ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-১৫) । মুম রহমান

ইরানী কবিতায় সবচেয়ে প্রতিবাদী নারী হিসাবেই ফোরাহ ফারুখজাদ (১৯৩৫-১৯৬৭) সুপরিচিত। শুধু কবি নয়, তিনি একজন প্রভাবশালী চলচ্চিত্র পরিচালকও। আধুনিক নারীবাদী চলচ্চিত্রকার, কবি ফোরাহ ফারুখজাদ তার চিন্তা এবং জীবনাচরণেও ভীষণ প্রতিবাদী। মাত্র ৩২ বছরে সড়ক দূর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।
পাখিটি স্রেফ একটি পাখি ছিলো পাখিটি বলেছিলো : ‘কী উজ্জ্বল একটা দিন, কী তরতাজা বাতাস! বসন্ত এসে গেছে। আমি অবশ্যই আমার সঙ্গীর খোঁজ করবো।’ পাখিটি উড়ে গেলো তারের প্রান্ত থেকে। পাখিটি উড়ে গেলো মেঘের দিকে- আর দ্রæত অদৃশ্য হয়ে গেলো। ঠিক একটা আকাঙ্খার মতো, ঠিক একটা প্রার্থনার মতো, ঠিক একটা ফিসফিসানির মতো, পাখিটি বিস্তৃত হলো দূরে আর দিগন্তে- বাতাসে। পাখিটি ছোট্ট ছিলো। পাখিটি হাল্কা ছিলো। পাখিটি উজ্জ্বল ছিলো না। পাখিটি একা ছিলো, কিন্তু পাখিটি, ভালো, যথার্থ স্বাধীন ছিলো। আকাশে, পাহাড় আর পথের উপরে আর নিচে, ট্রাফিক আলো আর ‘থামুন’ সাইনবোর্ডের উপরে পাখিটি ক্রমাগত উড়েছিলো। আর তার স্বপ্নের শান্তির চ‚ড়ায়, সে অবশেষে অনুভব করেছিলো সময় আর মহাশূন্যকে। পাখিটি, বেশ, স্রেফ একটি পাখি ছিলো। পাখিটি, বেশ, যথার্থ মুক্ত ছিলো।
আরো পড়ুন: ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-১৪)
হয়তো পাখিটি মরে গেছে… আমার বিষণ্ণ লাগে, আমার নিরাশ লাগে। আমি বাইরে যাই আর আমার ঠান্ডা আঙুলগুলো ডলতে থাকি নিরব রাত্রির মসৃণ খোলসে। আমি দেখি যে আলোর সব সংযোগই অন্ধকার, আমাদের সাথে সংযুক্ত সব পথই রুদ্ধ। আমাকে কেউ সূর্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে না, কেউ আমাকে সংঘবদ্ধ ঘুঘুদের কাছে নিয়ে যাবে না। মনের মধ্যে তবুও উড়াল রাখি, হয়তো পাখিটি মরে গেছে। উপহার আমি কথা বলি রাত্রির গহন থেকে অন্ধকারের গহন থেকে আর রাত্রির গহন থেকে আমি কথা বলি। যদি তুমি আমার ঘরে আসো, বন্ধু আলো এনো আর আমি তাকিয়ে থাকতে পারি তেমন একটা জানালা সুখি কুঞ্জপথের ভিড় থেকে।

জন্ম ২৭ মার্চ, ময়মনসিংহ। এমফিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা লেখালেখি।