Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,food-habits-of-rabindranath-tagore-2

আমাদেরই মত খাইতুড়কে রবি। ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

Reading Time: 5 minutes

আমরা খুব বড় মানুষদের কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়ে তাঁদের হাঁড়ির খবর এবং খাবার দুইই  জানার চেষ্টা করি। এ নিয়ে আমাদের এক অদম্য কৌতূহল থাকে । তারপর যখন দেখি বিশিষ্ট মানুষ ও আমাদের মতোই সাদামাটা জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিলেন তখন মনে হয় তিনি তো আমাদেরই ঘরের লোক।
এই যেমন রবিঠাকুর ভাত খুব অল্প পরিমাণে খেতেন। বিকেলে বরাদ্দ ছিল মুড়ি ও চা। কবির রাতের খাবারে থাকত সব্জির স্যুপ, কয়েকটি লুচি ও তরকারী। রবীন্দ্রনাথ দুপুরের খাবার পরিবারের সবাই মিলে ঘরের মেঝেতে বসে খেতেন কিন্তু রাতের বেলায় তিনি খেতেন ডাইনিং টেবিলে বসে। এমনি ছিল সাদামাটা আটপৌরে জীবনযাত্রা তাঁর।

রবিঠাকুর পছন্দ করতেন জাপানি চা আর কেবল তা-ই নয়, সঙ্গে জাপানীদের  চা খাওয়ার রেওয়াজটিও ছিল তাঁর পছন্দের। সবমিলিয়ে এক শৈল্পিক ছোঁয়া যেটা তাঁকে আকর্ষণ করত। তাই তিনি জাপানে গেলে প্রায় প্রতিদিনই তার জন্য ‘টি সেরিমনি’র আয়োজন করতেন গুণমুগ্ধ জাপানী বন্ধুরা।

কবিগুরু ছিলেন পানের খুব ভক্ত। তার নাতজামাই কৃষ্ণ কৃপালিনী তাঁকে একটি সুদৃশ্য পানদানি বা ডাবর উপহার দিয়েছিলেন, যা আজও ঠাকুরবাড়িতে রক্ষিত।

এদিকে কৈশোরে বাবামশায়ের সঙ্গে দেশভ্রমণে বেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ নতুন কিছু পদ খেয়ে এসেই তা আবার নিজেদের হেঁশেলে চালু করতেন। তেমনি একটি প্রিয় পদ ছিল ফ্রুট স্যালাড। রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তিতে ইন্ডিয়ান সোসাইটি, লন্ডনের আয়োজনে এক গালা ডিনারের মেন্যু ছিল কবির পচ্ছন্দ মেনেই।  গ্রিন ভেজিটেবল স্যুপ, ক্রিম অব টমেটো স্যুপ, স্যামন ইন হল্যান্ডেন সস এ্যান্ড কিউকামবার, প্রি সলটেড ল্যাম্ব উইথ গ্রিন ভেজিটেবল, রোস্ট চিকেন, ফেঞ্চ ফ্রাই, গ্রিন স্যালাড ও আইসক্রিম।
তবে বাইরে এই ধরনের খাবার খেলেও বাড়িতে তিনি খুব কম তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেতেন।
স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর হাতের রান্না খেতে সবাই খুব পছন্দ করতেন, বিশেষত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। টকের সঙ্গে ঝাল মিশিয়ে বেশ নতুন নতুন পদ তৈরি করতেন তিনি।

রথীন্দ্রনাথের লেখায় যেমন এই ঘটনার উল্লেখ আছে, তেমনি হেমলতাদেবীও লক্ষ্য করেছিলেন মৃণালিনী দেবীর রন্ধনকুশলতা কবির এইসব শখের অন্তরালে কাজ করত। চিত্তরঞ্জন দাশ পর্যন্ত মৃণালিনীদেবীর রান্নার ভক্ত ছিলেন। শান্তিনিকেতনে থাকার সময়, দোতলার বারান্দায় উনুন পেতে অভাবনীয় সব রান্না করতেন মৃণালিনী। তাঁর বানানো সাধারণ গজার নতুন ধরন এলোঝেলো কে “পরিবন্ধ” নাম কবিই প্রথম দিয়েছিলেন।
ঠাকুরবাড়ির খামখেয়ালি সভার অধিবেশনে রাত দুটোর সময় মৃণালিনী দেবীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে কিছু রান্না করে খাওয়াতে বলতেন তিনি।
বিশ্বকবির ফরমাশ… সেখানে মামুলি কিছুই থাকবে না, প্রত্যেক পদের বিশেষত্ব থাকা চাই। কবিপত্নীও আশ্চর্য মুনশিয়ানায় সামলে দিতেন সব। তাঁকে রাগাবার জন্য রবীন্দ্রনাথ বলতেন,
‘দেখলে তোমাদের কাজ তোমাদেরকেই কেমন শিখিয়ে দিলুম।’

দেশি খাবারের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দ করতেন কাঁচা ইলিশের ঝোল, চিতল মাছ আর চালতা দিয়ে মুগের ডাল এবং নারকেল চিংড়ি।
এছাড়া শ্রুতি মিঠা কাবাব, হিন্দুস্তানি তুর্কি কাবাব, চিকেন কাবাব নোসি, আনারস দিয়ে রোস্টেড মাংস ছিল তাঁর হট ফেবারিট।


আরো পড়ুন: সহজপাঠের সহজ খাওয়া ও দাওয়া


কাঁচা আমের আচারও খেতেন। বৌঠান কাদম্বরী দেবী কবিকে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁচা আম এনে দিতেন।ঠাকুরবাড়ির রান্নায় বেশি করে মিষ্টি দেওয়ার প্রচলন ছিল। গরম মশলা, লবঙ্গ, দারুচিনি বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হতো। রান্নার তালিকায় প্রতিদিনই দীর্ঘ পদ থাকত। আর তাতে নিয়মিত অবশ্যই থাকত সুক্তো আর দইমাছ।
রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণ থেকেও জানা যায় কাদম্বরীর রান্নার প্রতি রবীন্দ্রনাথের আকর্ষণের কথা। স্কুল ছুটি হলে ছোট্ট রবি ছুটে আসত বৌদির হাতের রান্না খেতে। যেদিন চিংড়ি মাছের চচ্চড়ির সঙ্গে লঙ্কা দিয়ে ভাত মেখে বৌদি খেতে দিতেন, সেদিন তাঁর আনন্দ দেখে কে?
চিংড়িমাছ প্রীতি ছিল বলেই বুঝি তাঁর গল্পগুচ্ছের অন্যতম গল্প “রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা”র শুরুতে পাই  চিংড়িমাছের ঝালচচ্চড়ির কথা।

রবীন্দ্রনাথ আর তাঁর দাদা সোমেন্দ্রনাথের যখন পৈতে হল সেদিন বৌঠানই তাঁদের হবিষ্যান্ন রেঁধে দিয়েছিলেন। তার স্বাদ ও গন্ধে মুগ্ধ হয়েছিলেন দুই দেওরই। ঠাকুরবাড়িতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আমলে অন্দরমহলে রান্নার একটা উৎসাহ তৈরি হয়। আড়ম্বরহীন জীবন পছন্দ করতেন মহর্ষি। তাই বাড়ির মেয়েদের হাতে করা সাধারণ রান্না খেতে পছন্দ করতেন ।
ঠাকুরবাড়ির রোজকার ব্যঞ্জন ছিল সাদামাটা। ডাল, মাছের ঝোল আর অম্বল। এছাড়া বড়িভাজা, পোরের ভাজা, আলুভাতেও সঙ্গ দিত রোজকার ভোজে।
মহর্ষি যখন জোড়াসাঁকোয় থাকতেন, তখন সারদাসুন্দরী দেবী নিজে তদারক করে রান্না করাতেন। তাঁর মৃত্যুর পর মহর্ষির দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের বড়দিদি সৌদামিনী। বারোমাস বাবার জন্য অম্বল বানাতেন। সারাবছর তো আম পাওয়া যেত না, তাই তা জোগাড় করতে বেশ বেগ পেতে হত। দেবেন্দ্রনাথ রান্নায় মিষ্টি পছন্দ করতেন, সেই থেকেই তরকারিতে মিষ্টি দেওয়ার রেওয়াজ জনপ্রিয় হয়। শরৎকুমারী, সরোজাসুন্দরীদের রান্নাও সকলে পছন্দ করতেন। একসময় ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের রোজ একটা করে তরকারি রাঁধা শিখতে হত। ঠাকুরবাড়ির আরেক সৌদামিনী ছিলেন গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী। তাঁর তত্ত্বাবধানে ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা জড়ো হত ‘তরবারি বানাতে’! মানে তরকারির সবজি কাটতে। দাসীরা খোসা ছাড়িয়ে দিলে মেয়ে বৌয়েরা সৌদামিনীর নির্দেশে আনাজ কুটতেন।

শিলাইদহে  পদ্মাবোটে তোলা উনুনে মৃণালিনী দেবী কবির ফরমায়েশে নানারকম সব অচেনা  পিঠে বানাতেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্ত্রীর হাতের দইয়ের মালপো থেকে পাকা আমের মিষ্টি, চিঁড়ের পুলি থেকে মানকচুর জিলিপি আর ওলের পান্তুয়া। মানকচুর মুড়কি ও মানকচুর মালপোয়া রান্নায় মৃণালিনী দেবীর বিশেষ দক্ষতা। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন তাঁর হাতের চিঁড়ের পুলি ও দইয়ের মালপোয়া ও পাকা আমের মেঠাই যিনি খেয়েছেন, তিনি আর কখনওই সেই স্বাদ ভুলতে পারবেন না। স্ত্রীর হাতে তৈরি এসব মিষ্টি খুব পছন্দ করতেন কবি। মিষ্টি না পেলে নিদেন পক্ষে একটু মধু খেতে হতই কবিকে।
তাই বুঝি আলি সাহেব লিখেছেন, “বস্তুত কী চা, কী মাছ-মাংস, কোনো জিনিসেই রবীন্দ্রনাথের আসক্তি ছিল না – যা সামান্য ছিল, সেটা মিষ্টি মিষ্টান্নের প্রতি। টোস্টের উপর প্রায় কোয়ার্টার ইঞ্চি মধুর পলস্তরা পরম পরিতৃপ্তি সহকারে খেতেন।
সিলেট ও খাসিয়া সীমান্তে কমলালেবুর ফুল থেকে সংগ্রহ করা একরকম অতুলনীয় মধু পাওয়া যায়।কবির পছন্দ ছিল সেই কমলা মধু।
খাওয়া নিয়ে খুঁতখুঁতুনিও রবীন্দ্রনাথের কম ছিল না। একবার কবির জন্মদিনে অমিতা দেবী সবরকম মোরব্বা দিয়ে তাতে কেকের গন্ধ মিশিয়ে একরকম মিষ্টান্ন করে পাঠালেন। বিদেশি কেকের গন্ধ দেশী খাবারে কেন? কবি নাকি সেই খাবার মুখে তোলেননি। আবার একবার দুধ, চালবাটা, নতুন ফল-পাকুড় দিয়ে তিনিই রবীন্দ্রনাথকে ‘নবান্ন’ করে দিয়ে এসেছিলেন। সেটা মুখে ঠেকিয়েছিলেন মাত্র। তার পর দেখা হলে অমিতা দেবীকে বলেছিলেন, ওটা কি নবান্ন হয়েছিল? আবার অসুস্থ অবস্থায় যখন কবির মুখে অরুচি, তখন এই অমিতাদেবীর হাতের গন্ধরাজ লেবুর গন্ধ দেওয়া সাদা কলাইয়ের ডাল, ধনেপাতা দিয়ে পাবদা মাছের পাতলা ঝোল, হিং ও জিরেভাজা দিয়ে ঝাল ছাড়া কচি পাঁঠার মাংসের ঝোল অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে খেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
খাদ্য পরিবেশনে রুচির অভাব কবির মোটেও পছন্দের ছিল না। ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’-এ তিনি লিখেছেন, “ইংরেজদের খাবারের টেবিলে যে রকম আকারে মাংস এনে দেওয়া হয়, সেটা আমার কাছে দুঃখজনক। কেটে-কুটে মশলা দিয়ে মাংস তৈরি করে আনলে এরকম ভুলে যাওয়া যায় যে একটা সত্যিকারের জন্তু খেতে বসেছি, কিন্তু মুখ-পা বিশিষ্ট আস্ত প্রাণীকে অবিকৃত আকারে টেবিলে এনে দিলে একটা মৃতদেহ খেতে বসেছি বলে গা কেমন করতে থাকে”
খেতে ভালোবাসতেন বলে কিনা জানা নেই তবে ভোজন, ভ্রমণ সব মিলিয়ে আদ্যন্ত এক আয়োজন ছিল তাঁর পছন্দের। বিদেশেই হোক কি স্বদেশের মাটিতেই। রবিঠাকুরের লেখায় একাধিকবার এসে পড়েছে এই পিকনিক প্রসঙ্গটি।  যদিও সেসময় চড়ুইভাতি বা বনভোজনই ছিল পিকনিকের সদর্থক সমার্থক।
তবে বনভোজনের কথা এসেছে তাঁর জাপানযাত্রীতে বেশ কয়েকবার। এছাড়া তাঁর যোগাযোগ উপন্যাসে আছে পিকনিক প্রসঙ্গ। সবচেয়ে ভালোভাবে এই পিকনিকের পুরো ছবিটি উঠে এসেছে ইউরোপ প্রবাসীর চিঠিপত্রে।
পিকনিক নামের বিদেশী শব্দটি তিনি ব্যাবহার করেছেন ইউরোপের প্রবাস থেকে লেখা চিঠির মধ্যে। বিদেশের প্রবাসে তিনি লক্ষ্য করেছিলেন সেখানকার ঘন ঘন সংঘটিত মিলনোতসবের ক্ষণ। ফুর্তিফারতা, গল্পগুজব,  আমোদপ্রমোদ অন্তপ্রাণ মেম সাহেবদের চূড়ান্ত বিলাসিতা এই পিকনিকেও দেখা যায়।

স্থান কাল পাত্র ভেদে ভেদে সান্ধ্য পার্টি, গেটটুগেদার ছাড়াও মেদুরতায় ভরা থাকে আমাদের সপ্তাহান্তের এই শীত পিকনিক। আমাদেরও ব্যস্ততার ইঁদুর দৌড়ে এই পিকনিক এক রঙ মিলান্তি মনের খোরাক। ঠিক যেমন থাকত কবিগুরুর জীবনেও।

রবিঠাকুর ইউরোপের চিঠিতে লিখলেন

“এখানে মিলনের উপলক্ষ্য কতপ্রকার আছে, তার সংখ্যা নেই। ডিনার, বল, conversazione, চা-সভা, লন পার্টি, এক্সকার্শন, পিকনিক ইত্যাদি।আমি একবার এখানকার একটি বোট-যাত্রা ও পিকনিক পার্টিতে ছিলুম। এখানকার একটি রবিবারিক সভার সভ্যেরা এই বোট-যাত্রার উদ্‌যোগী। এই সভার সভ্য এবং সভ্যরা রবিবার পালনের বিরোধী। তাই তাঁরা রবিবার একত্র হয়ে নির্দোষ আমোদপ্রমোদ করেন। এই রবিবারিক সভার সভ্য আমাদের এক বাঙালি মিত্র ম—মহাশয় আমাদের অনুগ্রহ করে টিকিট দেন।
লণ্ডন থেকে রেলওয়ে করে টেমসের ধারে এক গাঁয়ে গিয়ে পৌঁছলুম। গিয়ে দেখলুম টেমসে একটা প্রকাণ্ড নৌকো বাঁধা, আর প্রায় পঞ্চাশ-ষাট জন রবিবার-বিদ্রোহী মেয়েপুরুষে একত্র হয়েছেন। দিনটা অন্ধকার, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, আর যাঁদের আসবার কথা ছিল, তাঁরা সকলে আসেন নি। আমার নিজের এ পার্টিতে যোগ দিবার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু ম—মহাশয় নাছোড়বান্দা। আমরা অনেক ভারতবর্ষীয় একত্র হয়েছিলুম”

রবীন্দ্রনাথের ফলের প্রতিও একটা অদম্য আকর্ষণ ছিল। দুপুরের খাওয়ার আগে ফল খেতেন। যেমন পাকা পেঁপে, কলা, বাতাবি লেবু আমের সময় আম। তবে আম ছিল অত্যন্ত প্রিয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ  এই দুই আম্রমাস এলে রবীন্দ্রনাথের ভীষণ খুশী হতেন। আম না কেটে চুষে খেতে পছন্দ করতেন। টমি ওয়াডা নামে রবীন্দ্র অনুরাগী এক জাপানী ভদ্র মহিলার আমন্ত্রণে দ্বিতীয়বার কবি জাপানে যাওয়ার কথায় দোনামোনা করেছিলেন।  কারণ সেটি ছিলো আমের সময়! ফলে পাকা আমের লোভ তার জাপান যাওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাড়াল। অবশেষে বড় বড় বরফ বাক্সে করে আমও কবির জাপানযাত্রায় সঙ্গী হয়েছিল।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>