irabotee.com,Love Marriage

ইরাবতী ধারাবাহিক: খোলা দরজা (পর্ব-৮) । সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

Reading Time: 3 minutes

তবে সবকিছু এখনও ফুরিয়ে যায়নি।মাঝেমাঝে দুপুরবেলা শিলকাটাই হাঁক দিয়ে যায়, ‘শিল কাটাই,…, শিল কাটাই…।” ভরা দুপুরের শূন্যতায় বড় মনকেমন করা সেই ডাক, যেন পিছনের দিনগুলোকে মনে করিয়ে দেয়।

আমাদের মত কিছু মানুষ যারা মিক্সির সঙ্গে সঙ্গে শিলও ব্যবহার করেন তারা ওই ডাকের প্রতীক্ষায় থাকেন। কেননা শিল না কাটালে মিহি করে সর্ষে পোস্ত বাটা যাবে না।

 

irabotee.com,Love Marriageআইসক্রিমের গাড়ি এখনও আসে ।তবে সেই আগেকার মত পাড়ায় পাড়ায় খুব একটা ঘুরতে দেখিনা। কোন স্কুল বা পার্কের সামনে, কিংবা মেলাতলায়, অথবা সিনেমা হলের চাতালে, মুখে শীতল গাম্ভীর্য মেখে দাঁড়িয়ে থাকে তারা। যদিও অনেক খুঁজেও পাঁচপয়সার সাদা কাঠি বরফ আইসক্রিম পাইনি আমি।আসলে আকাশের নীল রঙ, কিংবা শিউলি ফুলের বোঁটার লাল রঙ আগেও ছিল, এখনও আছে,ভবিষ্যতেও থাকবে।হারিয়ে গিয়েছে সেই কচি হাতের সহজ মুঠো।যা খুললেই পাঁচ পয়সার বিনিময়ে সাদা বরফের কাঠি ধরা দিত।

গরমের দিনের দুপুরবেলা এখনও আসে ছাতা সারাইওলা।তবে গিন্নিরা অফিসে ,তাই তাকে বসতে বলে জল বাতাসা দেয় না কেউ।কাজ থাকলে ফ্ল্যাটবাড়ির চৌহদ্দির এক কোনায় নিজের আসন বিছিয়ে বসে পড়ে সে। তারপর খুটখুট করে নিজের কাজ শুরু করে দেয়।অনেক ছাতাও জড়ো হয় দেখতে দেখতে।

“বঁটিতে, ছুরিতে শান দেবে গো” বলে হাঁক দেয় কেউ কেউ।বাড়ির সামনে ঘড়ঘড় আওয়াজ করে শুরু হয়ে যায় ছুরি বঁটিতে শান দেওয়ার পর্ব।মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় এই সব মানুষগুলো ছিল আমাদের জ্যান্ত হিরো।কতদিন অভি- ভাবকদের অজান্তে এদের আমরা দল বেঁধে অনুসরণ করেছি। এপাড়া থেকে ওপাড়া ওদের গাড়ির পেছন পেছন ছুটেছি।সেই ছোটাছুটির সময়  প্রায় প্রত্যেকে মনে করেছি বড় হয়ে একজন আইসক্রিমওয়ালা অথবা ছুরি কাটাইওলা কিংবা নিদেনপক্ষে ছাতা সারাইওয়ালা হব।

অনলাইনে সব পাওয়া যায়, কিন্তু এমন জ্যান্ত হিরো  পাওয়া যায় কি?


আরো পড়ুন: ইরাবতী ধারাবাহিক: খোলা দরজা (পর্ব-৭) । সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়


irabotee.com,Love Marriage

লাভ ম্যারেজ

‘লাভম্যারেজ’ কথাটা আজকাল তার কৌলিন্য হারিয়েছে।আমাদের ছোটবেলায় লাভম্যারেজের এক ভয়ংকর গুরুত্ব ছিল।গুরুত্বটি কেন ভয়ংকর ছিল ধীরে ধীরে তা উন্মোচন করা যাক।

মনে আছে বঙ্কুর দিদির  বিয়ের সময় কথাটা প্রথম কানে আসে।মাকে পাশের বাড়ির সুমনা কাকিমা ফিস্‌ফিস্‌ করে বলছিলেন “জান সবিতা লাভম্যারেজ করছে।”

মা ততক্ষণে আমার উপস্থিতি লক্ষ করে ফেলেছেন। চোখ পাকিয়ে আমাকে স্থানছাড়া করার ফলে বাকি কথা আমার শোনা হয়না।আমি দ্বারস্থ হই বিশ্বপাকা সুনীলের।ও আমাকে  বলে “সে কী রে,লাভম্যারেজের মানে জানিস না? ‘লাভ’ মানে ভালবাসা, ‘ম্যারেজ’ মানে বিয়ে।সবিতাদি তো বিনোদিনী মানে মেয়েদের স্কুলের টিচার,আর পুলক স্যার তো পাশের বয়েজ স্কুলে এই কিছুদিন হল এসেছেন।সবাই জানে ওরা লাভম্যারেজ করছেন।”

সবাই সব জানে,অথচ আমি কিছুই জানি না, এহেন বোকামীতে থতিয়ে গিয়ে  আমি বলি,“তারমানে?”

সেই মানে খুঁজতে গিয়ে দেখেছিলাম,কথাটা মোটেই সহজ নয়।রীতিমত গোলমেলে । কেননা সবিতাদির বিয়েতে তার বড়দা সুকুমারদা উপস্থিত ছিলেন না।পরে দেখলাম সবিতাদির মেজদা  অনুপমদা  সবিতাদির সঙ্গে কথা বলছেন না।একেবারে থমথমে আবহাওয়া।গোটা বিয়েটাতেই কেমন একটা নিরানন্দের ছাপ।আমার জীবনে দেখা প্রথম ‘লাভম্যারেজ’ এক ঝটকায় তার ভয়ংকর চেহারা দেখিয়ে দিয়েছিল।

চোখের সামনে দেখেছিলাম আর এক কনেকে বাবা ভাইএর ভয়ে সুড়সুড় করে অন্য লোকের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে।বড় অভাগা ছিল তারা।যদিও বিয়ের পর সেই মিঠুদিকেই দেখেছিলাম দিব্যি হাসিমুখে ঘোরাফেরা করতে।তাদের ‘লাভ’ হয়েছিল, ‘ম্যারেজ’ হয়নি।

খুব অবাক হয়েছিলাম এইটে পড়াকালীন যখন শুনি আমাদের স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষিকা লাভ ম্যারেজ করেছেন।ভূগোলের কড়া লীনাদি বা বাংলার মমতাদিরও লাভম্যারেজ হয়েছে।

এবার শব্দ দুটো ভেঙে নিয়ে  আলোচনা করা যাক।তখন ‘লাভ’ শব্দটাকে সমাজে সংসারে, বেশির ভাগ মানুষই  খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখত না।হিন্দী বা বাংলা সিনেমায় যদিও লাভের পক্ষে বেশ বড় বড় বাক্যবন্ধ ব্যবহার করা হত।কিন্তু ম্যারেজের সময় ছবি বিশ্বাসের মত রাশভারি অভিনেতারা বাবা সেজে, মুখে পাইপ গুঁজে, সিল্কের ড্রেসিংগাউন পরে প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়তেন।সিনেমাতেও অধিকাংশ ‘লাভ’, ‘ম্যারেজ’ অবধি গড়াত না।কখনও গড়ালেও তাকে অবধারিত ভাবে ঘন কালো দুঃখের ছায়া গ্রাস করত।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>