| 9 মে 2024
Categories
চলচ্চিত্র ধারাবাহিক

ভারত গৌরব জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা (পর্ব-৩) । বাসুদেব দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

স্বাধীনচেতা ,স্বদেশপ্রেমী এবং একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে জ্যোতিপ্রসাদ পরিবারের বিশেষ করে পিতামাতার কাছ থেকে অনেকগুলি মহৎগুণ উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছিলেন।১৯১৮ সনে যুবক জ্যোতিপ্রসাদ পিতা পরমানন্দের সঙ্গে আহমেদাবাদ কংগ্রেসে গিয়েছিলেন।সেখানে মহাত্মাগান্ধী এবং অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের তেজোদীপ্ত বক্তৃতা শুনে প্রভাবিত হন।

 ১৯২১ সনে গান্ধিজি অসমে এসে তেজপুরের প্রাতঃস্মরণীয় আগরওয়াল  পরিবারের ঐতিহ্যপূর্ণ ‘পকী’ঘরে বসবাস করেন।সেই সময় জ্যোতিপ্রসাদ আঠারো বছরের ছেলে।গান্ধিজি থাকাকালীন দিনগুলি জ্যোতিপ্রসাদ গান্ধিজির সঙ্গে সঙ্গে থেকে ,তাকে নিজের হাতে শুশ্রূষা করেন।গান্ধিজিও অবসর সময়ে জ্যোতিপ্রসাদকে কাছে বসিয়ে তার সঙ্গে নানা বিষয়ে কথাবার্তা বলেন।পরেরদিন বাড়ির সামনের উঠোনে বিদেশি দ্রব্য দাহ করার বিশাল যজ্ঞে্র আয়োজন করা হল। জ্যোতিপ্রসাদ নিজের এবং অন্যের যাবতীয় বিদেশি দ্রব্য বের করে আনল।তারপর তাতে অগ্নি সংযোগ করা হয়।এমন কী মায়ের হাতে বোনা সুন্দর গুণার কাজ করা কাপড়টাতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।যেহেতু গান্ধিজি বলেছেন যে হাতে বোনা হলেও কাপড়ের সুতো বিদেশি। সেই ‘পকীঘর’এর উঠোনেই প্রতিদিন সভা সমিতির আয়োজন করা হত,সেখানে বসেই গান্ধিজি জনগণকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন।

বিদেশ থেকে ফিরে আসার পরে গান্ধিজির নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়।এর তিন মাস পরেই গান্ধী-আরউইন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।তারপর কংগ্রেস দলের অধিনায়ক হয়ে জ্যোতিপ্রসাদ পনেরো মাস সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন।তাকে পাঁচশো টাকা জরিমানা করা হয়।

১৯৩৪ সনে মহাত্মাজী দ্বিতীয়বার অসমে এসে জ্যোতিপ্রসাদের বাড়িতে বাস করেন। সেই সময় জ্যোতিপ্রসাদ কলংপুরের নিজ পরিবারের চা বাগান ভোলাগুরিতে তাঁর পরিকল্পনার ‘চিত্রবন’অসমিয়া ফিল্ম-শিল্পের প্রতিষ্ঠান ‘চিত্রলেখা মুভিটোন’আরম্ভ করেন।গান্ধিজি সেই সময় জ্যোতিপ্রসাদকে জিজ্ঞেস করেছিলেন-‘এখন তুমি কী কাজ হাত নিয়েছ?’উত্তরে জ্যোতিপ্রসাদ ফিল্মশিল্পের কথা বলায় গান্ধিজি চিন্তা করে  বলেছিল –‘কিন্তু ফিল্মের জন্যতো যথেষ্ট raw material লাগবে।বিদেশ থেকে আমদানি না করে সেই সামগ্রীর প্রস্তুত প্রণালী শিখে নিচ্ছ না কেন?’


আরো পড়ুন: ভারত গৌরব জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা (পর্ব-২)

১৯৩৯-৪০ সনের মহাযুদ্ধের ঢেউ এসে পুনরায় অসমের তটভূমে আঘাত করে,ভগ্ন স্বাস্থ্য জ্যোতিপ্রসাদ পুনরায় গ্রামে গঞ্জে দেশপ্রেমের বাণী নিয়ে ঘুরতে থাকেন।বিয়াল্লিশের বিপ্লবে অসমের নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হন।তেজপুরের নেতাদের উপরও সরকারের শ্যেনদৃষ্টি পড়ে।জ্যোতিপ্রসাদ বিদ্যুৎগতিতে তেজপুরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত শান্তি সেনাবাহিনীকে এবং জনসাধারণকে জ্বালাময়ী বক্তৃতার দ্বারা উদ্দীপিত করে তুলতে লাগলেন।সেই সময় নিজের পরিবারের অসুস্থতা  এবং নতুন করে জন্মান শিশুকে ছেড়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে জ্যোতিপ্রসাদ অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন।একদিকে ভারতের শেষ স্বাধীনতার রণের আহ্বান,বিপ্লবের আহ্বান,অন্যদিকে নিজের পরিবারের প্রতি কর্তব্য এই দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে তিনি ভারতের স্বাধীনতাকেই বেছে নিলেন।

এদিকে ততদিনে জ্যোতিপ্রসাদের উপরে পুলিশের চোখ পড়েছে।পুলিশ বুঝতে পেরেছিল যে জ্যোতিপ্রসাদই ছাত্রদলের নেতা।তাই তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ সুযোগের অপেক্ষায় রিল।জ্যোতিপ্রসাদও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গোপনে স্বাধীনতার কাজ করে যাচ্ছিলেন। ১৯৩২ সনে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।কাছারিতে বিচার করে তার শাস্তি ঘোষণা করা হয়।পনেরো মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচশো টাকা জরিমানা। প্রথমে ইংরেজ সরকার তাকে তেজপুরের কারাগারে রাখেন।তেজপুর জেল থেকে তাকে শিলচরের জেলে স্থানান্তরিত করা হয়।এখানে তাকে দীর্ঘকাল কাটাতে হয়।জেলের অব্যবস্থায় জ্যোতিপ্রসাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন।দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে লাগল।তখন ইংরেজ সরকার তাকে শিলঙের জেলে বদলি করে দিল।

অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন সময়েই জ্যোতিপ্রসাদ সর্ব্বভারতীয় নেতাদের নিয়ে একটি নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি তৈরি করেন। এই কার্যসূচি বঙ্গ,বিহার,উড়িষ্যা,মাদ্রাজ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রদেশে পাঠানো হয় এবং অনুমোদন লাভ করে।

মহাত্মার প্রিয় শিষ্য জ্যোতিপ্রসাদ হিংসামূলক কাজের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন। তাই মাঝে মধ্যে অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তার মতানৈক্য ঘটেছিল। জ্যোতিপ্রসাদ অন্তরীণ হয়ে কলকাতা থাকাকালীন আগা খাঁ প্রাসাদে গান্ধিজি অনশন শুরু করেন।সেইসময় রাজা গোপালাচারী গান্ধিজির সঙ্গে দেখা করতে এলে গান্ধিজি তাকে বলেন যে তিনি কংগ্রেস কর্মীদের কাছ থেকে দুটি জিনিস আশা করেন-অহিংসা এবং গোপনে কোনো কাজ না করা (Non-Violence and Non-secrecy)।মহাত্মা বললেন যে সমস্ত কংগ্রেস কর্মী আত্মগোপন করে বেড়াচ্ছেন তারা মহাত্মা এবং কংগ্রেসের আদর্শ খর্ব করছেন,তাদের আত্মসমর্পণ করা উচিত।তাই ১৯৪৩ সনের আগস্ট মাসে জ্যোতিপ্রসাদ আত্মসমর্পণ করেন।

গান্ধিজির সত্যগ্রহ এবং অহিংসা ছিল জ্যোতিপ্রসাদের অন্তরের লক্ষ্য।১৯৪২ সনে লেখা তাঁর উদ্দীপনামূলক কবিতাসমূহ ‘অসমীয়া ডেকার উক্তি’, ‘অসমীয়া ছোয়ালীর উক্তি’, ‘অসমীয়া নবীন জোয়ানর সঙ্কল্প’এর ছত্রে ছত্রে দেশপ্রেম প্রতিফলিত হয়েছে।

       

       

   

[চলবে]

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত