে গেলে কী করবে তুমি? নিজের ওপর চাপ বাড়িও না, মেয়েকেও কোনওরকমের চাপ দিও না।’
গুম মেরে রইল ঈপ্সিতা। বাড়িতে ছোলা এসে তার গাছ তৈরি হয়ে স্কুলে না পৌঁছনো পর্যন্ত ঘরের পরিবেশ এরকমই থাকবে। ঈপ্সিতাকে চেনে রাজদীপ।
হাত-মুখ ধুয়ে আসার পর মেয়ের কাছে গিয়ে বসল রাজদীপ। হোমওয়ার্ক হয়ে গিয়েছে। তার সামনে খোলা বই। মা রান্নাঘরে রয়েছে বুঝে নিয়ে সে ফিসফিস করে বলল, ‘আমার আর পড়তে ভাল লাগছে না বাবা।’
‘ভাল লাগছে না? ঠিক আছে, কী করতে চাও বলো?’
‘ড্রইং করব? করি?’
‘হ্যাঁ, আঁকো না।’
মেয়ে খাট থেকে লাফ দিয়ে নেমে খাতা, পেনসিল আর রঙের বাক্স নিয়ে চলে এল। ‘তুমি বলে দাও কী আঁকব।’
‘তোমার যা ইচ্ছে হয়।’
‘না, তুমি বলো।’
রাজদীপ খানিকক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর যেন খুব গোপন কথা বলছে এইভাবে বলতে লাগল, ‘তুমি একটা বাড়ির ছবি আঁকো। তার ভেতর থেকে একটা গাছ উঠে গেছে। দরজায়—’
ইপ্সিতা চলে এসেছে। মেয়েকে বলল, ‘এখন ওসব নিয়ে বসলে কেন, অ্যাঁ! রাখো, শুয়ে পড়ো। কাল স্কুল নেই!’
তিতলি গোমড়া মুখে উঠে যাচ্ছে। কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়ল রাজদীপও। ইপ্সিতা কত্থক নাচত। বিয়ের পরও একবার একটা প্রোগ্র‌াম করেছিল। সেই শেষ। তার ফেসবুক প্রোফাইলে সেদিনের সেই মেক-আপ করা পুরনো ছবিটাই দিয়ে রেখেছে এখনও। তবে মেয়েকে নাচ শেখাতে চায় না সে।
রাতের খাওয়া সেরে চুপচাপ মেয়ের পাশে শুয়ে পড়ল রাজদীপ। বই পড়ার অভ্যেস অনেকদিন আগেই ছাড়তে হয়েছে। বেশি রাত পর্যন্ত আলো জ্বললে অসুবিধে হয়। সকালে তিতলির স্কুল থাকে।
রাজদীপ বাড়িটার কথা ভাবছিল। দিনেরবেলায় কি ওটা ওখানে থাকে না? তাই কখনও হয়! অথচ রাতে দেখা যায়। অদ্ভুত! কাছে গিয়ে দেখতে পারলে হত একবার।
ভাঙাচোরা বাড়ি। নোনা ধরা দেওয়াল। তেলাকুচো ইটগুলোকেই আঁকড়ে ধরে বেয়ে উঠেছে। সঙ্গে আরও সব লতানো গাছ। বন্ধ জানলাগুলো কাঠের। চারপাশে শুধু ঝিঁঝির ডাক। ঘরের মাঝখানে সেই অশ্বত্থগাছটা শিকড় গেড়ে দাঁড়িয়ে।
পা ফেলে ফেলে গাছটার চারপাশে একবার ঘুরে এসে দাঁড়াল রাজদীপ। ঘাড় উঁচিয়ে ওপরটা দেখার চেষ্টা করল। চাক বেঁধে থাকা অন্ধকারের মধ্যে অনেক জোনাকি উড়ছে। তাদের আলো জায়গাটাকে আকাশ করে রেখেছে। এখানে এই গাছটা কেন? সে তো গৌতমবুদ্ধ নয়। কোনও বোধিবৃক্ষের ছায়াতল তো অপেক্ষা করে নেই তার জন্য। ছটফট করছে বুকের ভেতরটা। অশ্বত্থের মধ্যে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। দু’হাত বাড়িয়ে গাছটাকে বেড় দেওয়ার চেষ্টা করল। হল না। নখের আঁচড় কেটে ওপরে ওঠার চেষ্টা করতে লাগল। পারল না। হড়কে ধুপ করে পড়ে গেল।
ধড়মড় করে উঠে বসল রাজদীপ। কোথায় সে! প্র‌থমে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছিল। থিতু হয়ে দেখল বিছানায় বসে আছে। আবার তার স্বপ্নে ফিরে এসেছিল বাড়িটা। পায়ের তলায় মাটি ছিল না। তবে পাশে বউ, মেয়ে রয়েছে। সাতশো স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটটাও আছে। তার পৃথিবী তো এটাই। কী হয়েছে তাহলে তার! কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে সে!
পরের দিন তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল রাজদীপ। ঈপ্সিতাকে বলল অফিসে জরুরি মিটিং আছে।
মেট্রো স্টেশন ডানহাতে রেখে খালপাড় ধরে হাঁটছিল রাজদীপ। এসব জায়গায় আসেনি কখনও এমন তো নয়। আটত্রিশ বছর ধরে এদিকেই তো রয়েছে সে। কম সময় তো নয়। আগে এদিকে একটা মেলা বসত। ছোটবেলায় সার্কাস দেখতে এসেছে। মরণকূপের খেলা। সেই চম
কা মাঠে এখন সার দিয়ে ব্যাঙ্কের কোয়ার্টার। আরও খানিকটা হেঁটে থেমে গেল রাজদীপ। এরকম জায়গাতেই তো থাকার কথা। উঁচু কোনও বাড়ির আড়ালে পড়ে গেল? কিন্তু সেই বাড়িটার চারপাশে তো ফাঁকা জায়গা আছে খানিকটা। তাহলে দেখতে পাচ্ছে না কেন? যে দোকানগুলোকে মেট্রো থেকে দেখা যায় সেগুলো খোলা। সবই তো নিজের জায়গায় আছে। বাড়িটা গেল কোথায়!
সাইকেল সারানোর একটা দোকানের সামনে থামল রাজদীপ। তেল-কালি মাখা গেঞ্জি গায়ে মেকানিক একটা চাকার টাল ভাঙছে। রাজদীপ তাকেই বলল, ‘দাদা, একটা বাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। বলতে পারবেন?’
মুখ তুলে দেখল লোকটা। ‘নাম জানেন কারও?’
‘না, জানি না। তবে বাড়িটা পুরনো, ভাঙাচোরা।’
‘ওরম বাড়ি এখানে কোথায়? নম্বর জানেন?’
‘নাঃ, তাও জানি না।’
‘বলতে পারব না।’ লোকটা নিজের কাজে মন দিল।
সামনের চৌমাথায় এগিয়ে গেল রাজদীপ। চায়ের দোকানে কয়েকজন বসে, দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। এগুলো মিস্ত্রি, দালাল আর ঠিকাদারদের ঠেক। সে একজনকে জিজ্ঞেস করল, ‘দাদা, এখানে একটা বাড়ি আছে, খালপাড়ের ওদিকটায়। ভাঙাচোরা। কেউ থাকে না বোধহয়। বলতে পারেন?’
লোকগুলো এ ওর মুখে চাইল। এতক্ষণ রোদে ঘুরে ঘুরে রাজদীপের মাথার চুল এলোমেলো। ঘামে ভেজা শার্ট। একজন বলল, ‘বাড়ির নম্বর জানা আছে?’
‘না।’ কেন যে রাজদীপ বিরক্ত হল। ‘জানা থাকলে তো নিজেই খুঁজে বের করে নিতাম।’
‘নম্বর না জেনে কলকাতায় বাড়ি খুঁজে পাওয়া যায়!’ যেন সবার হয়ে কথাটা একজনই বলল।
‘কোথা থেকে আসছেন?’
‘আমি কাছেই থাকি।’
‘তালে খুঁজে পাচ্ছেন না কেন? চেনা বাড়ি নয়? আগে আসেননি কখনও?’
‘না, তবে বাড়িটা পুরনো। ভাঙা ঘর, তার মধ্যে একটা অশ্বত্থগাছ আছে।’
লোকগুলো রাজদীপকে খুঁটিয়ে দেখছে। কী ভাবছে? তাকে পাগল ঠাওরাচ্ছে বোধহয়।
‘এ তল্লাটে ওরকম কোনও বাড়ি আছে বলে তো আমার জানা নেই।’ এই উত্তরটা দিল চায়ের দোকানদার।
আর কেউ কোনও কথা বলছে না। অবাক হয়ে গেল রাজদীপ। বাড়িটাকে সে ছাড়া কেউই দেখেনি! অতবড় একটা গাছ, তাও কারও চোখে পড়েনি!
ভাবতে ভাবতে হাঁটছিল রাজদীপ। আরও খানিকটা খুঁজে দেখবে। থামতে হল। ফোন টিং টিং করে উঠেছে। বের করে দেখল— অফিস। ফোনটাকে ছুড়ে খালের জলেই ফেলে দিতে ইচ্ছে হল তার। পারল না। ভাইব্রেশন মোডে দিয়ে প্যান্টের পকেটে ফেলে রাখল। তারপর আবার হাঁটতে লাগল। তবে এবার উল্টো পথে। মেট্রোর দিকে। অফিসে তো যেতেই হবে।
রাজদীপ জানে, রাতে যখন ফিরবে তখন ঠিক দেখতে পাবে সেই বাড়ি আর গাছটাকে। আজ, কাল, পরশু— রোজই দেখতে পাবে কিন্তু কাছে গেলেই আর খুঁজে পাবে না।
নাই-বা পেল খুঁজে। দেখতে পাওয়াটা কি কম!

 

 

 

 

 

 

 

2 thoughts on “সেই বাড়িটা

  1. অসাধারণ । অসাধারণ। অসাধারণ!! ফুটবলপাগল ছিলাম প্রথম জীবনে, সবুজ বয়সের স্বপ্ন গু‌ঁড়ো গুঁড়ো হয়ে মিলিয়ে গিয়েছে কবেই। গল্পটির শুরু কয়েক লাইন পর থেকেই সম্পূর্ণ মনোযোগ কেড়ে নেয়। অনেক পাঠকের মতো হয়তো আমারও অন্তরতম অনুভূতির প্রতিচ্ছবি রাজদীপের মধ্যে। ড্রিবলিং না শিখলে জীবনের ইঁদুরদৌড়ে ছিটকে যেতে হয়, তথাকথিত সুখ-স্বাছন্দ‍্যের প্রলোভনে আহূতি দিতে হয় সব অপূর্ণ স্বপ্ন, ভালবাসার সমস্ত বাহুল্য। অসম্ভব বলিষ্ঠ লেখনী আপনার। শ্রদ্ধা এবং শুভেচ্ছা নেবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত