| 26 এপ্রিল 2024
Categories
মনের অন্দরে স্বাস্থ্য

আপনাকেও গ্রাস করেনি তো অবসাদ

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত৷ চলছিল চিকিৎসা৷ তার পরেও জীবনের কাছ হার স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি৷ সুশান্তের তবু চিকিৎসা শুরু হয়েছিল, কিন্তু এ দেশে হয়তো এমন অসংখ্য মানুষ আছেন, যাঁরা মানসিক অবসাদে ভুগলেও তা ধরাই পড়ে না৷ নিজেদের মানসিক যন্ত্রণা, হতাশার কথা অনেকে মুখ ফুটে বলতেই পারেন না৷ চিকিৎসা করা বা কাউন্সেলিং শুরু করার সুযোগই আসে না তাঁদের সামনে৷
 
সুশান্ত সিং রাজপুতের করুণ পরিণতি হয়তো আমাদের আরও একবার মনে করিয়ে দিল, মানসিক সমস্যা নিয়ে মুখ বুজে থাকলে এ ভাবেই তাঁর খেসারত দিতে হতে পারে৷ কিন্তু আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ যে মানসিক অবসাদে ভুগছেন না, তা কীভাবে বুঝবেন?
 
 
চিকিৎসকরা বলছেন, অনেকের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বা লক্ষণ দেখা যায়৷ কিন্তু অনেকেই থাকেন যাঁদের মধ্যে এরকম কোনও লক্ষণই দেখা যায় না৷ চিকিৎসকরা বলছেন, অনেকের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বা লক্ষণ দেখা যায়৷ কিন্তু অনেকেই থাকেন যাঁদের মধ্যে এরকম কোনও লক্ষণই দেখা যায় না৷
 
মনোবিদরা বলছেন, জীবনে যেকোনও ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া, ব্যক্তিগত বা আর্থিক ক্ষেত্রে কোনও বিপর্যয়, সমাজ বা বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, সঙ্গীর মৃত্যু বা বিচ্ছেদ- এমন নানা হতাশা থেকেই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার প্রবণতা জাগতে পারে যে কোনও কারও মধ্যেই৷ করোনা অতিমারির জেরে সেই প্রবণতা আরও বেড়েছে৷ 
 
কিন্তু অবসাদ ঠিক কী? মনোবিদদের মতে, একটা দিন খারাপ গেলে হতাশ হয়ে পড়াটাই অবসাদ নয়৷ এটা তার থেকে অনেক জটিল৷ ক্রমাগত মনের মধ্যে জমাট বাঁধতে থাকা হতাশা, দুঃখ, দৈনন্দিন জীবনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, যা বেঁচে থাকাটাই কঠিন করে তোলে৷ অবসাদগ্রস্তদের মধ্যে সবসময় আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে৷ আমাদের চারপাশে থাকা মানুষের দিকে একটু খেয়াল রাখলেই হয়তো এই ধরনের প্রবণতা কারও কারও মধ্যে চোখে পড়বে৷
 
 
মনোবিদ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন, ‘সব মানুষের মধ্যেই অবসাদ থাকে৷ কারও ক্ষেত্রে কম, কারও বেশি৷ কেউ কেউ এটাকে সামলে উঠতে পারেন, কিন্তু অনেকেই তা পারেন না৷’ মনোবিদ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন, ‘সব মানুষের মধ্যেই অবসাদ থাকে৷ কারও ক্ষেত্রে কম, কারও বেশি৷ কেউ কেউ এটাকে সামলে উঠতে পারেন, কিন্তু অনেকেই তা পারেন না৷’
 
মনোবিদ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন, অবসাদ দু’ রকমের হয়- Primary এবং Secondary৷ প্রথমটির ক্ষেত্রে কোনও কারণ ছাড়াই কাউকে অবসাদ গ্রাস করতে পারে৷ কিন্তু দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে অবসাদের নির্দিষ্ট কারণ থাকে৷
 
জীবনের প্রতি নেতিবাচক ভাবনাচিন্তা চলে আসাই অবসাদের প্রথম লক্ষণ৷ নিজের বা পরিবারের কারও জীবনে খারাপ কিছু ঘটলেই অবসাদগ্রস্তরা নিজেদের দায়ী করতে শুরু করেন৷ সবকিছুতেই আগ্রহ হারিয়ে যায়৷ এমন কি শখ, প্রিয় খেলাধুলোতেও আগ্রহ থাকে না৷
 
 
মনোবিদ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অবসাদের জেরে অনেকেরই ঘুম কমে যায়, সারাদিন তাঁরা খিটখিটে হয়ে থাকেন৷ আবার এর উল্টোটাও কিছু ক্ষেত্রে হয়৷ অবসাদ খেকে ক্লান্তি গ্রাস করে, যা থেকে অতিরিক্ত ঘুমনোর প্রবণতা তৈরি হয়৷ অবসাদগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষিদেও কমে যায়, যার ফলে এক ধাক্কায় ওজন হ্রাস পায়৷ 
 
অবসাদগ্রস্তরা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না৷ মুহূর্তের মধ্যে তাঁদের মেজাজ বদলে যেতে পারে৷ অবসাদগ্রস্তরা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না৷ মুহূর্তের মধ্যে তাঁদের মেজাজ বদলে যেতে পারে৷
 
মনোবিদদের মতে, এই সময় অনেকেই নিজেকে একা সরিয়ে নেন৷ সবসময় তাঁদের কান্না কান্না পায়৷ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন অবসাদগ্রস্তরা৷ মোটিভেশন হারিয়ে ফেলেন৷ তিন মাসের বেশি এই লক্ষণগুলি কারও মধ্যে স্থায়ী হলেই তাঁর অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন মনোবিদ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ না হলে অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে৷ 
কারও মধ্যে এই প্রবণতাগুলি দেখলে তাঁদের বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সতর্ক করুন৷ কোনওমতেই এই ধরনের মানুষকে একা ছাড়বেন না৷ মনে রাখবেন, এই সময়টাই অবসাদে ভোগা মানুষটির আপনাকে সবথেকে বেশি প্রয়োজন৷ ধৈর্য ধরে তাঁদের কথা শুনুন, তাঁদের উপরে বিরক্ত হয়ে চিৎকার করবেন না বা কটূ কথা শোনাবেন না৷ অবশ্যই তাঁদেরকে একজন মনোবিদের কাছে নিয়ে যান৷ 
কোনও সময় জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা ভাববেন না৷ মনে রাখবেন, আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে৷ আত্মহত্যার কথা মাথায় এলে পরিবার, বন্ধুদের তা জানান৷ শুধু তাই নয়, একজন মনোবিদের পরামর্শ নিন৷

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত