বৈশাখী নিবাসের সেকেন্ড ফ্লোরে পাশাপাশি ৮৫০ স্কোয়ার ফুটের দুটি ফ্ল্যাট। বলা চলে তিনতলাটা পুরো দুই বন্ধুর কবজায়।
এরমধ্যেই ছন্দপতন। বছর বত্রিশের নির্মল চৌধুরী এক রাতে হঠাৎ করে নিজেকে শেষ করে দিল।প্রাথমিকভাবে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা। পুলিশ, পোস্টমর্টেম সব কিছুতেই আত্মহত্যার দগদগে প্রমাণ।
পুলিশ পাশের ফ্ল্যাটেও এসেছিল।
” আপনি কী একাই থাকেন?”
” হ্যাঁ। দোকা যখন হতে পারি নি তখন আর কী করা যায়? ” কাটা কাটা জবাব দিয়েছিল দীপক রুদ্র।
“কিন্তু, আশেপাশের অনেকেই তো বলছেন আপনারা ছিলেন হরিহর আত্মা। তা আপনি কিছু আন্দাজ করতে পারলেন না? “পুলিশের প্রশ্নে তির্যকতার ছাপ স্পষ্ট। এতে অবশ্য আদৌ বিচলিত হয়নি দীপক। পুলিশের চোখে চোখ রেখে বলেছে, “নির্মল যে এমন সাংঘাতিক কিছু করবে ভাবতেও পারিনি। “
পুলিশের তরফে এই ধরনের কেসে যতটুকু এগুনো সম্ভব ততোটাই করা হয়েছিল। ওই টুকটাক রুটিন জেরা। যদিও এর মধ্যে নির্মল চৌধুরীর একমাত্র বোন টুকটুকি খানিকটা বেসুরো গেয়েছে।
অপঘাতে মৃত্যু। তাই তিনদিনে কাজ। নির্মলের স্ত্রী রুমেলাকে অন্তেষ্টির কাজে সবরকম সাহায্য করেছিল দীপক। কালীঘাটে নমো নমো করে সেরেছে ওরা। ওরা মানে রুমেলা, ওর খুড়তুতো ভাই প্রকাশ আর দীপক।
পরের দিনই নাগপুর থেকে হাজির হয়েছিল টুকটুকি ওরফে বন্যা। ওর স্বামী ছুটি পায়নি। ছেলেমেয়েদেরও পড়াশুনার চাপ। তাই একাই এসেছে। আর ঢাকুরিয়া সেলিমপুরের বৈশাখী নিবাসে পা দেওয়া ইস্তক টুকটুকির অভিযোগের পালা আরম্ভ হয়েছিল।
“বৌদি দাদা এভাবে চলে যেতে পারে না। ওর মনে প্রচুর কষ্ট ছিল আর সেটা তোমার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। “সরাসরি রুমেলাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল টুকটুকি। এর পিছনের কারণটা নাকি দীপক। বস্তুত দীপক বছর খানেক আগে আমেরিকার পাট গুটিয়ে দেশে ফেরার পর নির্মলের অনুরোধেই পাশের ফ্ল্যাটটা কিনেছিল। দেশে ফেরার পর বালিগঞ্জের একটা গেস্ট হাউজে উঠেছিল দীপক। উপায়ও ছিল না।
বাবা-মা কয়েক মাসের ব্যবধানে চলে যাওয়ার পর দেশ ছেড়েছিল। তার আগে হালতুর পৈত্রিক বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছিল। দেশে ফিরে একমাত্র নির্মলকেই পৌঁছ সংবাদ দেয়। খবর পেয়েই সটান সেখানে হাজির হয় নির্মল চৌধুরী ।
“আমি থাকতে তুই এভাবে গেস্ট হাউজে থাকবি? কোনওভাবেই সেটা পসিবল না।” নির্মল রীতিমতো ধমকে উঠেছিল ছোটবেলার বন্ধুকে।
“আমেরিকা থেকে পাট গুটিয়ে এসেছি ঠিকই। কিন্তু কতদিন এই শহরে থাকব জানি না। সেরকম বুঝলে আবার হয়তো ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন। “গাইগুঁই করছিল দীপক। নির্মল বলেছিল, “সেসব শুনছি না। যবে যাবি যাবি। এখন তো মাথা গোঁজার জায়গা করতে হবে। তাছাড়া আমার ঠিক পাশের ফ্ল্যাটটাই খালি পড়ে আছে। ওটাই কিনে নে তুই। নিজের শহরে একটা স্থায়ী ডেরা তো হবে।” থোড়াই পাত্তা দেওয়ার ছেলে দীপক। তাও বাল্যবন্ধুর কথা ফেলতে পারেনি। কিছুদিনের মধ্যে সেলিমপুরে চলে আসা।
সেটাই বোধহয় ওদের দুজনেরই জীবনে কাল হল।
নির্মলের বোন টুকটুকিও এও বলেছে রুমেলাকে, “দীপকদাকে আমার চেয়ে কেউ বেশি চেনে না। প্লে বয় একটা। শেষ পর্যন্ত দাদাকে ছেড়ে ওরকম একটা বাউন্ডুলে লোকের পাল্লায় পড়লে? ছিঃ বৌদি ছিঃ।”
হতভম্ভ রুমেলা বলেছে, “তোমার দাদা সবেমাত্র চলে গিয়েছে। তার মধ্যে তুমি দীপকদার সঙ্গে আমাকে এভাবে জড়াচ্ছ? “
“জড়ানোর মতো কারণ আছে বলেই বলছি। মেয়েদের মন নিয়ে কীভাবে ছিনিমিনি খেলতে হয় সেটা দীপক রুদ্রর চেয়ে কেউ ভাল বোঝে না।তাছাড়া দাদা কিছুদিন আগেই আমাকে ঠারেঠোরে বলেছিল, “ভাল নেই রে আমি।”
টুকটুকি একথা নিয়ে বৌদির সঙ্গে রীতিমতো ত্যান্ডাই-ম্যান্ডাই আরম্ভ করেছিল আর দীপকের মুখোমুখি হওয়ার পর এমনভাবে তাকিয়ে ছিল যেন দাদার হত্যাকারীকে দেখছে।
এই আবাসনেরই কেউ হয়তো ইন্ধন জুগিয়েছিল। মন্দের ভাল টুকটুকি আর এগোয় নি। আসলে এটাই ওর স্বভাব। প্রথমে এসে বাড়ি মাথায় করা। তারপর ভিজে বেড়ালের মতো হয়ে ওঠা।
দীপকের জীবনটাও এক সময় তছনছ করে দিচ্ছিল প্রায়। নির্মল আর দীপকরা হালতুতে থাকত। তাই ছোটবেলা থেকেই পরস্পরের চেনাজানা, সখ্যতা স্বাভাবিক নিয়মে গড়ে উঠেছিল। যাকে বলে গলায় গলায় বন্ধু। যদিও দীপক পড়ত ইংলিশ মিডিয়ামে। আর নির্মল নিখাদ বাংলা স্কুলে। প্রবল বৈপরীত্য সত্ত্বেও কাছাকাছি এসেছিল ওরা। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ওরা ভর্তি হয়েছিল সাউথ সিটি কলেজের দ্বি-প্রাহরিক বিভাগ হেরম্বচন্দ্রতে।
দীপক বরাবরই পড়াশুনায় ভাল। তুলনায় নির্মল অনেকটাই মিডিওকার। তাও বন্ধুর খামতি ঢাকতে অ্যাকাউন্টস সহ অন্যান্য সাবজেক্ট দেখিয়ে দিত দীপক।
শুধু কী তাই! পড়াশুনার চাপ একটু বাড়তে দীপক একটা টিউশনে ভর্তি হয়েছিল। অনিরুদ্ধদার কোচিং তখন মার মার কাট কাট ফেলে দিয়েছিল। কলেজ চত্ত্বরে কমার্সের সেরা টিচার অনিরুদ্ধ পাকড়াশি। শুধু কী বিকম স্টুডেন্ট? কস্টিং, চার্টার্ড ছাত্রদের পর্যন্ত পড়াতেন অনিরুদ্ধদা। কিন্তু, যত বড় কোচিং, তার তত বড় দর। আর অতো টাকা দিয়ে কোচিংয়ে পড়ার সামর্থ ছিল না নির্মল চৌধুরীর। ছাপোষা কেরানীর ছেলে। তার ওপর আবার কলেজে ভর্তির কিছুদিনের মধ্যে বাবা মারা গেলেন। সামান্য সেলাইয়ের কাজ করে মায়ের যৎসামান্য রোজগারে কোনও বাহুল্য সম্ভব নয়।
দুই ছেলেমেয়ের পড়াশুনা চালানোই চাপের। মাধ্যমিক পাশ করার পর থেকে টিউশনি করে নিজের টুকটাক খরচ চালিয়ে নিত নির্মল। কিন্তু নিজের পড়াশুনার জন্য অনিরুদ্ধদার কোচিংয়ে পড়া ওর নাগালের বাইরে। সেসময় পাশে দাঁড়িয়েছিল দীপক।
দীপকের বাবা বিদেশি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন। মা স্কুল টিচার। একমাত্র ছেলের কোনও কিছুতেই কার্পণ্য করতেন না। দীপক আবার নিজের পকেট মানি বাঁচিয়ে নির্মলকে অনিরুদ্ধদার কোচিংয়ে ভর্তি করে। দীপক এভাবে পাশে দাঁড়ানোয় কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না নির্মলের। সেটা ওর আচার-আচরণে বরাবরই প্রকাশ পেত। কিন্ত, চৌধুরী বাড়িতে দীপক রুদ্রের প্রতি আরও একজনের ফিলিংস তৈরি হয়েছিল। বন্যা মানে টুকটুকির এই আকর্ষণটা ছিল পুরোপুরি একতরফা। তাও যদি ব্যাপারটি শুধু ভাললাগার স্তর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকত…
টুকটুকি শারীরিকভাবে পেতে চেয়েছিল দীপককে। সেজন্য তক্কে তক্কে ছিল। একদিন চৌধুরী বাড়ির সবাই কাছেপিঠেই কোনও কুটুম বাড়িতে গিয়েছিল। নির্মল যেতে না চাইলেও মায়ের চাপেই যেতে হয়েছিল। টুকটুকি কোনও একটা কারণে যায়নি।তখন তো আর মোবাইল টোবাইল ছিল না যে চট করে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। দীপক জানতও না বন্ধু বাড়ি নেই।
টুকটুকি ওকে টেনে ভিতরে বসাল। চা করে দিল। দীপক বারবার জিজ্ঞেস করছিল, “নির্মল কই? মাসিমাই বা কোথায় গেলেন?”
টুকটুকি একটাই কথা আউড়ে চলেছিল। ” ওরাই কী সব? আমি বুঝি কেউ না?”
“আমি বরং উঠি। কাল না হয় সকালে আসব একবার। দাদাকে বলিস। “চা’টা কোনওরকমে শেষ করে ওঠার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিল দীপক।
কিছুদিন ধরেই টুকটুকির হাবভাব, চোখের ইশারা, অঙ্গভঙ্গি মোটেই ভাল ঠেকছিল না। বন্ধুর বোন বলেই এতদিন চুপ করে ছিল। কিন্তু সেদিন সবকিছুর বাইরে চলে গেল টুকটুকির অসভ্যতা।
বেরোতে উদ্যত দীপককে হঠাৎ জড়িয়ে ধরল সে। দীপকের চেহারাপত্তর খারাপ নয়। কিন্তু দীর্ঘাঙ্গী টুকটুকি এভাবে জড়িয়ে ধরায় কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল ও।
সেই সুযোগে দীপকের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরেছিল। কোনও রকমে একটা ঝটকা মেরে ওর হাত থেকে নিস্তার মিলেছিল সেদিন। টুকটুকি ওকে দখল করতে না পেরে ভয়ঙ্কর এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। মনে হচ্ছিল যেন শিকারে উদ্যত কোনও ক্ষুধার্ত অজগর মুখের গ্রাস হারিয়ে রাগে ফুঁসছে।
পরেরদিন বন্ধু বা মাসিমাকে কিচ্ছু বলেনি দীপক। মুখে একবার এসেও গিয়েছিল। তাও ওদের পরিবারের কথা ভেবে চুপ করে গিয়েছিল। টুকটুকির মধ্যে অবশ্য কোনও হেলদোল লক্ষ্য করা যায়নি। পারতপক্ষে ওদের বাড়িতে আর ঢুকত না দীপক। নির্মল বোধহয় কিছু একটা আন্দাজ করেছিল। ওকে বলেওছিল একদিন, “আমি সব বুঝি। কেন তুই আসিস না আমাদের বাড়িতে। কি আর বলব। বললে তো নিজের দিকেই থুতু ছিটবে।” দীপক কিছু বলে নি। শুধু বন্ধুর হাতটা চেপে ধরেছিল। না, নির্মলের ব্যবহারে কোনওদিনই কোনও ফাঁক পায়নি দীপক। ওর প্রতি কৃতজ্ঞতা ঝরে পড়ত। সেজন্যই তো একদম নিজের পাশে এনে তুলেছিল।
আরো পড়ুন: পার্থসারথি গুহ’র গল্প পৃথিবী ধ্বংসের ইতিকথা
২)
ওর বউটাও ততটাই আন্তরিক আর মিশুকে। সেই রুমেলার সঙ্গে কিনা ওকে জড়াচ্ছে টুকটুকি। এমনকি নিজের মৃত দাদাকে নিয়ে কিনা মিথ্যে গল্প ফেঁদেছে। নির্মল কখনও ওর বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে, এটা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারে না দীপক। তাই বলে কি দীপক একেবারে ধোয়া তুলসিপাতা?
কমবয়স থেকেই নতুন নতুন গার্ল ফ্রেন্ড জোটানো তো ওর বাঁয়ে হাত কা খেল হয়ে উঠেছিল। দীপকের এই স্বভাবের কথা নির্মলও জানত। তা বলে দীপকের উদ্দাম নারীসঙ্গ ওদের বন্ধুত্বে কোনওদিন চিড় ধরায় নি। নির্মল এটাকে বড়লোকের খেয়াল ভাবত। দীপকের পাল্লায় পড়ে বেশ কয়েকবার কলকাতার অনেক নামিদামি হোটেল-রেস্টুরেন্টে যেতে হয়েছে ওকেও। হোটেলের বারে গেলে কী নির্জলা থাকা যায়। হ্যাঁ, একটু আধটু মদ্যপানও করেছে। আর সুন্দরী, সুবেশা বেশ কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে ওর আলাপও করিয়ে দিয়েছিল দীপক। কী অপূর্ব তাদের দেখতে। রূপোলি পর্দার নায়িকা যেন সব।
সত্যি বলতে কি সেই সব সুন্দরী অপ্সরাদের সঙ্গে হাত মেলাতে ভারী কুণ্ঠা হত নির্মলের। হীনমন্যতায় ভরে উঠত ওর মন।
দীপক কিন্তু বরাবর সেই পরিচয়পর্বে “মাই বেস্ট ফ্রেন্ড” বলে অভিহিত করত নির্মলকে। সেই রূপসী, উর্বশীরাও দিব্যি মুক্তশুভ্র দন্তকপাটি বিকশিত করে খিলখিলিয়ে উঠত। নির্মল যেন ওদের কতদিনের চেনা। নির্মল জানত এসবই হচ্ছে দীপকের অনারে। নইলে ওদের বয়েই গিয়েছে তার মতো একটা হতদরিদ্র ঘরের ছেলেকে হাই-হ্যালো করতে, আড্ডা দিতে। তাও একেবারে খারাপ যে লাগত তাও নয়। সুন্দরীসঙ্গ পেতে কার না ভাল লাগে? সে স্বর্গের দেবতা হোক বা তার মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের পাবলিক।
নির্মল মাঝেমধ্যে দীপককে জিজ্ঞেসও করেছে, “এই রূপসীদের মধ্যেই কি আমার ভবিষ্যতের বৌদি আছে?”
দীপক একটা অদ্ভুত ধরনের মুখ করে বলত, “ধুস! এরা হল চায়ের ভাঁড়ের মতো। চুকচুক করে দু চুমুক মেরে ছুঁড়ে ফেলতে হয়।”
“তাহলে কী তোর কোনও স্টেডি গার্লফ্রেন্ড নেই? ” জুতসই জবাব না পাওয়া পর্যন্ত নির্মল থামত না।জীবনটা কী স্টেডি নাকি? আজ আছি, কাল নেই? দীপকের গলায় দার্শনিক সুর ফুটে উঠত।
সেই দীপক আর যাই হোক আজও জীবনের পিচে স্টেডিই রয়েছে। অথচ ওর প্রিয় বন্ধু নির্মল কিনা নিজেকে শেষ করে দিল। ভাবতে ভাবতে চোখের কোনটা কী একটু ভিজে উঠল? চোখে জল আসারই কথা। কিন্তু তা বলে এভাবে ভিতরে ভিতরে ফালাফালা হয়ে যাওয়া?
তাহলে কি টুকটুকির কথাকে অহেতুক আমল দিচ্ছে?
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর দিন কয়েকের জন্য রিষড়ার মামাবাড়িতে গিয়েছিল দীপক। বলা যায় মায়ের জোরাজুরিতেই যেতে হয়েছিল।
সেখানেই মেয়েটিকে দেখে “লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট” হয়েছিল। ক্লাস নাইনে পড়ে। যেমনি মিষ্টি দেখতে ততটাই ভদ্র। ভাললাগাটা একতরফা ছিল না মোটেই। দীপক আর পিউর পরস্পরের প্রতি আসক্তি ফাঁকি দিতে পারেনি একজনের চোখকে। তিনি হলেন দীপকের ছোটমামি।
দীপককে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে রীতিমতো কাউন্সেলিং করার মতো করে মামি বুঝিয়েছিলেন, “দীপু করছিস টা কি? পিউ কিন্তু এ বাড়ির তুতো আত্মীয়। সম্পর্কে তোর একরকম বোন হবে।”
দীপক কিছু বলতে পারেনি। মামির দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিল খালি। পিউকেও মনে হয় ছোটমামি কিছু বলেছিলেন। তারপর থেকে ওর দিকে সেভাবে ফিরেও চায় নি।
শুধু সেদিন… যেদিন দীপক ফিরে এসেছিল সেদিন তিনতলার ছাদ থেকে পিউর সেই সজল চাউনি কিছুতেই ভুলতে পারে নি।
সেই পিউকেই কিনা এতবছর পর আবিষ্কার করল নতুনরূপে। প্রিয় বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে। ওর ভাল নাম যে রুমেলা সেটাও এতদিন পর মনে পড়েছে যখন নির্মল আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। রুমেলা আর দীপক যেভাবে অবাক চোখে পরস্পরের দিকে চেয়ে ছিল তাতে কিছুটা হলেও চমকেছিল নির্মল।
রাতে জিজ্ঞেস করায়, ওর রুমির উত্তর ছিল, “আরে নির্মলদার মামাবাড়ি তো আমাদের বাড়ির ঠিক পাশেই রিষড়ায়।”
নির্মল সরল বিশ্বাসে সেটা মেনেও নিয়েছিল। কয়েক বছর হল ওদের বিয়ে হয়েছে। কোনও সন্তান হয়নি। সেটা নিয়ে একটা খচখচানিও ছিল দুজনের মধ্যে। ভাল ডাক্তার দেখানোর কথাও হচ্ছিল।
দীপকও পারতপক্ষে পিউ ওরফে রুমেলার সঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছিল। নির্মলের উপস্থিতিতে মাঝেমধ্যে টুকটাক কথা হত। ওদের মধ্যে যে একটা জড়তা আছে সেটা নির্মলও খানিকটা আঁচ করেছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
এক বছর পর এল সেইদিনটা। বিকেলে নির্মল হঠাৎ করেই ওদের ফ্ল্যাটে জরুরি তলব করল দীপককে।রুমেলা বেরিয়েছে। দীপক বসতে চাইছিল না। নির্মলের সঙ্গে এভাবে একান্তে বসতে কেমন জানি অস্বস্তি হচ্ছিল। তাও নির্মলের গা’টা ছ্যাঁক ছ্যাঁক করছে শুনে আর চুপ থাকতে পারল না।
ওর কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখতে গিয়েই মস্ত ভুল করল দীপক। এতদিন পর দীপককে অতটা কাছে পেয়ে উপোসী বাঘের মতো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল নির্মল। সেই বাঁধনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে নিজেকে সামলাতে পারল না দীপকও।
কতক্ষণ এই অবস্থাতে ছিল জানে না। কখন ফ্ল্যাটের অটো লক খুলে ভিতরে এসেছে রুমেলা টেরও পায়নি সমকামের পুরনো খেলায় মত্ত দুই বন্ধু। তাও হয়তো হুঁশ ফিরত না। কিন্তু রুমেলা হঠাৎ কেশে ওঠায় ছিটকে গেল দুজন। নির্মলের ফ্ল্যাট ছেড়ে চোরের মতো বেরিয়ে গেল দীপক।
এরপরই যবনিকাপাত ঘটল। সেই রাতেই তো…
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর করার পর পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে বেশ কয়েকটি দৈনিকের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন লেখক। সুপরিচিত একটি সাপ্তাহিকেরও গুরুদায়িত্ব নিয়ে কাজ করে চলেছেন বিগত কয়েক বছর। সাংবাদিকতার বিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাত পাকিয়েছেন ডিজিট্যাল মাধ্যমেও। অর্থনীতি তথা শেয়ার বাজারের ওপর কলম লেখার স্বভাবসিদ্ধ দক্ষতার পাশাপাশি পুরোদস্তুর পলিটিক্যাল বিটেও সাংবাদিকতা করেছেন চুটিয়ে। গল্প লেখার জগতে মাত্র বছর দেড়েক পদার্পণ। ইতিমধ্যেই আনন্দমেলা, সুখী গৃহকোণ, শিলাদিত্য, একদিন, গণশক্তি, সুখবর, স্বস্তিকা, আলিপুর বার্তা, সংবাদ বিশ্ব বাংলা পোর্টাল সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় চুটিয়ে গল্প লিখছেন।