ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-২২) । মুম রহমান
আফ্রো-আমেরিকান কবি মায়া এঞ্জেলো [Maya Angelou] (১৯২৮-২০১৪) মার্কিন সাহিত্যে এক জীবন্ত প্রতিবাদ। সাতটি আত্মজীবনী, তিনটি সমালোচনা গ্রন্থের পাশাপাশি তিনি অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। নাটক, সিনেমা, টেলিভিশন গত ৫০ বছরে ঘুরে ফিরে বহুবার তার কথা, তার কবিতার কথা উঠে এসেছে। ডজনখানে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারের পাশাপাশি ৫০এর অধিক সম্মানজনক ডিগ্রী অর্জন করেছেন তিনি। তার ‘আই নো হোয়াই দ্য কেইজড বার্ড সিংগস’ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন। তার লেখায় নারীর বিরুদ্ধে এবং কৃষাঙ্গ তথা যাবতীয় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠে এসেছে।
পুরুষেরা
যখন আমি তরুণী ছিলাম, আমি অভ্যস্ত ছিলাম
পর্দার আড়াল থেকে তাকাতে
যখন পুরুষরা হেঁটে যেতো রাস্তার এদিকে ওদিকে।
মাতাল লোক, বুড়ো ব্যাটা।
রাই সরিষার মতো ধারালো তরুণ।
দেখতাম ওদের। পুরুষগুলো সব সময়ই যাচ্ছে
কোথাও না কোথাও।
ওরা জানতো আমি ওখানে ছিলাম। পনের
বছরের আর ওদের জন্য উপবাসী।
আমার জানালার নিচে, ওরা হয়তো থামতো,
ওদের কাঁধ উঁচু ছিলো যেন
তরুণীর মেয়ের স্তন,
জ্যাকেটের ঝুল নেমে যেতো
ওদের নিচ দিয়ে,
পুরুষেরা।
একদিন ওরা তোমাকে ধারণ করবে
তাদের হাতের তালুতে, আলতো করে, যেন তুমি
ছিলে পৃথিবীর শেষ তাজা ডিম। তারপর
তারা কষে বাঁধবে। সামান্য একটু।
প্রথম চাপটি দারুণ। একটা আকস্মিক আলিঙ্গন।
তোমার প্রতিরোধহীনতায় কোমল। আরেকটু
অধিক। হালকা হাসি ছুঁড়ে দেয়
যা ভয়কে সরিয়ে দেয় আলগোছে। যখন
বাতাস উধাও,
তোমার মন ফটাস, ফেটে যায় ভয়ঙ্করভাবে, সংক্ষেপে,
দেশলাইয় কাঠির মুখটির মতো। ছিন্নভিন্ন।
এটা তোমার রস
যা নেমে আসে ওদের ঊরুতে। দাগহীন জুতা ওদের।
যখন আবার পৃথিবীর বাস্তবতা ফিরে আসে,
আর স্বাদেরা ফিরে আসে জিহ্বায়,
তোমার শরীর রুদ্ধ দরজা যেন। চিরতরে।
আর কোন চাবিই নেই তার।
তখন জানালার পর্দা নেমে আসে
তোমার মনে। সেখানে, সীমার বাইরে
পর্দার দুলুনি, পুরুষরা হেঁটে যায়।
জানে কিছু একটা।
যায় কোন একখানে।
কিন্তু এইবার, আমি নেহাত
দাঁড়াই আর দেখতে থাকি।
হয়তোবা।
আরো পড়ুন: ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-২১)
সময় পার
তোমার ত্বক ভোরের মতো
আমার ত্বক কস্তুরি’র মতো
একজন আঁকে সূচনা
এক নির্দিষ্ট সমাপ্তির
অন্যজন, একটি সমাপ্তি
নিশ্চিত সূচনার।
ধূসর দিন
দিনেরা ঝুলে আছে ভারী
শ্লথ আর ধূসর
যখন তুমি দূরে।
একটা কাঁটার মুকুট
এটা চুলভর্তি শার্ট
আমি পরে আছি।
কেউ জানে না
আমার নিঃসঙ্গ হৃদয়
যখন আমরা আলাদা হয়ে গেছি।
জন্ম ২৭ মার্চ, ময়মনসিংহ। এমফিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা লেখালেখি।