Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,the-history-of-mango-2

ইতিহাস: আম আলাপন (শেষ পর্ব) । সুকন্যা দত্ত

Reading Time: 2 minutes
আমের নাম নাকি কেশবায়ুধ।  এই আম অনেক কে খাইয়ে ভগবান কৃষ্ণ অনেক কাজ করিয়ে নিতেন। ভাবুন তো, আম কিনা এক প্রকার অস্ত্রই হয়ে গেলো শ্রীকৃষ্ণের কাছে।এবার আসি নানান ধরণের আমের কথায়। ভগবানের অষ্টত্তর শত নামের মতো আমের বাহারি নামের শেষ নেই। গোলাপখাস, তোতাপুরী, কিষণভোগ,হিমসাগর, চৌসা,গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, আম্রপালী, ল্যাংড়া,  ক্ষীরসাপাতি, বোম্বাই, মধু কুলকুলি, পেয়ারাফুলি, ইলশেপেটি,  কপাট ভাঙা,  চিনিচম্পা, চালভাজা, ফজলী  এমন কত কি। আম রস থেকে তৈরি মদ হলো ” সহকারসুরা”।মিথিলার ব্রাহ্মণ জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ ঠাকুরের নামানুসারে আমের নাম কিষাণভোগ। আগের কালে ঠাকুমা দিদিমাদের মুখে খাবার হজমের কিছু কথা প্রায়ই শোনা যেতো-
“আম্রফলে দুগ্ধ ঘৃতে জামীরের রস।
  কদলীর ফলে ঘৃত পাচক সরস”।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত মধুকুলকুলি আমের কথায় বলেছেন, ওই আমগুলো বড় নারিকেলি কুলের মতো দেখতে। লখনৌ এর সফেদা,চৌসা,দশেরি আষাঢ় মাসের শেষের দিকে পাওয়া যায়। আবার বিহারের জরদালু, মিঠুয়া, সুকুল, সিপিয়া আম  বিখ্যাত। ‘ল্যাংড়া’ আমের নামকরণ নিয়ে একটি গল্প আছে। পাটনার কাছে হাজিপুরে  এক ফকির একটি  আম গাছের তলায় বাস করতেন। সেই গাছের অতুলনীয় স্বাদে মুগ্ধ হয়ে  পাটনার ডিভিশনের কমিশনার ককবার্ণ সাহেব ফকিরের সম্মানে “ল্যাংড়া” নাম রাখেন। ফকিরের পায়ে কিছু সমস্যা ছিলো।  আবার ফজলি আমের সাথে ও জুড়ে আছে ইতিহাস।  একবার  মালদহের কালেক্টর র‍্যাভেনশ্ সাহেব গৌড়ে যাওয়ার পথে দুপুরের গরমে ক্লান্ত হয়ে  গাছতলায় বিশ্রাম নেন। সেই সময় এক মুসলমান কিশোরী ওনাকে জল আর থালায় করে একটা আম কেটে এনে দেয়। আমের স্বাদে সাহেব মুগ্ধ হলে কিশোরী জানায়, আমটা তার বাড়ীর গাছের। তৎক্ষনাৎ মেয়েটির নামের সাথে মিলিয়ে তিনি আমটির নাম দেন ” ফজলি”।
 
ইংরেজ বাজারের চন্ডীপুরের  বাসিন্দা লক্ষ্ণণ যে  আম গাছটি রোপন করে,তার নামানুসারে গাছটির নাম হয় লক্ষ্ণণভোগ আর নরহাট্টার গোপাল চাষি রোপিত গাছের নাম হয় গোপালভোগ।  গোলাপের মতো সুঘ্রাণ বহন করায় সেই আমের নাম হয়েছে গোলাপখাস। মালদহের এক কৃষক আম খাওয়ার পর আঁটি পুঁতেছিলেন। আঁটি বা গুটি  থেকে জন্ম নেওয়ায় এর নাম হয় গুটি আম, অন্যদিকে  আশ্বিন মাসে যে আম পাকে তার নাম আশ্বিনা।
 

আরো পড়ুন: আম আলাপন (পর্ব-৩)

 
 
কেউ কেউ বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে ফকির মহম্মদ খান ওরফে গয়া মালিহাবাদির নেতৃত্বে একদল আফ্রিদি পাঠান  আফগানিস্তানের সীমান্তে খাইবার গিরিপথের এক গ্রাম থেকে পেশাওয়ার হয়ে ভারতে  আসে৷ প্রথমে তারা  উত্তর প্রদেশে আসে ফারুকাবাদে,  সেখান থেকে অউওধ-লক্ষৌ-এ৷ মহম্মদ খানের বীরত্ব এবং যুদ্ধ বিদ্যার নৈপূণ্য দেখে অউওধের নবাব খুশি হন৷ বকশিস হিসেবে মহম্মদ খান ফলের বাগান করার অনুমতি প্রার্থনা করেন নবাব বাহাদুরের কাছে৷ সঙ্গে সঙ্গে তা মঞ্জুর হয়৷ কথিত আছে, মহম্মদ খান প্রথম মালিহাবাদে আমের চারা রোপণ করেন৷ আমের কথা বললে লোক গান এসেই যায়। জীবনের প্রতিফলন গানে ফুটে উঠবে, সেটাই তো স্বাভাবিক, তাই না? ঝুমুর গানে ভিনদেশী এক যুবকের জন্য তরুণী গেয়ে ওঠে-
” আম গাছে আম নাই ঢিল কেন ছুঁড়ছ হে।
  তোমার দেশের আমি নহি- আঁখি কেন ঠার হে”। টুসু গানে ও চলে আসে আমের কথা-
” আম ধরে থপথপা, তেঁতুল ধরে বকা হে,
পূব দেশে যায়ে দেখ বঁড়ীর হাতে শাখা হে।”
প্যাঁচপ্যাঁচে গরমে একমাত্র স্বস্তি দেয় আম। সারাবছর প্রায় সবাইএই শ্রীফলের অপেক্ষায় থাকে।
আমের দর বাড়লেও এ সময় কোনোভাবেই আমরা নিজেদের বিরত রাখতে পারিনা। গ্রাম বাংলা হোক বা শহর সকলের মন তৃপ্ত হয় আমের স্বাদে।
 
 
 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>