আগামীকাল বড্ড দেরী হয়ে যাবে: ফিদেল কাস্ত্রো

Reading Time: 2 minutes

১৯৯২ সনের ইউনাইটেড নেশনসের পরিবেশ সংক্রান্ত সমাবেশে ফিদেল কাস্ত্রোর প্রদত্ত ভাষণটি ইরাবতীর পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন জয়া চৌধুরী।


মিঃ প্রেসিডেন্ট অফ ব্রাজিল ফেরনান্দো কোলোর দে মেলো, মিঃ সেক্রেটারি জেনারেল, ইউনাইটেড নেশনস বুত্রোস গালি, এক্সেলেন্সি, জীবনের প্রাকৃতিক অবস্থার দ্রুত ও আগ্রাসী তরলীকরণের ফলে এক গুরুত্বপূর্ণ জীবসম্পদ, মানুষ বিলুপ্ত হবার দোড়গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখন যখন আমরা এই সমস্যাটিকে জেনেছি তখন এটি ঠিক করা প্রায় দেরী হয়ে গেছে। পরিবেশের হিংস্র ধ্বংসের জন্য কনজিউমার সোসাইটিকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এরা উদ্ভূত হয়েছিল প্রাচীন ঔপনিবেশিক এবং রাজনৈতিক ভাবে সামন্ততান্ত্রিক শহরগুলি থেকে। এক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে পশ্চাদপদতা ও গরীবীয়ানা যা আছড়ে পড়ছে একটা বিপুল মানবসমাজে। পৃথিবীর মাত্র কুড়ি শতাংশ জনপদ পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ ধাতু ব্যবহার করে, আর তিন চতুর্থাংশ শক্তি ব্যবহার করে। তারা সমুদ্র ও নদী বিষিয়েছে, বাতাস দূষিত করেছে, ওজোনস্তরকে দুর্বল করেছে ও ছিদ্র করে দিয়েছে। বায়ুর স্তরকে সুসিক্ত পরিপৃক্ত করে দিয়েছে। আবহাওয়ার ধরন বদলে দিয়েছে। ভয়ংকর বিপর্যয় এনে দিয়েছে যাতে আমরা ধুঁকতে শুরু করেছি। জঙ্গল অদৃশ্য হচ্ছে, মরুভূমি বাড়ছে উর্বর পৃথিবীর মিলিয়ন মিলিয়ন টন মাইল প্রতি বছর সমুদ্রে শেষ হচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে, জনপদ ও জনসংখ্যার চাপ অপ্রত্যাশিত শক্তি চালিত করছে প্রকৃতির বিনিময়ে দুনিয়ায় টিকে থাকার জন্য। তৃতীয় বিশ্বের এই দেশগুলি, বিগত উপনিবেশগুলি, দেশগুলিকে এজন্য দোষ দেওয়া যায় না। তারা অধিক অর্থনৈতিক অবিচারের বশীভূত হয়ে আজ বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, লুটছে। উন্নতিকে বাধা দিয়ে এর সমাধান করা যাবে না যা কিনা এখন সব চাইতে প্রয়োজন। বাস্তব হল যারাই আজ অবনতির দিকে অবদান রাখছে তারাই গরীবী জাঁকিয়ে বসাচ্ছে নির্বিচারে পরিবেশ লঙ্ঘন করে। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বের শয় শয় মিলিয়ন নারী পুরুষ শিশু মারা যাচ্ছে। এই সংখ্যাটা দুটো বিশ্ব যুদ্ধে নিহতদের চেয়ে বেশি। অসমান অদলবদল, বৈদেশিক ঋণ, সংরক্ষণ নীতি আক্রমণ করছে বাস্তুতন্ত্রকে, এবং তরান্বিত করছে পরিবেশ ধ্বংস। কেউ যদি মানবসমাজের এই আত্মহনন থেকে বাঁচাতে চায় তাহলে এই গ্রহের সব সম্পদ ও টেকনোলজিকে ভাগ করে দিতে হবে। কয়েকটি দেশের কম বিলাসের অভ্যাস আর কম নষ্ট করার অভ্যাস বাকী দেশগুলোয় কত গরীবী ঘুচাতে পারে কম খিদে ঘটাতে পারে। তৃতীয় বিশ্বের জীবনযাত্রার ধরণ আর যোগান দেওয়ার ভোগের স্বভাব যোগান দেওয়ার অভ্যাস পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলছে। মানুষের জীবনকে আরো যুক্তি সঙ্গত করে তুলুন। একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খল প্রয়োগ করুন। দূষণ হীন স্থায়ী প্রগতির জন্য সব দরকারী বিজ্ঞান ব্যবহার করুন।  প্রাকৃতিক ঋণ শোধ করুন বৈদেশিক ঋণ নয়। খিদে অদৃশ্য হয়ে যাবে, মানব জাতি নয়। যখন কমিউনিজমের সম্ভাব্য বিপদ মিলিয়ে গেছে, ঠাণ্ডা যুদ্ধের অজুহাত নেই, অস্ত্রবাহিত গাড়ি আর মিলিটারি ব্যয় নেই। কে বারণ করছে এইসব সম্পদ তৃতীয় বিশ্বের উন্নতির কাজে লাগাতে? আর গ্রহের বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের আশঙ্কার বিরুদ্ধে লড়াই করতে? স্বার্থপরতা বন্ধ হোক। কর্তৃত্ব বন্ধ হোক। অমানবিকতা বন্ধ হোক। দায়িত্বহীনতা বন্ধ হোক, প্রতারণা বন্ধ হোক। আগামীকাল বড্ড দেরী হয়ে যাবে কিছু করার জন্য যা কিনা ঢের আগেই শুরু করা উচিৎ ছিল আমাদের।

ধন্যবাদ।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>